দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কতো কিছুই হচ্ছে। এবার আরেক নতুন ঘটনা। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বিদেশি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিলো তাদেরকে সংবর্ধনা জাননো হবে। ভালো।
সরকারের তরফ থেকে নাকি এরজন্য ৫০টি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় এমন একটি সংগঠনের নাম পাওয়া গেছে যারা একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছিলো। তাহলে এই সংগঠনের নাম এখানে আসলো কীভাবে?
এতোদিন শুনতাম দেশে রাজাকাররা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হয়ে যাচ্ছে। নকল মুক্তিযোদ্ধার অভাব এদেশে নাই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি ব্যবসা দু’ই জমজমাট। ঘাতক যুদ্ধাপরাধীরাও এখন স্বাধীনতার স্বাদ নিতে ব্যস্ত। আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী দলগুলোর দহরম-মহরম বহু পুরানো। খোদ মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের ‘নয়নমনি’। সরকারের উপদেষ্টারা জণগণের টাকায় পেট ভারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দেখলেই বোঝা যায়, তারা ‘নিজ-রাষ্ট্র’ উপদেষ্টা নয়, ‘পর-রাষ্ট্র’ উপদেষ্টা। আরেকজান তো ‘খাম্বা ভাইয়া’কে পেছনে ফেলে দিয়ে ঘরে ঘরে ‘সাদাবাতি’ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন।
এসব ‘নয়নমনি উপদেষ্টাদের’ বুঝতে হলে অবশ্য রাষ্ট্রকে আরেকটা উপদেষ্টা রাখতে হবে। তার দরকার কী? তারচাইতে বরং বঙ্গবন্ধুর ‘শোষিতের গণতন্ত্র চাই’ বক্তৃতাটা পড়লেই বাংলার অবোধ পাবলিকের কিছু পয়সা বেঁচে যায়।
এই অবস্থায় এটা হয়তো বড় কোনো সংবাদও না। কারণ বলা হচ্ছে ডা. দীপু মণির তত্ত্বাবধানে নাকি এই তালিকা চুড়ান্ত হয়েছে। তাহলে তো এমনটা হবার কথা নয়। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, তাহলে কি ওখানে উপর আয়না-মহলেও স্বাধীনতা-বিরোধী প্রত্যক্ষ শক্তি ঘাপটি মেরে আছে? যারা এই কাজগুলো করছে? কারণ আমরা তো দেখেছি, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এক সময় আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী ব্যক্তি, যিনি সরাসরি জামাত-শিবিরের সাথে ছাত্র জীবনে সম্পৃক্ত ছিলেন।
কালের কন্ঠ প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, সরকার স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যাদেরকে সংবর্ধনা দিতে তালিকা প্রস্তুত করেছে তারমধ্যে একটি সংগঠন হচ্ছে- জেনেভা ভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট’ বা আইসিজে।
এই সংস্থাটির ১৯৭২ সালের জুনে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়, তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান ছিল স্পষ্ট। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কটা করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে অবৈধ দাবি করে এ দেশের লাখো শহীদের আত্মদান নিয়েও তির্যক মন্তব্য করা হয়। তাদের অবস্থান ছিলো একেবারেই ঘাতক জামাতের মতো। রিপোর্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে ‘গৃহযুদ্ধ’ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। রিপোর্টে দাবি করা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মহান স্বাধীনতার সেই ঐতিহাসিক ঘোষণাটি ছিল অবৈধ। এই রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশ একটি স্বীকৃতিবিহীন অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে যায়।
এই যার দৃষ্টিভাঙ্গী, এতো যার ‘সুনাম’ (?) তাকেই দিতে হবে স্বাধীনতা-পুরস্কার? হায়!

নাহুয়াল মিথ বলেছেনঃ
হায় হায়। রাজাকার মন্ত্রী হয়েছিল , এখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন পাবে সংবর্ধনা। অবোধ পাবলিক তালিয়া বাজাও।
ইমদাদ হক বলেছেনঃ
ভালোই তো। একাত্তরের রাজাকাররা হয় এদেশের মন্ত্রী! যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পতিতালয়ে ঘুরঘুর করেছেন, তারা আজকের মুক্তিযুদ্ধের নেতা, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা! স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বয়স মাত্র ৩, সে আবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পরিচালনা করে! হায় হায়! বড় বিচিত্র এ দেশ, হায় সেলুকাস!