১০০ দিন পর মুক্ত হলেন জাহান মণির নাবিকরা

বিডিনিউজ২৪
Published : 14 March 2011, 09:58 AM
Updated : 14 March 2011, 09:58 AM

চট্টগ্রাম, মার্চ ১৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মণির নাবিকদের জিম্মিদশা কাটলো। টানা ১০০ দিন সোমালি জলদস্যুদের আস্তানায় বন্দি ছিলেন তারা।

সোমবার বাংলাদেশ সময় ১০টা ২৫ মিনিটে জাহান মণি নাবিকদের নিয়ে সোমালিয়ার উপকূলীয় গ্রাম গারাকাড থেকে ওমানের সালালা বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে বলে জাহাজের মালিকপক্ষ জানিয়েছে।

মুক্তিপণ হিসেবে জলদস্যুদের কত টাকা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি মালিকরা।

মুক্তি পাওয়ার পর নাবিকরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলেছেন, জানিয়েছেন তাদের মুক্ত হওয়ার কথা।

এই জাহাজটি গত ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ছিনতাই হয়। এতে বাংলাদেশি ২৫ জন নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী রয়েছেন। ১১ ডিসেম্বর সোমালিয়ার উপকূলীয় গ্রাম গারাকাডের কাছাকাছি জাহাজটি নোঙর করে জলদস্যুরা।

জাহান মণি'র মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২৫ নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী ২২ মার্চ ওমান থেকে বিমানে সরাসরি চট্টগ্রামে ফিরবেন।

তিনি জানান, জাহাজে থাকা বাংলাদেশি ২৬ জনই সুস্থ রয়েছেন। জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পর নাবিকরা জাহাজটি চালিয়ে ওমানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

জাহাজটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি ও খাবার পানি রয়েছে বলে মেহেরুল জানান।

সকাল ১১টার দিকে ব্রেভ রয়েলের পক্ষে নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড়ে তাদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজের মুক্ত হওয়ার খবর জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মেহেরুল জানান, জাহাজটি চার দিনের মধ্যে ওমানে পৌঁছাবে। ওমানে নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের বিমানযোগে চট্টগ্রামে আনা হবে।

জাহাজটি ওমান থেকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৬ নাবিককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে ১৩ জন মঙ্গলবার এবং বাকিরা বুধবার ওমানে গিয়ে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেবেন।

মুক্তিপণ নিয়ে বক্তব্য নেই

সংবাদ সম্মেলনে মেহেরুল এবং জাহান মণির মালিক মোহাম্মদ শাজাহান মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি।

ব্রেভ রয়েল শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাজাহান বলেন, "কূটনৈতিক সফলতার মধ্য দিয়ে জাহাজ ও এর নাবিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্ত করা গেছে।"

মুক্তিপণ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "মালিকপক্ষ থেকে কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়নি এবং আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না।"

গত কয়েক বছর ধরে ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের উৎপাত চলছে। তবে বাংলাদেশি কোনো জাহাজ আক্রান্ত হওয়া এটাই প্রথম।

ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমালি জলদস্যুরা ২০১০ সালে বিভিন্ন দেশের মোট ৫৩টি জাহাজ ছিনতাই এবং ১ হাজার ১৮১ জন নাবিককে জিম্মি করে। মুক্তিপণের দাবিতে এই সময়ে অন্তত আটজনকে হত্যা করে তারা।

জাহান মণির মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন মালিক শাহজাহান।

তবে মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল বলেন, "জাহাজ মুক্তির জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো।"

১০০ দিন আটকে থাকায় জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এছাড়া ওমানে ভিসাসহ অন্যান্য কাজে ৮ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হয় বলে মালিক শাহজাহান জানান।

মুক্তির প্রক্রিয়া

সংবাদ সম্মেলনে মেহেরুল জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে দস্যুদের সঙ্গে আলোচনার দিকটি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, "গত বছরের ১২ ডিসেম্বর জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করে। জাহাজের ক্যাপ্টেন ছাড়াও নাবিকদের সঙ্গেও আমাদের অনেকবার কথা হয়।"

এরপর থেকে দস্যুদের সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোনে প্রায় নিয়মিতই জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্তি নিয়ে নানাপ্রকার আলোচনা করে মালিক পক্ষ।

সর্বশেষ এ বছরের ২২ ফেব্র"য়ারি দরকষাকষি (নেগোশিয়েশন) চূড়ান্ত হয় জানিয়ে মেহেরুল বলেন, "২৮ ফেব্র"য়ারি জলদস্যুদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি হয়।"

ছিনতাই হওয়ার পর থেকে জাহাজ মালিকপক্ষ জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে।

এছাড়া নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

২০০৯ সালে এই জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া প্রতিটি জাহাজ ছাড়িয়ে আনতে গড়ে ৯০ দিন সময় লাগে। কিন্তু ২০১০ সালে এই সময় বেড়ে ১৪৩ দিনে দাঁড়ায়। সে তুলনায় জাহান মণি আগেই মুক্তি পেয়েছে।

মেহেরুল জানান, 'রাগা আফ্রিকানা' নামে একটি জাহাজ ৩২৮ দিন আটক থাকার পর দুদিন আগে, 'ইয়ান্ট' ১৩৩ দিন আটকে থাকার পর রোববার মুক্তি পেয়েছে।

সে তুলনায় বাংলাদেশি জাহাজ সবার সহযোগিতায় অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছে, বলেন মেহেরুল।

এখনো ২৪ জাহাজ জিম্মি

সোমলীয় জলদস্যুদের কাছে এখনো ২৪টি বিদেশি জাহাজ এবং এর নাবিকরা জিম্মি রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মেহেরুল।

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (ইউকে এমটিও) উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমরা জাহান মণিকে অন্যান্য জাহাজের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি মুক্ত করে আনতে পেরেছি।

ইউকে এমটিও সোমালি জলদস্যু কর্তৃক ছিনতাই হওয়া জাহাজগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/এমআই/১৫৪০ ঘ.