ক্ষমতা দখল রাষ্ট্রদ্রোহ বিবেচিত হবে: সুরঞ্জিত

বিডিনিউজ২৪
Published : 13 March 2011, 11:41 AM
Updated : 13 March 2011, 11:41 AM

ঢাকা, মার্চ ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে বিশ্বাসঘাতকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করে এ ক্ষেত্রে শাস্তির বিষয়টিও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

[খন্দকার] মোশতাক, [আবু সাদাত মো.] সায়েম, জিয়া [জিয়াউর রহমান] ও [এইচ এম] এরশাদের নাম উল্লেখ করে সুরঞ্জিত রোববার জানান, একেক সময় একেক মহাপুরুষ আসেন, আর সংবিধান বাতিল বা স্থগিত করেন। এ বিষয়েও সংবিধানে সংশোধনী আনা হচ্ছে।

সংবিধান সংশোধনে বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, অসাংবিধানিকভাবে সংবিধান বাতিল বা ক্ষমতা দখল, সংবিধান স্থগিত, শক্তি প্রদর্শন করে অবৈধ পন্থায় সংবিধান রদ বা বাতিল করা হলে, এ কাজে যারা মার্জনা বা অনুসমর্থন করবে তারা বিশ্বাসঘাতক ও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে গণ্য হবে।

"এ কাজে তথাকথিত নির্বাচন, সংসদ, কোর্টও যদি সহায়তা দেয় তাও সমান অপরাধী বলে বিবেচিত হবে। এ বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা করছি আমরা।"

সুরঞ্জিত জানান, এ পর্যন্ত সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় পর্যন্ত বিশেষ কমিটি পর্যালোচনা সম্পন্ন হয়েছে।

"আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো বিল আকারে সংসদে আসবে। এর জন্য এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে।"

বিশেষ কমিটির বৈঠক শেষে সংসদের গণমাধ্যমকেন্দ্রে ব্রিফিংয়ে কথা বলছিলেন বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান।

বিশেষ অধিবেশনে শুধু সংবিধান সংশোধনের কাজটি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিশেষ কমিটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে টানা বৈঠক চলবে জানান সুরঞ্জিত।

কমিটির চেয়ারম্যান সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কমিটির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রহমত আলী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, হাছান মাহমুদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও শিরিন শারমীন চৌধুরী প্রমুখ।

মূলনীতিতে যুক্ত হবে

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জানান, কমিটি জাতীয় মূলনীতির মধ্যে কতগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।

"সংবিধানের আধুনিকায়নে জলবায়ু ইস্যু, নারী প্রতিনিধিত্ব (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে) ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকার- এ তিন বিষয় মূলনীতির শর্তযুক্ত করে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা একমত হয়েছি।"

তিনি জানান, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মতামত নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সাংসদদের বক্তব্য নিতে সংশ্লিষ্টদের শিগগির বিশেষ কমিটির বৈঠকে ডাকা হবে।

স্বাধীনতা ঘোষণা ও ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ হচ্ছে বলে জানান বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান।

"স্বাধীনতার ২৬ মার্চ ঘোষণাটা যেভাবে আছে তা-ই থাকবে। ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ মনে করি। তা-ও রাখার চেষ্টা করবে কমিটি।"

'জাতির পিতা' স্বীকৃতি

গত ১৫ ফেব্র"য়ারি বিশেষ কমিটির সর্বশেষ বৈঠক শেষে সুরঞ্জিত জানিয়েছিলেন, জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রদর্শন সংবিধানের অন্তর্ভুক্তিতে কমিটি একমত হয়েছে।

জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি এবং সরকারি-আধাসরকারি ও বাংলাদেশ দূতাসাসে তা প্রদর্শনের বিষয়টি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করতে একমত হয়েছে সংবিধান সংশোধনে বিশেষ কমিটি।

ওইদন তিনি জানান, সংবিধানে বিছমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রেখে বিশেষ কমিটি কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের জাতীয়তা বাঙালি ও নাগরিকত্ব বাংলাদেশি রাখার বিষয়েও একমত হয়েছে কমিটি।

সুরঞ্জিত জানান, সংবিধান সংশোধন বিষয়ে বিশেষ কমিটির কাজের মূলভিত্তি হচ্ছে- জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম, রাজনৈতিক দর্শন ও বাংলাদেশের ইতিহাস। প্রত্যেক জাতিরই সংবিধানেই এই তিনটি ভিত্তির প্রতিফলন ঘটে।

তিনি জানান, অনুচ্ছেদ ২ (ক) তে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বহাল থাকবে। ইসলামকে রেখে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য সকল ধর্মের অধিকার সমুন্নত রেখেই আলোচনা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ চার এর (ক) বাতিল করা হবে। এ অনুচ্ছেদের উপধারা ৫-এ জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি'র বিষয়টি উল্লেখ করে তা সংযোজন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সকল সরকারি-আধা সরকারি ও বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সংরক্ষণ-প্রদর্শন ৬ উপধারায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

নাগরিকত্বের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, "জাতীয়তা হবে বাঙালি । তবে দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশি বলে পরিচয় হবে। জাতীয়তাবাদ ও নাগরিকত্বের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।"

গত বছরের ২১ জুলাই সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে এই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। বিশেষ কমিটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমনভাবে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/পিডি/১৭২৮ ঘ.