রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন জোড়পুকুর মাঠের সামনে ৮০ ফুটের চওড়া রাস্তা। সামান্য এগিয়ে গেলেই ফুটপাতের পাশে বেশ কয়েকটি বয়সী গাছ দেখা যায়। যার মধ্যে একটি গাছ বয়সের ভারে অনেক বেশি নুয়ে পড়েছে। গাছটির বড় বড় ডালপালা রাস্তার উপর দিয়ে ছড়িয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই এর নিচ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে।
বিশালাকৃতির এই গাছটিকে পাশের একটি বৈদ্যুতিক পিলারের সঙ্গে নামেমাত্র তার দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গাছের ওজনের চাপে ওই বৈদ্যুতিক পিলারটিরও এখন বেহাল দশা। অল্প বাতাসে যে কোনো সময় বাঁধা তার ছিঁড়ে যেতে পারে। তাতে রাস্তায় ভেঙ্গে পড়তে পারে গাছটি; এমনকি পিলারটিও। এতে প্রাণহানীও ঘটতে পারে।
প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষ গাছটির নিচ দিয়ে যাতায়াত করছে। কোমলমতি শিশুরা অভিভাবকদের হাত ধরে স্কুলে যাওয়া- আসা করছে।
২০১৬ সালে গাছ চাপায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত খ্যাতিমান নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু। রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আকস্মিকভাবে সড়কের পাশের মোটা একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেঙে পড়ে তার ওপর। গত বছরও ধানমণ্ডিতে গাছের চাপায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মারা যান। এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যান মুজাহিদুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী।
মাঝে-মধ্যেই গাছ উপড়ে পড়ে নিহত, আহত কিংবা রাস্তা বন্ধ থাকার খবর দেখা যায়। কয়েক বছর আগে গাছ ভেঙে রাজধানীর রামপুরা, হাতিরঝিল, মিন্টু রোডের মন্ত্রিপাড়া, ধানমণ্ডি, গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ এলাকা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাছ উপড়ে পিকআপের ওপর পড়ে দুজন আহত হওয়ার ঘটনাও গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল।
মোট আয়তনের যে পরিমাণ গাছ থাকার কথা তার সিকি ভাগ গাছ রয়েছে রাজধানীতে। সেগুলোও আবার সামান্য বাতাসে উপড়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ, পরিচর্যার অভাব, মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা না করা এবং দেখভালের জন্য সরকারি উদ্যোগ না থাকায় দমকা বাতাস হলেই গাছ উপড়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, বৃক্ষরোপণের সময় খেয়াল রাখতে হবে কী ধরনের গাছ এবং কোথায় রোপণ করা হচ্ছে। মাটির গুণাগুণ বিবেচনা করে জায়গাটিতে গাছটি ভারসাম্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে কি না সেটিও বিবেচনায় আনতে হবে।
রাস্তার আইল্যান্ডে মাটি কম, সেখানে গাছের মূল গভীরে যেতে পারে না। তাই সেখানে যদি বড় প্রজাতির গাছ লাগানো হয় তাহলে হালকা বাতাসেই তা উপড়ে পড়বে। আবার যদি লালমাটি হয় সেখানে গাছ শক্তি পায় না। সামান্য বৃষ্টিতে মাটি খুব নরম হয়ে পড়ে, তখন ডালপালাও শক্তি হারায়, বাতাসে ভেঙে পড়ে। এজন্য মাটি পরীক্ষা করে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত গাছ লাগানো উচিত।
রাজধানীতে কোনো খোলা জায়গা নেই। বিল্ডিংয়ের পর বিল্ডিং উঠছে। ফাঁকা জায়গা নেই। ঝড় শুরু হলে খোলা জায়গা না থাকায় সামান্য ফাঁকা জায়গা দিয়েই তীব্র গতিতে বাতাস বয়ে যায়। তখন গাছগুলো দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে।
আবার গাছ লাগানোর পর এর তেমন কোনো পরিচর্যা করা হয় না। গাছের অতিরিক্ত ডালপালা কাটা হয় না, ফলে গাছের মূল থেকে মাথা পর্যন্ত অনেক ভারি হয়ে পড়ে। যে কারণে অনেক সময় এমনিতেই গাছ হেলে পড়ে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, গাছ লাগানো এবং বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পুরনো গাছ সংরক্ষণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে।