আন্তর্জাতিক খেলায় ‘রেফারি’ হতে তৈরি হচ্ছে দেশের নারীরা

বোরহান বিশ্বাস
Published : 21 Nov 2019, 12:05 PM
Updated : 21 Nov 2019, 12:05 PM

ফুটবলে বাংলাদেশের নারীদের উত্থানের পর এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ম্যাচ পরিচালনার জন্য তৈরি হচ্ছেন নারী রেফারিরা।

উন্নত রেফারিংয়ের জন্য ২০০৬ সালে দেশে ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য বিশেষ রেফারিং প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো শুধুমাত্র নারী রেফারিদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ বছর আরো একধাপ এগিয়ে নারী রেফারিদের নিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো 'ফিফা এমএ রেফারিং কোর্স'।

আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা আয়োজিত এ কোর্সটিতে অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থী। যারা এসেছিলেন সিলেট, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের এখানে সুযোগ দেওয়া হয়। ৬ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন দুই বেলা করে চলে প্রশিক্ষণ।

প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ফিফা থেকে মনোনীত হয়েছিলেন দুই জন নারী প্রশিক্ষক; মারিয়া লুইসা ভিয়া ও ঝ্যাং লিং লিং। তাদের অধীনে নিজেদের ভুল ত্রুটিগুলো শোধরানোর পাশাপাশি নতুন কিছু শেখার উদ্দেশ্য ছিল প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারী রেফারিদের। নারী ফুটবলে জাগরণের পর রেফারিংয়েও যেন তার ছোঁয়া লেগেছে। উচ্ছ্বসিত মনে পাঁচ দিনের এই ক্যাম্পে অংশ নেওয়া প্রশিক্ষণার্থীদের দেখে তেমনটাই মনে হয়েছে।

এমএ কোর্সটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এক ধাপে তাত্ত্বিক ক্লাস। সেখান থেকে কী শিখলেন প্রশিক্ষণার্থীরা তার প্রমাণ দিতে হয়েছে পরের ধাপে। তাত্ত্বিক ক্লাসের দায়িত্বে ছিলেন স্পেন থেকে আসা ফিফা রেফারি মারিয়া লুইসা ভিয়া। যার ঝুলিতে রয়েছে দুটি ওয়ার্ল্ড কাপ এবং লালিগার মতো বড় আসরে ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা। আর ফিজিক্যাল ক্লাস করিয়েছেন চীন থেকে আসা বিশ্বখ্যাত ঝ্যাং লিং লিং। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসেবে বিশ্বে অন্যতম তিনি।


এ দেশের ফুটবল সম্পর্কে আগে আসার আগে তেমন কোনো ধারণা ছিল না মারিয়া লুইসা ভিয়ার।

প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারী রেফারিদের নিয়ে তিনি বলেন, নারী ফুটবলে যে বাংলাদেশ এতোটা এগিয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর।

প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীদের  অনুপ্রাণিত করেন মারিয়া লুইসা ভিয়া; তাদের মেধার প্রশংসাও করেন।

প্রশিক্ষণে আসা ঢাকার জলি আক্তার বাঁধন বলেন, প্রশিক্ষণের বিষয়ে বাফুফের পক্ষ থেকে প্রথমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

এম এ রেফারিং কোর্সটির তদারকির দায়িত্বে ছিলেন শহীদুল ইসলাম লিমন। বাঁধন নিজেও এক সময় রেফারি ছিলেন।

পাঁচ দিনের এই কোর্সে দুটি শিফট ছিল। প্রথম শিফটে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল তাত্ত্বিক ক্লাস। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে এই প্রশিক্ষণ  দিয়েছেন স্পেনিস রেফারি মারিয়া ভিয়া। মাঠে খেলা পরিচালনা করতে রেফারিদের জন্য যে ১৭টি আইন আছে তার খুঁটিনাটি নিয়ে বিশদও আলোচনা করেন তিনি।

কিছু কিছু জায়গায় আইন সংস্কারের কথাও উঠে এসেছে ক্লাসে বলে জানান বাঁধন।

"যেমন- হ্যান্ডবল, অফসাইড, মাঠের টেকনিক্যাল এরিয়ায় কোচ, ম্যানেজারদের বসা ইত্যাদি বিষয়ে।"

তিনি বলেন,  "দ্বিতীয় শিফটে বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ফিজিক্যাল ফিটনেস টেস্ট। এটি হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এবং হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে। ফিটনেস ক্লাসে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম ও দৌড়ের ব্যবস্থা রাখা হতো। একেবারে ঘড়ি ধরে টাইম সেট করা হতো।"

বিদায় বেলায় দু'জন কোচই অশ্রুসজল ছিলেন।

বাঁধন বলেন, "আমাদের পরিশ্রম করতে বলেছেন। কারো কথায় কান না দিয়ে নিয়মিত প্র্যাকটিসটা চালিয়ে যেতে বলেছেন।

"কোচ মারিয়ার একটি কথা আমাদের অনেক বেশি সাহস জুগিয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি ছোট্ট একটা গ্রামে জন্ম নিয়েও আজ এই পর্যায়ে এসেছি। তাহলে তোমরা কেনো পারবে না?"

বাফুফে এবং রেফারিস এসোসিয়েশনের কাছে নারী রেফারিদের আরো প্রশিক্ষণ এবং খেলা পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রশিক্ষণার্থীরা বলছেন, তাত্ত্বিক ক্লাসে যেখানে তাদের বুঝতে সমস্যা হতো সিনিয়ররা সেটি বুঝিয়ে দিতেন। এমএ কোর্সটি আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

প্রশিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল হোটেল সোনারগাঁওয়ে। আর প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারী রেফারিদের জন্য বাফুফের কাছাকাছি একটি হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।


ফিফা প্রদত্ত কিছু আইন বাংলাদেশে চালু আছ বলে জানান প্রশিক্ষনার্থীরা।

"আবার দু-একটি আইন কীভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। যেমন- অফসাইড থেকে গোল হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির দেশে থার্ড রেফারির সাহায্য নেওয়া হয়। বাংলাদেশে এটি এখনো সম্ভব হয়নি।"

আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার জন্য গত অগাস্টে সালমা আক্তার ও জয়া চাকমা ফিফার মনোনয়ন পেয়েছেন। পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সার্টিফিকেট পাওয়া নারী রেফারিরা এখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার স্বপ্ন দেখতেই পারেন।