মীর কাসেমের ডালিম হোটেল

বি স্যানাল
Published : 18 June 2012, 04:12 AM
Updated : 18 June 2012, 04:12 AM

১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী আল-বদরের চট্টগ্রামের অপারেশন কমান্ডার ছিলেন নয়া দিগন্ত পত্রিকা ও দিগন্ত টেলিভিশনের মালিক মীর কাসেম আলী। যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ছিলেন আলী আহসান মুজাহিদ। জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন কাসেম।

একাত্তরে মীর কাসেমের নেতৃত্বাধীন আল বদর বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকানন টিএন্ডটি অফিসের পিছনের সড়কে একটি হিন্দু পরিবারের মালিকানার 'মহামায়া ভবন' দখল করে তার নাম দেয় ডালিম হোটেল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ডালিম হোটেলেই মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগীসহ বহু মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে বদর বাহিনীর সদস্যরা। চট্টগ্রামের ইংরেজি দৈনিক পিপলস ভিউর নির্বাহী সম্পাদক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী ওই ডালিম হোটেলে নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর আল-বদর বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর ওই ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।

নাসিরুদ্দিনের ভাষায়, "আমাকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলের একটি অন্ধকার কক্ষে অন্য বন্দিদের সঙ্গে চোখ বেঁধে রাখা হয়। প্রচণ্ড মারধর করে আমার কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইতো তারা। ওই হোটেলে সারাক্ষণ বন্দিদের ওপর নির্যাতন আর নির্যাতিতদের চিৎকার-কান্নাকাটি চলতো। এই নির্যাতনের মূল পাণ্ডা ছিলেন মীর কাসেম আলী।"
আরেক নির্যাতিত সাইফুদ্দিন খান বর্ণনায় পাওয়া যায় অমানবিক নির্যাতনের এক চিত্র।

তিনি জানান, ১৯৭১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তৎকালীন স্থানীয় ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হান্নানা বেগমের ভাই মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিনকে এবং নন্দনকানন এলাকার রাহার পুকুর পাড়ের টাইপ মেশিন দোকানের মালিক জীবনকৃষ্ণ শীলকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে বদর বাহিনী। ওই হোটেলে বন্দিদের প্রথম তিন দিন কোনো খাবার না দিয়ে প্রসব খেতে দেওয়া হতো বলেও তার বর্ণনায় উঠে এসেছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই পালিয়ে সৌদি আরব যান ডালিম হোটেলে পরিচালক মীর কাসেম আলী। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে ফেরেন তিনি।