প্রচারণার অভাবে প্রয়োগ বাঁধাগ্রস্ত আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০

শাহানূর ইসলাম সৈকত
Published : 19 Dec 2012, 07:22 PM
Updated : 19 Dec 2012, 07:22 PM

প্রত্যেক বিচারপ্রার্থীর নিজে অথবা পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে চাপমুক্ত পরিবেশে ভয়ভীতির উর্দ্ধে থেকে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান, মানবাধিকার ঘোষণাপত্রসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী স্বীকৃত এসব মানবাধিকার অনস্বীকার্য। কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র রাষ্ট্রে বিচারপ্রার্থীরা অনেক সময় অর্থের অভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না, ফলে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।

এ সকল বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীর ন্যায় বিচায় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণয়ন করে।

কে আবেদন করতে পারে?

আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ এর অধীনে প্রণীত আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০১১ অনুযায়ী নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ সরকারের নিকট হতে আইনগত সহায়তা পাবেন-

(ক) কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ৬০০০ টাকার উর্দ্ধে আয় করতে অক্ষম রমন মুক্তিযোদ্ধা;

(খ) বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি;

(গ) ভি জি ডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা;

(ঘ) পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ নারী বা শিশু;

(ঙ) দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু;

(চ) আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভুমি বরাদ্ধ প্রাপক কোন ব্যক্তি;

(ছ) অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুঃস্থ মহিলা;

(জ) উপার্জনে অক্ষম এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী;

(ঝ) আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি;

(ঞ) বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল;

(ট) আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি;

(ঠ) জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে সুপারিশকৃত কোন ব্যক্তি;

(ড) আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অসচ্ছলতার কারণে স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার মামলা পরিচালনায় অসমর্থ ব্যক্তি।

কোথায় আবেদন করতে হবেঃ

আইন সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন যে কোন ব্যক্তি তার নাম, পুর্ন ঠিকানা এবং সহায়তা চাওয়ার কারণ উল্লেখ করে নির্ধারিত ফরমে বা সাদা কাগজে আবেদন করবেন। তবে যে বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে তা যদি সুপ্রিমকোর্টের কোন বিভাগে বিচারের বিষয় হলে তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় আইনগত সহায়তা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট এবং অন্যান্য আদালতে বিচারের বিষয় হলে জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি বরাবর সরাসরি (ক) জেলা ও দায়রা জজের সভাপতিত্বে গঠিত জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি, অথবা (খ) উপজেলা চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গঠিত উপজেলা আইনগত সহায়তা কমিটি, অথবা (গ) ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গঠিত ইউনিয়ন আইনগত সহায়তা কমিটির নিকট আবেদন করতে পারবেন।

জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি কারো আবেদন অগ্রাহ্য করলে বা বাতিল করলে সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদনকারী জাতীয় আইনগত সহায়তা পরিচালনা বোর্ডের নিকট ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন।

যাদের জন্য এই আইন প্রণীত হয়েছে, তারা এ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কতটুকু উপকৃত হয়েছে? খুব অল্প। কারণ অধিকাংশ জনগণ এ আইন সম্পর্কে যথেষ্ঠ অবগত নন। আবার যারা এ আইন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন তারাও ধোঁয়াশে ধারণার কারণে এ আইনের অধীনে আইন সহায়তা নেন না।

তাই, এ আইন বাস্তবায়নে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র সহ অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরী করতে হবে। আইন, বিধি অন্যান্য তথ্য সম্বলিত ক্ষুদ্র পুস্তিকা ইত্যাদি প্রকাশসহ সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে আইনগত অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখকঃ প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ, ইমেল: saikotbihr@gmail.com