নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ানোর আশঙ্কা

বিডিনিউজ২৪
Published : 13 March 2011, 09:14 AM
Updated : 13 March 2011, 09:14 AM

ঢাকা, মার্চ ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জাপানে দেড়শ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও তার প্রভাবে সৃষ্ট সুনামিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাপানের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচার মাধ্যম এনএইচকে বলেছে, সুনামির আঘাতে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, কেবল মিয়াগি শহরেই নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এর আগে কর্মকর্তারা জানান, ভূমিকম্প ও সুনামিতে শহরটিতে ২ হাজারের মতো মানুষ মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।

ওদিকে, এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০ জন মানুষ অবস্থান করে এবং পরমাণু চুল্লী থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়তায় ২২ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

টোকিওর ২৪০ কিলোমিটার উত্তরে ফুকুশিমা প্রকল্পের ৪০ বছরের পুরনো ডাইচি-১ চুল্লীতে ভূমিকম্পের পর বিস্ফোরণ ঘটে সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানো শুরু করে।

ওই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশের ২০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থানরত সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় নিঃসরণ এবং ভূমিকম্পের পরাঘাতের কারণে পাঁচটি এলাকা থেকে দুই লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

কর্মকর্তারা রোববার বলেছেন, উদ্ধারকর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ করে এক লাখ করা হবে।

শুক্রবার দুপুরে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পরপরই ১০ মিটার উচ্চতার সুনামিতে ভেসে যায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এ দেশের উত্তর-পূর্ব উপকূল।

ভূমিকম্প সবচেয়ে বড় শঙ্কা তৈরি করেছে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণ।

শনিবার জাপানের এনএইচকে টেলিভিশনের স¤প্রচারে দেখানো হয়, ফুকুশিমা প্রকল্পের একটি চুল্লি থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলির আকারে বাষ্প বেরিয়ে আসছে।

তাদের খবরে বলা হয়, বিস্ফোরণে ওই প্রকল্পের চারটি ভবনের মধ্যে একটির বাহ্যিক কাঠামো ধসে পড়ে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান ওই স্থাপনার চার দিকের ২০ কিলোমিটার এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

শুক্রবারের ভূমিকম্পে পৃথিবীর অক্ষরেখা প্রায় ১০ ইঞ্চি সরে গেছে। জাপানের মূল ভূখণ্ড আগের জায়গা থেকে সরেছে প্রায় আট ফুট।

শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর কয়েকটি পরাঘাতে আবারো কেঁপে ওঠে জাপান। এতে মানুষের মধ্যে আবার আতঙ্ক দেখা দেয়।

শুক্রবার সুনামির সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে উপকূলীয় নগরী সেন্দাইয়ে, যেখানে ১০ লাখ লোকের বসবাস। জাপানের সরকারি টেলিভিশন এনএইচকের স¤প্রচারে দেখা যায়, সাগর থেকে উঠে আসা বিশাল ঢেউ ভাসিয়ে নেয় গাড়ি, জাহাজ, ঘর-বাড়ি।

কিয়োডো নিউজ জানায়, ভূমিকম্পের পর আগুন ধরে যাওয়ায় সেন্দাই বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এনএইচকে টেলিভিশনের এক সাংবাদিক জানান, সেন্দাই শহরের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেকে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়ে উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সংবাদ সংস্থা জিজি নিউজ জানিয়েছে, উত্তর উপকূলের প্রায় পৌনে ১ লাখ লোকের শহর কেসেনুমার এক-তৃতীয়াংশ এলাকা রয়েছে পানির নিচে। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে পাড়ি জমিয়েছেন।

কিয়োডো বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, অন্তত ১০০ আরোহীসহ একটি জাহাজ সুনামিতে ভেসে গেছে। দুটি একটি ট্রেনের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

জাপানের এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তার দেশ সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। জাপানের প্রতিবেশী দেশ চীন বলেছে, তারাও তৈরি আছে। জাপান বললেই সাড়া দেবে তারা।

ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়া না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিলা স্মিথ বলেন, "জাপানের এ দুর্যোগ মোকাবেলায় নজিরবিহীন মানবিক ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে হবে।"

প্রধানমন্ত্রী কান শুক্রবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "ভূমিকম্পে জাপানের বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে।"

যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটা ৪৬ মিনিটে শুরু হয়ে পরপর কয়েকবারের ভূমিকম্পে কেঁেপ ওঠে রাজধানী টোকিও। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিলো টোকিওর ২৫০ মাইল দূরে ভূ-পৃষ্ঠের ২০ মাইল গভীরে।

ভূমিকম্পের পরপরই প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী ফিলিপিনস, ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়াসহ মোট ৫৩টি দেশে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। বেশ কিছু এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় অধিবাসীদের।

জাপানে এর আগে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিলো ১৯২৩ সালে, ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিলো ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।

২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামিতে অন্তত ১৪টি দেশের ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএইচ/জেকে/এমআই/১৪২৯ ঘ.