কীযেক-কীকচা

বক্সার
Published : 22 Jan 2012, 07:02 AM
Updated : 22 Jan 2012, 07:02 AM

বাবুরা কথা কহেন ভালো।
শেয়ারবাজারে আগুন লাগিলো। অর্থবাবু কহিলেন, ফটকাবাজ।
আগুনে ঘি, কেরোসিন, পেট্রোল ও পোড়া মোবিল যোগ হইলো।
অর্থবাবুর পুত্তলিকা দাহ হইলো। বাবুগিরি ছাড়িবার দাবি উঠিলো।
মুদ্রাবিশারদরা বাবুর বিরুদ্ধে তীর্যক বাক্যব্যয় থামাইতে পারিতেছিলেন না।
ত্রিমুখী বাক্যবানে অর্থবাবুর উন্নত টাক ঘামিতে লাগিলো।
তিনি আইনসভায় কহিলেন, আপাতত শেয়ার বিষয়ে কেয়ার দিতে চাহিতেছেন না।
বাল্যে কিতাবে পড়িয়াছিলাম, ঠেলায় পড়িলে ব্যাঘ্রে-মহিষে একই জলাধারে চুমুক দিয়া থাকে।
ঠেলায় পড়িলে বাবুদের কী হয়, তাহা এই বয়সকালে প্রত্যক্ষ করিলাম।

স্বরাষ্ট্রবিবিরে 'সুশ্রী' বলার কিছুকাল পরে কারাপ্রকোষ্ঠে স্থায়ী আসন লইলেন আইনসভার এক সভ্য।
স্বরাষ্ট্রবিবি গোস্বা হইয়াছিলেন। এক্ষণে সুখী হইলেন। চেহারার জেল্লাও কিছু বাড়িল।
তবে নাপাক কথা বলা ছাড়িতে পারিলেন না।
এইখানে সাতজন মরিল। বিবি কহিলেন, কানুন নিজস্ব রেলপথে চলিতেছে, চলিবে।
ওইখানে মনুষ্যের কাটা মাথা মিলিল। বিবি কহিলেন, রাজ্যে সহস্র চন্দ্রসালের মধ্যে সর্বাধিক শান্তি বিরাজ করিতেছে।
পাঠশালাগুলোতে দলের সুসন্তানেরা বালিকার ইজ্জত হরণ করিল।
বিবি কহিলেন, রোলারের ডলা উজির-বিরোধী সকলের জন্য সমভাবে প্রয়োগ হইবে।
পরদিন ওই কীর্তিমানদের চাপাতি রিহার্সেলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়িল।
স্বরাষ্ট্রবিবি হাসিলেন। কালোর মধ্যে সাদা দন্তরাজি উজ্জ্বলভাবে প্রতিভাত হইলো।

আইন প্রতিবাবু নামে একটি পদ উজিরসভায় নির্দিষ্ট ছিল।
ওই পদের অধিকারী উন্নত ভাষা ব্যবহারে অতিশয় দক্ষ হইয়াছিলেন।
পদলাভের পর ঋণশোধের আতিশয্য তাগিদে বাকযন্ত্র ব্যবহারে রাতারাতি ভীমরতিপ্রাপ্ত হওয়ায় সতীর্থরা তাহাকে ভীমরুল বলিয়া ডাকিতো।
বাংলা ভাষার যে সমস্ত সম্ভাবনাময় অশ্লীল শব্দভাণ্ডার প্রকাশ্য ব্যবহারের অভাবে বিলুপ্তপ্রায় হইতে বসিয়াছিল, সেগুলিকে প্রাত্যহিক জীবনে পুনরুজ্জীবিত করিয়া তিনি ভাষার বিকাশে অসামান্য অবদান রাখিয়াছিলেন।

অতীতকালে এক বৃহৎ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এই রাজ্য স্বতন্ত্র হইয়াছিল।
সেই লড়াইয়ে যারা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখিয়াছিলেন, তারা অন্ধ-কালা হওয়ায় লড়াইয়ের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় কিছুই দেখিতে পারেন নাই।
লড়াইয়ের চার দশক পর সেই না দেখা বিষয়গুলো অলৌকিক ক্ষমতাগুণে নতুন করিয়া দেখা শুরু করিলেন প্রতিবাবু ভীমরুল।
বাবু ভীমরুলের কল্যাণে লড়াইয়ের ইতিহাস লইয়া আমাদের জ্ঞান দিন দিন বাড়িতে লাগিলো।
ওই বৃহৎ লড়াইয়ে যেসব কুলাঙ্গাররা বেঈমানী করিয়াছিল, তাদের বিচারার্থে হাকিমখানা খোলা হইলো।
জাতি সত্য সত্যই ওই বিচার চাহিয়াছিলো।
কিন্তু ঋণশোধের আতিশয্য তাড়নায় প্রতিবাবু অশ্লীল শব্দরাজী প্রয়োগে হাকিমখানাকে পুন:পুন: বলাৎকার করিতে লাগিলেন।

শাসকদলে জনকয়েক অপরিনামদর্শী বাচাল ছিলেন।
তিন সাল রাজা-উজিরদের সুকর্মের কড়া সমালোচনা করিয়া তারা অবশেষে বাবুগিরি লাভ করিলেন।
একজন পাইলেন পথ মেরামত দফতর।
অন্যজন রেলবগি দেখভালের আপিস।
একদা বাবুসভার তীব্র সমালোচক নতুন পথবাবু কাজে নামিয়া বুঝিলেন, তাহার পূর্বসূরী অবস্থার বারোটা সাঁইত্রিশ বাজাইয়া গিয়াছেন।
তবু তৎপর হইবার কোশেশ করিলেন তিনি।
এইখানে হাঁটিলেন, ওইখানে চালকের পরিচয়নামা খতিয়ে দেখিতে লাগিলেন।
মহাপথে এরূপ এক অভিযানে ৬০ ভাগ চালকের খাদযুক্ত পরিচয়নামা দেখিয়া অবাক হইবার ভান করিলেন।
খবরপত্রগুলি তাহার হাঁটাহাঁটির চিত্র ছাপাইতে লাগিল।
তবে পথব্যবস্থার সেইমতো উন্নত হইলো না।
তারপর একদিন পথবাবু ঘোষণা করিলেন, শিঘ্রই চক্ষুস্মানরা স্বচক্ষে উন্নয়ন দেখিতে পাইবেন।
পথবাবু অন্যদের মতো ছিলেন না। তিনি সত্য কহিয়াছিলেন।

তার এই ঘোষণার কিছুকাল পর থেকেই রাজধানীর একটি গলিপথবাসীরা তাহার কথার সত্যতা দেখিতে শুরু করিলেন।
মাসাধিককাল ব্যাপিয়া তারা এখনও উন্নয়নদৃশ্য দেখিতেছেন। তাহাদের নয়ন জুড়াইয়া যাইতেছে।
(তাহার কিছু নমুনামাত্র এইখানে সংযোজিত হইলো।)
পর্যবেক্ষকগণ কহিতেছেন, এই অতুলনীয় দৃশ্যাবলী আরও বহুকাল অব্যাহতভাবে দেখিবার সুযোগ পাইবেন গলিপথবাসী।

এই গলিপথ এলাকায় এক অর্বাচিন বাস করিতেছেন বহুকাল ধরে।
উন্নয়ন বিষয়ক দৃশ্যাবলির অমিত তাৎপর্য অনুধাবনে তাহার ক্ষুদ্রজ্ঞান নিতান্তই অক্ষম বলিয়া এসব অসামান্য উন্নয়ন দৃশ্য লইয়া প্রায়ই তিনি সওয়াল করিয়া উঠিতে লাগিলেন।
অর্বাচিন এবার বলিলেন- কী যে করিতেছে? কী করিতে চাই?
সংক্ষেপে 'কীযেক-কীকচা'।