নিছক পারিবারিক!

সংকলক
Published : 4 Jan 2011, 01:23 PM
Updated : 4 Jan 2011, 01:23 PM


বাম থেকে: স্ত্রী, বাবা মুহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগর, মুহাম্মদ ইউনূস ও তার মেয়ে। সৌজন্যে: ইউনূস সেন্টার

ঢাকা, জানুয়ারি ০৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গ্রামীণ ব্যাংককে চট্টগ্রামের একটি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়ে একটি চুক্তি হয় ২০ বছর আগে। এর মাধ্যমে গরীবের ব্যাংকটি এমন এক দায়িত্ব নেয় যার সঙ্গে এর মূল কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পর্কই নেই।

গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা দায়িত্বের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এর প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। চুক্তিতে গ্রামীণ ব্যাংককে মালিকানা ছাড়া প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানটি চালানোর বাকি সব ক্ষমতাই দেওয়া হয়।

চুক্তিতে প্যাকেজেস কর্পোরেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বাক্ষর করেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাবা দুলা মিয়া সওদাগর; যা ছিলো স্পষ্টতই পরস্পর সংশ্লিষ্ট স্বার্থের সংঘাত।

চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দেন ইউনূসের তিন ভাই- মুহাম্মদ ইব্রাহীম, মুহাম্মদ আজম ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

১৯৬১ সালে পাকিস্তান প্যাকেজেস কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির মালিক ছিলেন দুলা মিয়া আর তার ছেলেরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর হাতে আসা নথি থেকে জানা গেছে, ওই পরিবার এখনো প্রতিষ্ঠানটির মালিক। শেয়ার হোল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ডে মুহাম্মদ ইউনূস এখনো আছেন।

গ্রামীণ ব্যাংক ও প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মধ্যে ১৫ বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা চুক্তিটি হয় ১৯৯০ সালের ১৭ জুন।

১৯৯৭ সালে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ সামগ্রীকে।

মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রশ্নমালার উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরজাহান বেগম জানান, "ওই হস্তান্তর" প্যাকেজেস কর্পোরেশনের "মালিকদের সম্মতিতে হয়েছিলো"।


গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব এড়িয়ে গেছেন।

১৯৯০ সালের চুক্তি অনুযায়ী প্যাকেজেস কর্পোরেশনে ইউনূসের মুনাফার-জন্য-নয় এমন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কর্মীদের 'প্রেষণে' নিয়োগেরও অনুমতি ছিলো যা তাদের পারিবারিক ব্যবসার জন্য লাভজনক।

গ্রামীণ ব্যাংক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ছয়জন ব্যবস্থাপক বা নির্বাহী 'প্রেষণে' গেছেন।

প্যাকেজেস কর্পোরেশনে গ্রামীণ ব্যাংকের বিনিয়োগের সুযোগও রাখা হয় ১৯৯০ সালের চুক্তিতে। চুক্তি অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের বিনিয়োগ বিবেচ্য হবে ওই ব্যবসায় ব্যাংকটির দেওয়া ঋণ হিসেবে।

সোমবার গ্রামীণ ব্যাংক বলেছে, প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে গ্রামীণ ব্যাংক যে ঋণ দিয়েছে তা দেওয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংকের এসভিসিএফ (সোশ্যাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড) থেকে।

১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এসভিসিএফ থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ দুই কোটি ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৮৬ টাকা।

প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে গত ১৭ বছর ধরে ঋণ দিয়েছে গ্রামীণ ফান্ড। ৯৩ সালের পর কতো টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে তা জানায়নি গ্রামীণ ব্যাংক।

প্যাকেজেস কর্পোরেশনের "উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড গতিশীল" করতে গ্রামীণ ব্যাংক নতুন কর্মী নিয়োগেরও অধিকার পায় চুক্তিতে। তবে চুক্তি শেষে ওই কর্মীদের চাকরিতে বহাল রাখার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিলো না ইউনূসের পারিবারিক ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের।

চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, চুক্তির ফলে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকানায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকানা দুলা মিয়া সওদাগর এবং তার ছেলেদের যাদের মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসও আছেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের বাবা দুলা মিয়ার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ আইয়ূব প্যাকেজেস কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন।

১৯৯০ সালের চুক্তিতে এইচআই লতিফী নামে এক ব্যক্তিকে সালিশ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। লতিফী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তখনকার সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এর চার বছর পর লতিফী গ্রামীণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। গ্রামীণ ট্রাস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

গত ১৬ বছর ধরে গ্রামীণ ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে আছেন লতিফী।

চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায় লাভ-লোকসান গ্রামীণ ব্যাংক ও প্যাকেজেস কর্পোরেশনের সমানভাবে (৫০:৫০) ভাগ করে নেওয়ার কথা।

তবে লোকসানের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষই নগদ অর্থ দেবে না। লোকসান হলে তা পরবর্তী বছরের লাভের হিসাব থেকে মিলিয়ে নেওয়ার কথা।

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পাওয়া আয় অনুদান
১৯৯০ সালের চুক্তি অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় মুদ্রণ কাজের বিনিময়ে প্যাকেজেস কর্পোরেশন যে লাভ করবে তা গ্রামীণ ট্রাস্টের তহবিলে যাওয়ার কথা।

তবে গ্রামীণ ব্যাংক সোমবার জানিয়েছে, গত ২০ বছরে গ্রামীণ ট্রাস্টে কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংক বলেছে, "যেহেতু প্যাকেজেস কর্পোরেশন লাভে যেতে পারেনি তাই এ পর্যন্ত মুনাফা বণ্টনের প্রশ্ন ওঠেনি। এবং গ্রামীণ ট্রাস্টের কোনো অনুদান পাওয়ারও সুযোগ হয়নি।"

২০০৯ সালে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের পুঞ্জিভূত মুনাফা ছিলো ২৪ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে এর পরিমাণ ছিলো ৩৭ লাখ টাকা।

গ্রামীণ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্যাকেজেস কর্পোরেশন ১৯৯৮ সাল থেকেই মুনাফা করছে। ২০০০ ও ২০০২ সালে এর লোকসান হয়।

গ্রামীণ ব্যাংক দাবি করেছে ২০০৯ সালে প্যাকেজেসের পুঞ্জিভূত লোকসান ছিলো এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।