চুরি করে প্রায় সবাই

সংকলক
Published : 6 June 2012, 07:01 AM
Updated : 6 June 2012, 07:01 AM

চুরি করে প্রায় সবাই। বিভিন্নভাবে করে, বিভিন্ন কারণে করে। প্রয়োজনে করে, অপ্রয়োজনেও করে। অভাবে করে, স্বভাবেও করে। তবে চুরি করে কেউ ধরা খায়, কেউ খায় না। যে খায় না সে নির্বিকার ভদ্রবেশে ঘুরে বেড়ায়। যে ধরা খায় সে-ও পারতপক্ষে একগাল হেসে ব্যাপারটা এড়াতে চায়। যে এড়াতে পারে সে যখন-তখন ভদ্র বেশে জনারণ্যে মিশে যায়। তখন তাক চোর বললে তার আঁতে ঘা লাগে। তাই চোরকে সরাসরি চোর বলতে নেই।

আর বিবেচ্য এটিও যে, চুরি মানে তো শুধু ধনচুরি নয়। চুরি মানে হতে পারে মনচুরি, মানচুরি, জানচুরি, জ্ঞানচুরি, বিদ্যাচুরি, জাতচুরি, পাতচুরি, ডিগ্রিচুরি, বইচুরি, মইচুরি, ভোটচুরি, জোটচুরি, তথ্য চুরি, পথ্য চুরি, কৌশল চুরি, পদ্ধতি চুরি, – আরো কতো-চুরি ভুরি ভুরি। সনাতন কাল থেকে চুরি কাজটা মূলত নিশিরাইতেই চলে। তাই চোরের আরেক নাম নিশিকুটুম্ব । এ-কারণে চুরিরও কাব্যগন্ধী পরিভাষা 'নিশিকুটুম্বিতা'।

নিশি মানে শুধু রাত নয়; নিশি মানে নিকষ কালো অন্ধকার; অর্থাৎ আলোর অভাব। নিশিরাইতে কুটুম্ব সেজে অন্যের ঘরে ঢুকতে গেলে আলো নিভিয়ে ঢোকার কৌশল আয়ত্ত করতে হয় নিশিকুটুম্বকে। আর যারা রাতে অন্য গৃহস্থের ধনচুরি না করে দিবালোকে বা অন্য প্রহরে বিদ্যাচুরি, তথ্য চুরি, ভোটচুরি বা অনুরূপ অন্য কোনো ভদ্র চুরিতে হাত পাকায়, চুরির মুহূর্তে তারাও আপন মনের নৈতিকতার আলোটা নিভিয়ে রেখে অনৈতিকতার অন্ধকারে পা বাড়ায়। মনের সেই অজ্ঞান অন্ধকারে তারা ঠিকই সবার অলক্ষ্যে তাদের লক্ষ্যবস্তু কুড়ায়। সমাজ, রীতিনীতি, আইনআদালত, লোকভয়, লোকলজ্জা ইত্যাদি তাদের জন্য বিবেচ্য ঠেকে না। বিবেচ্য ঠেকে কেবল নিজের স্বার্থ, নিজের অর্থবিত্ত। 'স্বার্থ' কথাটির ইশারাও কিন্তু তাই। স্ব + অর্থ, অর্থাৎ আপন অর্থ। অর্থ এখানে শুধু টাকাকড়ি নয়, মানুষের মূর্ত বা বিমূর্ত সকল সম্পদ বা অনুরূপ বস্তু বা অবস্তু।