কিশোরীকে অপহরণ করে পালা ক্রমে ধর্ষণ, অসামাজিক কাজ থেকে ফেরাতে না পেরে বোনকে হত্যা ,ইশ যদি……

মৌমাছির গুনগুন
Published : 9 May 2011, 06:33 AM
Updated : 9 May 2011, 06:33 AM

১)কিশোরীটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরগঞ্জ মজিদ মণ্ডল উচ্চ বিদ্যালয় এর ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। সে একই এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে স্বাধীন মিয়ার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই পরিচিতির সূত্র ধরে স্বাধীন মিয়া তার কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঐ কিশোরীর মুখে কাপড় গুজে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। অপহরণের কথা জানাজানি হয়ে গেলে অপহরণকারীরা মেয়েকে রেখে পালিয়ে যায়। তারপর প্রতিবেশীদের সহায়তায় মেয়েকে বাড়িতে আনা হলে মেয়ে তার অপহরণ ও ধর্ষণ এর কথা খুলে বলে। তারপর থেকে ধর্ষিতা ও তার পিতামাতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধর্ষিতাসহ তার বাবা মাকে অপহরণ করা হয়েছে। (৭/০৫/২০১১) তারিখের মানবজমিন পত্রিকা।

২) বোনকে অসামাজিক কাজ থেকে ফেরাতে না পেরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার ভাই কলেজ ছাত্র মিথুন বালা। হত্যার পর সেচ্ছায় সে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে। মিথুনের বড় বোন ৬ বছর আগে সিঙ্গাপুর প্রবাসী কামরুল হাসান ইমনকে বিয়ে করে। স্বামী বিদেশ এ থাকার কারণে রেখা উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করতো। তার বোনের চরিত্র ভালো ছিল না। রেখার একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক ছিল।যা তার ভাই মিথুনের ভালো লাগতো না। বোনকে উচ্ছৃঙ্খল পথ থেকে ফেরাতে মিথুন অনেক চেষ্টা করেছে । এ নিয়ে ভাই ও বোনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো । বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে চাপাতি দিয়ে মিথুন বালা তার বোন রেখাকে মাথার পেছনে আঘাত করে । রেখা তৎক্ষণাৎ মারা যায়। তারপর পুলিশের কাছে মিথুন নিজেই আত্মসমর্পণ করে। (০৭/০৫/২০১১) তারিখের প্রথম আলো পত্রিকা।

ইশ তারা যদি পবিত্র কুরআন বুঝে পড়তো, পবিত্র কুরআনের আলো কে তাদের জীবনের দিশারী বানাতো এবং কুরআনের সংস্পর্শে আসতো তাহলে হয়তো আমাদের সমাজটা কলুষিত হওয়া থেকে বেঁচে যেত। এজন্য কুরআনের মর্মার্থ অবশ্যই বুঝে পড়া উচিৎ। যথাযথ অন্তর্নিহিত ভাব, অর্থ,নির্দেশনা ও মর্মভেদ না করে কুরআনের আলোয় নিজেকে রাঙানো সম্ভব নয়। কুরআনি অনুশাসনের প্রয়োগ ও সার্বক্ষণিক চর্চাই এ কল্যাণ নিশ্চিত করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায়।

আল কুরআন বুঝে পড়া উচিৎ

আল- কুরআন মহান আল্লাহ্‌র এক অপার মহিমা বিশ্বমানবতার প্রতি। পবিত্র আল-কুরআন ই পারে মানুষের জীবনে আলোর দিশারী হিসেবে কাজ করতে এবং মানব জাতিকে সঠিক ও সত্য পথের দিক নির্দেশনা দিতে। পবিত্র কুরআন যেমনি একজন অবিশ্বাসীর জন্য নিশ্চিতভাবে একটি হুশিয়ারি বার্তা তেমনি বিপরীতক্রমে বিশ্বাসী তথা মুমিনদের জন্য সুসংবাদের সবিশেষ উৎসস্থল।" আল-কুরআন বুঝে পড়া উচিৎ"এ সম্পর্কে আমি বিশিষ্ট ইসলামিক বক্তা ও চিন্তাবিদ ডাঃ জাকির নায়েকের লেকচার শুনে সত্যি মুগ্ধ হয়েছি । পবিত্র কুরআন কি উপায়ে বুঝে পড়া উচিৎ এ সম্পর্কে তিনি যে বক্তব্যসমূহ দিয়েছেন তা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম————

(১) কুরআন মুসলিম জাতির এক শ্রেষ্ঠত্বের উৎসঃ

আলহামদুলিল্লাহ, পবিত্র কুরআন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তিলাওয়াতকৃত তথা পঠিত গ্রন্থ। কিন্তু এটি এর একটি দিক, এর বিপরীত দিকটি সম্ভবত পাঠকদের জন্য সবচেয়ে অস্বস্তিকর। আর তা হলো বেশির ভাগ পাঠকই বুৎপত্তি বা অনুধাবন ছাড়াই পাঠ করে থাকেন। যা পাঠক ও কুরআনের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন ও বোঝাপড়া সৃষ্টির বড় অন্তরায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা কুরআন থেকে যে উপকারিতা ও সুযোগ পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হই। যদি আমাদের জ্ঞানের বাইরেই থেকে যায় কোনটি ভালো , গ্রহণীয় আর কোনটি মন্দ ও অস্পৃশ্য তবে কিভাবে গ্রহণ ও বর্জনের কর্ম আমরা সম্পাদন করতে পারি কুরআন থেকে।

(২) কুরআনের পরিচয়ঃ

কুরআনের শাব্দিক অর্থ একটি বই যা পড়ার, অনুধাবনের , গবেষণার ও বুৎপত্তি অর্জনের। কুরআনের অন্য একটি প্রতিশব্দ "ফোরকান " যা কুরআনের মধ্যে বিবৃত হয়েছে।ফোরকান এজন্য যে, কুরআন ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, মঙ্গল-অমঙ্গল এবং সর্বোপরি গ্রহণীয়-বর্জনীয় কর্মগুলোকে পৃথক করে,একটি থেকে অন্যটিকে আলাদা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে।

(৩) কুরআন কেন বুঝে পড়বঃ

ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য, ভালো ও মন্দের ব্যবধান ও কল্যাণ অকল্যাণের দূরত্ব হৃদয়াঙ্গম করতে হলে কুরআন অর্থ সহকারে বুঝে পাঠ করা অতীব জরুরী। কুরআনের অনেক সময় অর্থ না বুঝেই পড়া হয়। এর সর্বপ্রধান কারণটি হল —- কুরআন নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায়। যার সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশেরই ন্যূনতম ধারণা বা জ্ঞান নেই। খুব নগণ্য সংখ্যক মুসলিমই আরবি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।

একথা সর্বজনবিদিত যে, ভাষা আয়ত্ত করার বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই শৈশবে অনেক সহজবোধ্য। তবে বয়স বাড়লে যে তা অসম্ভব হয়ে যায় ব্যাপারটি তেমন নয়, বিশেষত, তা যদি সৎ উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।এ প্রসঙ্গে একটা দৃষ্টান্ত হাজির করা যেতে পারে। আর যার সম্পর্কে উদাহরণটি সম্পৃক্ত তিনি ফ্রান্সের ডাঃ মরিস বুকাইলি। বুকাইলি একজন ফরাসি বিজ্ঞানী ও সার্জন। তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন বাইবেলে উল্লেখিত ফারাও হযরত মুসা(আ) এর কিসসা। কিন্তু এ বিষয়ে গবেষণা করতে যেয়ে তিনি অবাক বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করলেন যে, তিনি যা এইমাত্র আবিষ্কার করলেন তা হাজার বছরেরও অনেক পূর্বেই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে। বিষয়টা তাকে এতটাই নাড়া দেয় যে, তাঁকে আরবি ভাষা শিখতে উদ্যোগী করে তোলে। তিনি শুধু আরবি লিসান (ভাষা) সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করেই ক্ষান্ত হন
নি, পরবর্তীতে একটা গ্রন্থও লিখে ফেলেন। যার শিরোনাম " বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান"।

(৪) আল-কুরআন বুঝে পড়ার উপায়ঃ

কখনও এতটা আশা করা উচিৎ নয় যে, সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ই আরবি ভাষা রপ্ত করতে সক্ষম হবে। অবশ্য এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে, যারা আরবি ভাষা বোঝেন না তারা পবিত্র কুরআন অনুধাবন ছাড়াই পাঠ করবেন। আল্লাহ্‌র অশেষ মেহেরবানিতে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ভাষাসহ অন্য আরো অনেক ভাষাতেই তা অনূদিত ও ভাষান্তরিত হয়েছে।

মনে করুন, আপনাদের একজন জার্মানি বন্ধু আছে। সে আপনার অতি অন্তরঙ্গ বন্ধু। সে আপনার কাছে এলো। অনেক কষ্টে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে দুজন ভাব বিনিময় করলেন। যেহেতু দুজন ভালো বন্ধু আশা করি বাক্যালাপ যত কষ্টেরই হোক দুজনেই তা উপভোগ করবেন। কিন্তু বন্ধুটি যদি জার্মানি ফিরে গিয়ে জার্মান ভাষায় পত্র লিখে আপনি কি তা বুঝবেন??? এক্ষেত্রে আপনাকে যেতে হবে অনুবাদকের কাছে। কেন যাবেন???? নিশ্চয়ই আপনার প্রিয় বন্ধু আপনাকে কি লিখেছে তা জানার জন্য অধীর আগ্রহ থাকবে আপনার মধ্যে। তাই যদি হয়, তবে পবিত্র কুরআনের মত মহান বন্ধু আপনাকে কি বলল তা জানতে ও বুঝতে কি এতটুকুও ইচ্ছে হয় না ! অথচ আন্তরিকভাবে ইচ্ছে করলেই যে কোন অনুবাদ সংগ্রহ করে যেকোনো সময় আমরা কুরআনের অর্থ অনুধাবন করে অনেকটাই অগ্রগামী হতে পারি।

(৫) কুরআন সম্পূর্ণ মানবজাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপঃ

মুসলমানদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা বেশ প্রচলিত। তা হলো পবিত্র কুরআন কেবল মুসলমান জাতির জন্য নাযিলকৃত। তাই তারা এ ভেবেই বসে থাকেন কোন মুসলিমেরই উচিৎ হবে না কোন অমুসলিমকে পবিত্র কুরআন উপহার দেওয়া। অথচ পবিত্র কুরআনের সূরা ইবরাহীমের ১ নং আয়াত এ বলা হয়েছে ……" এটি এমন একটি গ্রন্থ যা আমি আপনার নিকট এ উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করেছি যেন মানুষ পায় এর দ্বারা আলোর দিশা ঘোর অন্ধকার হতে"

সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ……"আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণশরুপ"
সূরা সাবা এর ২৮ নং আয়াত এ বলা হয়েছেঃ ……" আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে,কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না" ।

(৬) অমুসলিমকে কুরআন দেয়ার নেই কোন বাধাঃ

অনেক মুসলিম আছেন যারা মনে করেন পবিত্র কুরআন কোন অমুসলিমকে দেয়া যাবে না। তারা এক্ষেত্রে সূরা ওয়াকিয়াহ এর আয়াত নং (৭৭-৮০) কে দলিল হিসেবে পেশ করেন , "নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন সবচেয়ে সম্মানিত যা অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ নিষিদ্ধ। এটা জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ"।

এর যথার্থ হিসেবে তারা ধরেই নেন যে , পবিত্র কুরআন পবিত্রতা ছাড়া স্পর্শ অনানুমোদিত। আর যেহেতু অমুসলিমরা অপবিত্র তাই তাদের স্পর্শে কোনোভাবেই কুরআন নেয়া যাবে না। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। আসলে এখানে যা বলা হয়েছে তার মর্মার্থ হচ্ছে পবিত্র কুরআন লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে। তার ওই সংরক্ষিত কুরআনটি ফেরেশতা ব্যতীত অন্য কোন অপবিত্র ও লৌকিক বস্তু কোনোভাবেই স্পর্শ করতে পারবে না। অনেকেই আবার মত প্রকাশ করেন, যদি অমুসলিমকে একান্তই কুরআন প্রদানের অভিপ্রায় থাকে তবে যেন আরবি বর্ণমালা ছাড়া কেবল অনুবাদকৃত কুরআন দেয়া হয়।

অনূদিত কুরআন দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। যদি কেউ সত্যিকার অর্থেই কুরআন দিতে চায় তবে আরবিসহ দিতে অসুবিধা কোথায়???যদি অনুবাদ অংশে কোন ভুল থাকে তবে আরবি অংশই একমাত্র অবলম্বন শুধরে নেয়ার।

(৭) অমুসলিমদের নিকট কুরআন দেয়া, মহানবী(সাঃ) এর দৃষ্টান্তঃ

অমুসলিমদের আরবিসহ কুরআন দেওয়াতে কোন দোষ নেই। কেননা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ(সা তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় অমুসলিম বাদশাহদের নিকট আরবি ভাষায় লিখিত পত্র প্রেরণ করতেন যার মধ্যে কুরআনের আয়াতও থাকতো। আবিসিনিয়ার বাদশাহ, সম্রাট হিরাক্লিয়াস , ইয়েমেন এর রাজা, মিশরের বাদশাহের নিকটেই মহানবী(সাঃ) এমন পত্র দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ইসলাম গ্রহণ করলো, কেউ কেউ পত্র ছিন্ন করে, অনেকেই পদতলে পিষ্ট করলো। পৃথিবীর যেকোনো ভাষায় অনুবাদকৃত কুরআনের সাথে মূল আরবি ভাষার কুরআন দেয়া উচিত।

(৮) কুরআন বুঝা সহজঃ

আবার অনেক মুসলিম মনে করে থাকেন কুরআন অর্থসহ বুঝে তিলাওয়াত করা শুধু আলিমদের জন্যই উন্মুক্ত থাকা দরকার। তারা মতামত দেন যে , সাধারণ মানুষ অর্থ পড়তে গিয়ে বিভ্রান্ত বা ভ্রষট হয়ে যেতে পারে। সূরা আল কামার এর আয়াত নং ১৭, ২২, ৩২, ও ৪০ এ বলেন ,
" আমি কুরআনকে উন্মুক্ত করেছি ও তোমাদের বুঝার জন্য সহজ করেছি"
সুতরাং ভাবনার কি????? আল্লাহ্‌ নিজেই কুরআনকে বুঝার ও মনে রাখার জন্য সহজ বলে যেখানে নিশ্চয়তা দিয়েছেন তখন কিভাবে এটা ভাবার অবকাশ থাকে যে , আলিম ছাড়া অন্য কেউ বুঝার চেষ্টা করলে পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ হয়ে যাবে ???? তাহলে কাকে বিশ্বাস করবেন আল্লাহ্‌কে নাকি যারা ভ্রষ্টতার অভিযোগ করে তাদের??? পবিত্র কুরআনে বার বার বুঝে পড়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে । সূরা বাকারার ২৪২ নং আয়াত এ আল্লাহ্‌ বলেনঃ……
" এভাবে আল্লাহ্‌ তাঁর বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝতে পারো "।

(৯) আলিমের পরিচয়ঃ

"আলিম" অর্থ কি??? " আলিম" অর্থ জ্ঞানী , যার জ্ঞান আছে তিনি আলিম। আলিম অর্থ এটা নয় যে ,কোন বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় ১২-১৪ বছর পড়াশুনা করেছে। যদি পবিত্র কুরআনের নুযূল বা অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত কোন তথ্য জানার থাকে তবে অবশ্যই আপনার গন্তব্য হওয়া উচিৎ কোন আলিম এর নিকট যিনি দারুল উলুম বা এমন প্রতিষ্ঠানে ১২-১৪ বছর অধ্যয়ন করেছেন।

(১০) কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান ……একটি দৃষ্টান্তঃ

চার বছর পূর্বে একটা বিশেষজ্ঞ দল ঠিক করলেন , নৃবিজ্ঞান সম্পর্কিত যত তথ্য কুরআনে বর্ণিত তা তারা একত্রিত করবেন এবং পবিত্র কুরআনের পথনির্দেশ পালন করবেন।তাই তারা ঠিক করলেন যে, নৃবিজ্ঞান বিষয়ক আয়াতগুলো তারা কানাডার টরোনটো ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞান ডিপার্টমেনট এর প্রধানের নিকট তার অনুবাদ করবেন। যখন তার নিকট সেগুলো দেয়া হলো তখন তিনি দেখলেন সর্বাধুনিক আবিষ্কৃত বিষয়টিও শতভাগ মিলে যায় দেড় হাজার বছর আগের বর্ণনার সাথে। পবিত্র কুরআনের সূরা আলাকের ১ ও ২ নং আয়াত…… "পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষকে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন"।

ডাঃ বিট মোর বললেন, তিনি ঠিক জানেন না যে,শিশু মাতৃগর্ভে আসার প্রাক্কালে সত্যি সত্যি জমাট বাঁধা রক্ত হিসেবে থাকে কিনা। বিষয়টি গবেষণায় তিনি নেমে পড়লেন। তিনি ভ্রূণকে শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নিরীক্ষণ করে জমাট বাঁধা রক্তের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবির সাথে তুলনা করে দেখতে লাগলেন। এটা করতে গিয়ে তার চোখ ত ছানাবড়া। একি!!!! পবিত্র কুরআনের বর্ণনারই যেন অবিকল সঞ্চালন ঘটলো তার যন্ত্রের সামনে।

(১১) মানবজাতির ম্যানুয়াল- ১… আল-কুরআনঃ

আমরা বাজার থেকে যখন নতুন কোন যান্ত্রিক পণ্য খরিদ করি তখন একটা ম্যানুয়াল দেয়া হয়। কেন দেয়া হয়???? কারণ ঐ যন্ত্রটি কিভাবে চালাতে হবে, কিভাবে কোন সুইচ দিয়ে কোন কাজ সমাধা করা যাবে তার বিশদ বর্ণনা থাকে ঐ ম্যানুয়ালে।

এমনকি পণ্যটির পরিচর্যার বিভিন্ন দিক- নির্দেশনা ম্যানুয়ালে বর্ণনা করা হয়, যেমনঃ ওপর থেকে ফেলবেন না, পণ্যটি ভিজে গেলে কি ক্ষতি হবে, কত তাপমাত্রায় রাখা যাবে ইত্যাদি। আবার লক্ষ্য করুন ঐ ম্যানুয়াল কিন্তু অন্য কেউ সরবরাহ করে না বরং পণ্যটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিজেরাই দিয়ে থাকে। কেন নিজেরা দেয়??? কেননা পণ্যটি তাদের উৎপাদন তারাই এর টেকনোলজি সম্পর্কে ভালো জানে, তারাই এর দিক নির্দেশনা ও চালানোর রীতিনীতি বেশি ভালো করে দিতে পারবে।

প্রসঙ্গটি এজন্যই আনা হলো যে, মানুষ একটা জটিল যন্ত্র, একটি সুপার কম্পিউটারের চেয়েও লক্ষ লক্ষ গুন জটিল হচ্ছে মানুষ এর দেহযন্ত্র। তাই এটিও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটা সুন্দর ও যথাযথ ম্যানুয়াল। আর এ ম্যানুয়াল তথা জীবন পরিচালনা পদ্ধতি বা দিক নির্দেশনাই হচ্ছেঃ আল – কুরআন। লক্ষ্য করে দেখবেন যে, পণ্য প্রস্তুত বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই ম্যানুয়াল বই দিয়ে থাকে। তেমনিভাবে মানুষের চলার পদ্ধতি, জীবনআচার দিক- নির্দেশনা সম্বলিত সামগ্রিক তথ্য ও নির্দেশনা মানুষের নির্মাতা , সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ই দেয়ার ক্ষমতা রাখেন অন্য কেউ নয়। কোন পণ্য যেমন নিজের ম্যানুয়াল তৈরি করতে পারে না বরং তার নির্মাতাই সেটা করার একমাত্র ক্ষমতাবান, তেমনি মানুষও নিজের চলার দিক নির্দেশনা তৈরি করার ক্ষমতা রাখে না বরং মানুষের নির্মাতা সৃষ্টিকর্তার হাতেই শোভা পায়, এরই ফল আল- কুরআন।

১২) মানবজাতির ম্যানুয়াল…২ আল-কুরআনঃ

আমাদের ভারতবর্ষের কোন ব্যক্তি যদি পবিত্র কুরআন সামনে নিয়ে কাবা'কে পেছন দিক ফিরে বসে থাকে তবে তার স্থান আর ভারতবর্ষে থাকবে না। সবাই মিলে তাকে বের করে দিবে। অথচ হারাম শরীফে আমি বহুলোককে দেখেছি কা'বাকে পেছন ফিরে বসতে। অথচ এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ভুলবুঝাবুঝি মুসলিম উম্মাহকে গ্রাস করছে। আমাদের কতই দুর্ভাগ্য।

ভারতবর্ষের একজন ইমাম ছিলেন যার তিলাওয়াত ছিল খুবই মধুর। তিনি সৌদিআরব গেলে সেখানকার ইমামসাহেব তাকেসালাতের ইমামতি করতে বলেন। সালাত শেষ একজন আরব তার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। তখন তিনি তার নিকট কারণ জানতে চাইলে লোকটি বলে……" আপনার তিলাওয়াত অতি মিষ্টি তবে আপনি সালাতের মধ্যে মুসা(আ কে যে মাঠে নিয়ে গেলেন , আর তা ফিরিয়ে আনলেন না।

তখন ইমাম সাহেব বুঝতে পারলেন যে, আরবরা কতো মনোযোগ দিয়ে কুরআন পাঠ শুনে থাকে। এমনকি সালাতের মধ্যে কোন ভাবের অসঙ্গতি রেখে তারা কুরআন শেষ করে না।
কুরআনের সূরা মুহাম্মাদের আয়াত নং ২৪ এ বলা হয়…

" তারা কি কুরআন সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে না????"

(১৩) কুরআন তিলাওয়াতের বিভিন্ন উপায়ঃ

পবিত্র কুরআন অনেকভাবেই তিলাওয়াত করা যায়। যেমন মনে করুন আয়াতগুলো অর্থসহ মোটামুটি পড়ে যাওয়া। এটা খুবই সহজ এবং এতে সময়ও অনেক কম লাগে। একজন মানুষ এভাবে অল্পকয়েকদিনেই সম্পূর্ণ কুরান পড়তে সক্ষম হবে। আর একটি হচ্ছে গভীর জ্ঞানের সাথে পড়া। পবিত্র কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াত গভীরভাবে অর্থবুঝে তিলাওয়াত করা। গভীর অর্থসহ আপনি যত পড়বেন আপনার সামনে ততই নতুন নতুন পথ আপনার সামনে খুলে যাবে। এভাবে কুরআনের গভীর অর্থ অনুধাবন প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে, কখনও শেষ হয় না।তাই আমাদের প্রতিদিনই কুরআন তিলাওয়াত করা উচিৎ।

আমাদের দরকার প্রত্যেক পরিবারের কমপক্ষে একটি কুরআন পবিত্র ভাষা আরবিসহ যে ভাষা বুঝে সে ভাষায় অনুবাদ ঘরে রাখা। অনেকের বুকসেলফে কুরআনের অনুবাদ সাজানো থাকে, কিন্তু কখনও ছুয়েও দেখে না। এতে লাভ কি????? অবশ্যই আমাদেরকে কুরআন বুঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রথম স্থানে থাকবে কুরআন। আপনার সন্তানের জন্য প্রথম বইটি হোক কুরআন।
পরিবারের সবাই মিলে কখনও কুরআন তিলাওয়াত করা হয়???? হ্যাঁ এটাও পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। পরিবারের সবাই মিলে সালাতুল ফজর বা সালাতুল ঈশা বা অন্য যে কোন সুবিধামত সময়ে যদি আমরা প্রতিদিন এক রুকুও অর্থসহ কুরআন পড়ি তাহলে সহজেই কুরআন পড়া শেষ হয়ে যাবে। এভাবে মাত্র দু বছরেই আমরা পবিত্র কুরআন একবার পড়া শেষ করতে পারি।

(১৪) কুরআনের অনুবাদ নির্বাচনঃ

অনেকে বলেন, কোন অনুবাদ পড়বো ???? এক্ষেত্রে ইংরেজি অনুবাদগুলো পড়া যায়। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে , কোনও অনুবাদই একশো ভাগ নির্ভুল নয় । কেননা এগুলো মানুষের লেখা আর মানুষ কখনও ভুলের বাইরে নয়। অনুবাদ পড়ার বেলায় অনেকেই প্রাচীনত্বকে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু অনেক সময় নতুন অনুবাদও ভালো হতে পারে। যেহেতু পুরানো অনুবাদ পড়ে তাদের দুর্বলতা অনুধাবন করে নতুনরা লিখতে বসেন।

ইংরেজি ভাষায় অনূদিত কোরআনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত আবদুল্লাহ ইউসুফের অনুবাদটি। এটি বেশ সহজবোধ্য , না বেশি সংক্ষিপ্ত আবার না বেশি বিস্তৃত। মধ্যম আকারের এবং বেশ প্রাঞ্জল।

এরপর আসে আবুল কাশেম অনুদিত তফসিরটি। এটি একেবারে নতুন প্রকাশক। এটি আপনি পড়ে দেখতে পারেন।
কুরতুবি, ইবনে কাসির ইত্যাদির সাথে সংগতি রেখে এ অনুবাদটিও সুন্দর। এটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে , কুরআনের আলোচনার সাথে সাথে বুখারী শরীফের সম্পৃক্ত হাদিসগুলোও এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। ফলে একই সাথে বুখারী শরীফ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও জ্ঞান লাভ করা যায়।
আবদুল মজিদ দরিয়াবাদী লিখিত তফসীর গ্রন্থ " তফসিরুল কুরআনটিও" পড়তে পারেন।এটি চার খণ্ডে লিখিত। এছাড়া মাহমুদুল হক লিখিত অনুবাদটিও বেশ ভালো ও সহজ সরল ভাষায় সুলিখিত।

অন্য ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত কুরআনের মধ্যে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর লিখিত তফহীমূল কুরআন বেশ প্রচলিত।