রোহিঙ্গা সমস্যা: চাপে মিয়ানমারের বদলে বাংলাদেশ কেন?

বি স্যানাল
Published : 16 June 2012, 06:05 AM
Updated : 16 June 2012, 06:05 AM

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গাদের জাতিগত দাঙ্গা এবং তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় চাইতে আসা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এখানে কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি বলে আমি মনে করছি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় না দেওয়া নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে জোর সমালোচনা চলছে। তাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করতে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি এসব সংস্থার চাপ কেন নেই। এই দাঙ্গার সূত্রপাত গতমাসের শেষ দিকে। একজন রাখাইন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর রোহিঙ্গাদের একটি বাসে আগুন দিয়ে ১০ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। কিন্তু ওই নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে রোহিঙ্গা নয়, রাখাইনরাই জড়িত বলে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত করেছে। যাই হোক বর্তমান পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে মিয়ানমার সরকার।

দেশটিতে দীর্ঘদিনের কারাবাসের পর মুক্ত হয়েছেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চি। তিনি বর্তমানে ইউরোপ সফর করছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছি তিনি তার দেশে মানবাধিকারকর্মীদের নিরাপত্তা চেয়েছেন-কিন্তু আগুনে ঝলসে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা চেয়ে কিছু বলতে এখনো তাকে শোনা যায়নি। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের অবসানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের যুগ শুরু হয়েছে। কিন্তু তারাও যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যদিও এই সরকারের কারণে মিয়ানমারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে একের পর এক পশ্চিমা রাষ্ট্র। ওই পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর অঙ্গুলি নির্দেশে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হলেও মিয়ানমারের সরকারের প্রতি কোনো আহ্বান রাখা হচ্ছে না। এখন আসা যাক রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলেও অভিযোগ আছে। এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারা এ বিষয়ে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এই পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়েই বাংলাদেশ বিপদে আছে। উপরন্তু আরো রোহিঙ্গাদের এদেশে ঢুকিয়ে সমস্যা ভারী করার কী কোনো যৌক্তিকতা আছে? তার চেয়ে কী মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয় যে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আমরা সবাই এখন সরকারের সমালোচনা করছি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেওয়ার জন্য। কোনো সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে কী সমস্যার সঠিক সমাধান সম্ভব? ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ রাখছি- সে সঙ্গে অনুরোধ ওই সব মানবতাবাদী রাষ্ট্রকে যারা লিবিয়ায় সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হামলে পড়েছিলো বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে। তাদের প্রতি আহ্বান আপনারা আবারো একটু কারিশমা দেখান নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জাতিগত মুক্তির জন্য, না হলে মানব সভ্যতা যে আপনাদের ক্ষমা করবে না দ্বিচারিতার জন্য।