‘বিদ্যুৎ-পর্যটনে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি প্রিন্স’

বিডিনিউজ২৪
Published : 10 June 2012, 10:32 AM
Updated : 10 June 2012, 10:32 AM


ঢাকা, জুন ১০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন সৌদি আরবের ধনকুবের প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালাল।

রোববার পাঁচ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে 'বাংলাদেশ মৈত্রী পদক' দিয়ে সম্মান জানানো হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্র দীপু মনি পরে সাংবাদিকদের বলেন, "বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে সৌদি প্রিন্সের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে, বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি বিদ্যুৎ ও পর্যটন নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।"

সৌদি আরবের কিংডম হোল্ডিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আল-ওয়ালিদ সকাল ১০টার পর ঢাকায় পৌঁছান। এরপর সোনারগাঁও হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বিনিয়োগের সুযোগ, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবের চ্যালেঞ্জ, পর্যটক ও বিদ্যুৎ খাত নিয়ে এই সৌদি ব্যবসায়ীকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখানো হয় এরপর।

এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, "সৌদি প্রিন্সের সঙ্গে আজ কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্প নিয়ে কথা হয়নি। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী মাসে বাংলাদেশ থেকে এটি ছোট দল সৌদি আরবে যাবে।"

ফোর্বস ম্যাগাজিনের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের মালিক আল-ওয়ালিদ বিন তালাল রয়েছেন ২৯তম অবস্থানে। এর আগে ২০০৫ সালেও একবার বাংলাদেশে এসে সোনারগাঁও হোটেল কিনে নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি।

এবারো তেমন আগ্রহ দেখিয়েছেন কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো হোটেল কেনার আগ্রহ সৌদি প্রিন্স দেখাননি।

"তবে আল-ওয়ালিদ বিন তালাল অত্যন্ত বড় বিনিয়োগকারী হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিত। আমরা আশা করি, তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন", যোগ করেন দীপু মনি।

বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি পাঠনোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, "আমরা সৌদি সরকারকে এ বিষয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছি। বলেছি, তাদের যদি আরো কর্মী প্রয়োজন হয়, তারা বাংলাদেশ থেকে নিতে পারে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশংসায় তিনি দুটি শব্দ ব্যবহার করেছেন- ইনটিগ্রিটি ও অনেস্টি।"

আল-ওয়ালিদের প্রতিষ্ঠানেও অনেক বাংলাদেশি কাজ করে বলে দীপু মনি জানান।

অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারাফ হোসাইন ভূইঞা, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস ও বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ সৌদি প্রিন্সের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি প্রিন্সকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডাল দেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অবকাঠামো এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) বা যৌথ অংশীদারিত্বেও এ বিনিয়োগ হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আল-ওয়ালিদ বিন তালাল বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন বলেও প্রেস সচিব জানান।

বাংলাদেশের শ্রমিকরা পরিশ্রমী ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে আল-ওয়ালিদের নতুন প্রকল্পে আরো চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলী, তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, হিসাবরক্ষকসহ দক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিক নেওয়ারও আহবান জানান।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, "সৌদি প্রিন্স বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।"

সোনারগাঁও হোটেলে মধ্যাহ্নভোজের পর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন প্রিন্স আল-ওয়ালিদ।

সংক্ষিপ্ত এই সফর শেষে বিকালেই তিনি ফিরতি প্লেনে দেশে ফিরে যান। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/এসইউএম/পিসি/জেকে/১৬২০ ঘ.