কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর শীতের রাতেও বিছানায় শুয়ে ঘুমাতে পারেন না দাউদ নবী। বিছানায় পিঠ ঠেকলেই বাতজ্বরের কারণে কঁকিয়ে উঠতে হয় তাকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দাউদ সপ্তম শ্রেণি থেকে বাতজ্বরকে সঙ্গী করে এতোদূর এগিয়েছেন। ছোটবেলায় দারিদ্রের কাছে হার না মানলেও পড়াশোনার শেষ প্রান্তে এসে বাতজ্বরের কাছে হার মেনে থমকে যেতে বসেছে দাউদের জীবন।
দুঃখ করে দাউদ বলেন, শেষ কবে বিছানায় ঘুমিয়েছেন সে কথা জানা নেই।
বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে আবার নিজের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরতে চান তিনি।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে দাউদের মা মরিয়ম বেগম বলেন, "দ্রুত চিকিৎসা না হলে দাউদের মেরুদণ্ড যে কোনো মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে। যে কোনো সময়ই ঘাড় থেকে মাথা ছিঁড়ে যেতে পারে তার।"
দেশে চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়ে ছয় মাস আগে ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল নেওয়া হয় দাউদকে।
সেখানকার চিকিৎসকরা দ্রুত সার্জারির পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানালেন দাউদের মা।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের দাউদ পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। চার বছর বয়সে বাবাকে হারান দাউদ। আর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় আক্রান্ত হন বাতজ্বরে।
এরপরও মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় তার অসুখ আরো বেড়ে যায়। শুয়ে শুয়ে পরীক্ষা দিয়ে অল্পের জন্য জিপিএ-৫ পাননি তিনি।
চিকিৎসা চলার মধ্যেও ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন দাউদ। তারপর বছর বছর বাড়তে থাকে তার অসুস্থতা। স্নাতক তৃতীয় বর্ষের সময় থেকে কুঁজো হয়ে যেতে থাকেন তিনি।
দাউদের এক বন্ধু বলেন, এমন অসুস্থতা নিয়েও স্নাতক পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে এখন মাস্টার্সে পড়ছেন দাউদ।
ছেলের চিকিৎসা নিয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, দাউদের চিকিৎসায় হাসপাতাল খরচ পড়বে ১২ লাখ টাকার মতো। আর সব মিলিয়ে তার চিকিৎসা ব্যয় কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি দাউদকে পুনরায় চেন্নাইয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে।
চিকিৎসার খরচ জোগাতে দেশের বিত্তবানদের অর্থসহায়তা পাঠাতে অনুরোধ জানান তিনি।
দাউদের জন্য সাহায্য পাঠানো যাবে 'মো. দাউদ নবী, সঞ্চয়ী হিসাব নং ১৩৩১৫১০০৭৯৪৭৫, ডিবিবিএল, মুরাদপুর শাখা, চট্টগ্রাম' এবং 'মো. দাউদ নবী, সঞ্চয়ী হিসাব নং ০২৬১২১০০১৬৭৮০৮, এক্সিম ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখা, চট্টগ্রাম' হিসাবে বলে জানিয়েছেন দাউদের মা মরিয়ম বেগম।
ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে চিকিৎসা সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও আহ্বান জানান মরিয়ম বেগম।