‘গণমাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে মালিকদের বিত্ত অর্জনে’

বিডিনিউজ২৪
Published : 6 June 2012, 07:02 AM
Updated : 6 June 2012, 07:02 AM

রিয়াজুল বাশার
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

ঢাকা, জুন ৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- অনেক ক্ষেত্রেই মালিকদের বিত্ত অর্জনের 'নগ্ন' প্রতিযোগিতায় গণমাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক হওয়া প্রধান তথ্য কর্মকতা হারুন-উর-রসিদ।

গণমাধ্যম অপব্যবহারের এ ধরণের প্রবণতা ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন হারুন-উর-রসিদ। ১৯৭২ সালে তথ্য অধিদপ্তরে যোগ দিয়ে দীর্ঘ প্রায় চার দশক কাজ করার পর গত মঙ্গলবার অবসরে যান। এ সময়ে নানাভাবে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশিষ্ট থাকার অভিজ্ঞতা নিয়েই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

হারুন-উর-রসিদ বলেন, "এরশাদ সরকারের পতনের পর নতুন মিডিয়ার জোয়ার এলো। সাংবাদিকতায় যুক্ত হলো নতুন মাত্রা। সামরিক শাসনের সময় প্রতি মূহুর্তে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার যে রেওয়াজ তৈরি হয়েছিল তা উঠে গিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি হলো। নতুন নতুন পত্র-পত্রিকার পাশাপাশি আসতে শুরু করলো টেলিভিশন, রেডিও।"

১৯৯০ এর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অগ্রগতি অন্যান্য যে কোনো দেশের তুলনায় 'অনেক' ভালো বলে মনে করেন সাবেক এ তথ্য কর্মকর্তা।

কিন্তু গত ১০ থেকে ১৫ বছরে সাংবাদিকতার মালিকানার ক্ষেত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পাকিস্তান আমলে বা তার পরবর্তী সময়ে এদেশে মিডিয়ার মালিকরা বেশিরভাগই ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা সাংবাদিকতাকে সৎ পেশা হিসেবে মনে করতেন। এখন বেশিরভাগ মিডিয়াই বিত্তশালী ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। অনেক সাংবাদিক তাদের পেশাকে ¯্রফে কর্মক্ষেত্র হিসেবে দেখছেন।"

তিনি বলেন, মালিকদের 'স্বার্থে' এবং 'নির্দেশনায়' সাংবাদিকরা 'অনেক সময়' কাজ করছে। আর অনেক ক্ষেত্রে মালিকদের স্বার্থ উদ্ধার না হলে সরকারকে 'বিভিন্নভাবে' আক্রমণ করা হচ্ছে।

"সরকারের ভুলভ্রান্তি আছে। সেগুলো শুধরে দেওয়ার জন্য গঠনমূলক সমালোচনা দরকার। কিন্তু আমরা দেখছি বিত্ত অর্জনের নগ্ন প্রতিযোগিতায় অনেক ক্ষেত্রেই মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে।"

"অনেক সময় মালিকের স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকারের বিরোধিতা করা হচ্ছে। পছন্দ না হলে তারা (মালিকরা) সরকারকে ফেলেও দিতে চাচ্ছে। কিন্তু সরকার এদের ধরতে পারছে না। কিছু বলতে গেলেই মিডিয়ার ওপর আক্রমণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে", যোগ করেন সাবেক এ কর্মকর্তা।

ভবিষ্যতে গণমাধ্যমে এ ধরণের প্রবণতা আরো বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি।

অনলাইনে সামাজিক মাধ্যম নিয়ে হারুন-উর-রসিদ বলেন, "ইন্টারনেট বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে এবং প্রভাব বিস্তার করছে। এসবের মাধ্যমে নানা ধরণের প্রচার-প্রচারণাও চলছে।"

"সামাজিক মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কিংবা তার ওপর নজরদারি রাখা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার মাথা ঘামাতে শুরু করেছে। আমাদের এখানেও এ বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকদের চিন্তা করা এবং চোখ-কান খোলা রাখা উচিৎ।"

এদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে বেশি করে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

হারুন বলেন, "শিক্ষা বা প্রতিবন্ধী ও আদিবাসীদের উন্নয়নের বিষয়ে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো আগ্রহ দেখাবে না। কারণ এ ধরণের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপন কম। তাই এ ধরণের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।"

শুধু শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান স¤প্রচারের জন্য সরকার একটি টিভি চ্যানেল চালুর পরিকল্পনা করছে বলেও জানান তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরবি/এসইউ/১২০৪ ঘ.