আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাত জোট কি নাগরিক অধিকার খর্ব করতে পারে?

শাহানূর ইসলাম সৈকত
Published : 14 Jan 2015, 04:06 PM
Updated : 14 Jan 2015, 04:06 PM

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-জামাত জোটকে গত ৫ জানুয়ারি ২০১৫ ইং তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা করতে না দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তার দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রাখার প্রতিবাদে গত ৬ মার্চ থেকে বিএনপি-জামাত জোট দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দিয়েছে। সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথে কোন প্রকার যানবাহন চলবে না বলে তারা ঘোষণা দিয়েছে। অবরোধের সমর্থনে তারা দেশের দু'একটি জায়গায় মিছিল সমাবেশ করা ও যানবাহন চলাচলে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সরকারের পুলিশী অ্যাকশনের ভয়ে (নাকি জনসর্থন না থাকায়) দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্বগোপনে গিয়েছে। যদিও বা কাউকে কাউকে কদাচিৎ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তারা বাড়ির ড্রয়িং রমে বসে চানা-মুড়ি গলাধঃকরণ করছে আর টিভিতে অবরোধের চিত্র অবলোকন করছে। অপরদিকে সেসব নেতা আত্বগোপনে আছেন তারা মাঝে মাঝে তোরাবোরা পাহাড়ের গুহা থেকে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবরোধ সফলতা কামনা করছে।

তবে কি অবরোধের কারনে কোন যানবাহন চলাচল করছে না? ঢাকা শহরে যা যানজট তাতে ত মনে হয় না দেশে কোন অবরোধ আছে! আর দেশের অন্যান্য জায়গায়? এত বেশী যানযট না থাকলেও সাভাবিকের তুলনায় একটু কম যানবাহন চলাচল করছে। প্রভাব পড়েছে শুধু আন্তজেলা বাস চলাচলে, চলছে না বললে অত্যুক্তি হবে না। তবে কি আন্তজেলা বাস মালিকরা অবরোধকে সমর্থন করছে? তারা কি বিএনপি-জামাত জোটের ডাকা অবরোধের সমর্থনে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে? যদি তা ভাবি তবে আমি এখনো বোকার স্বর্গে বাস করছি।

গত কয়েক দিনের অবরোধে আমারা কি দেখতে পেয়েছি? বিএনপি জামাত জোটের কিছু সন্ত্রাসী কর্মকান্ড! আন্দোলন নয়! আঁধার অথবা জনসমাগমের মধ্য থেকে হটাত উদয় হয়ে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ বা কয়েকটি যানবাহন ভাংগচুর অথবা পেট্রোল ঢেলে দিয়ে কয়েকটি গাড়ি পোড়ানো। সাথে কিছু মানুষ ( নারী ও শিশু) পুড়িয়ে কয়লা বানানো। এই হচ্ছে বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থুক্কু আন্দোলনের নমুনা। তারই ভয়ে বাস মালিকরা আন্তজেলা জেলা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে, অবরোধকে সমর্থন করে নয়।

অবরোধের নামে বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থুক্কু আন্দোলন কার বিরুদ্ধে? সরকারের? সরকার ত দিব্বি তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। দামী গাড়ি হাঁকিয়ে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা অফিস করছে। তবে কি আমার মত আমজনতার বিরুদ্ধে? হ্যা, বিএনপি জামাত-জোটের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থুক্কু আন্দোলন আমার মত আমজনতার বিরুদ্ধে। যারা কিনা দিন আনি দিন খাই। যাদের কিনা একদিন অফিস না গেলে বেতন কাটা যায়। যাদের কিনা নুন আনতে পান্তা ফুড়ায়। তাইত বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জীবনকে হাতের মুঠোতে নিয়ে ৩ নাম্বার আর ৬ নাম্বার বাসে ঝুলতে ঝুলতে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়, কাজে কর্মে যেতে হয়। কখন যেন ককটেল এর আঘাতে পুঙ্গু হয়ে যাই বা দুচোখ অন্ধ হয়ে যাই অথবা পুড়ে কয়লা হয়ে যাই সেই শঙ্কায় প্রতিটি মুহুর্ত কাটে।

আমার চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর অধিকার বিএনপি জামাত জোটকে কে দিয়েছে? আমি ত দেইনি! আমজনতা, আপনি কি দিয়েছেন? মনে ত হয় না আপনেও দিয়েছেন! তবে কেন বিএনপি-জামাত জোট আজ আমার নাগরিক অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে? ক্ষমতার লোভে?

আমার যেমন অধিকার আছে নির্বিঘ্নে আমার সকল নাগরিক অধিকার ভোগ করার। তেমনি বিএনপি-জামাত জোটেরও অধিকার আছে আন্দোলন করার। যত খুশি পারুক তারা আন্দোলন করুক।কেউ কিছু বলবে না। তবে তা করতে হবে নাগরিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে। আন্দোলনের কারনে যেন একজন মানুষেরও নাগরিক অধিকার খর্ব না হয়। কারন নিজ অধিকার ভোগ করতে গিয়ে যদি অন্যের অধিকার খর্ব হয় তবে তা আর অধিকার থাকে না, তা অপরাধে পরিনত হয়। এইটাই আইন, এইটাই সভ্য সমাজের নিয়ম।

কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট আন্দোলনের নামে যা করছে তা কোনভাবেই তারা তাদের অধিকার ভোগ করছে বলা যায় না। বরং তা সবই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অর্থাৎ অপরাধ বলেই মনে হচ্ছে। কারণ তাদের আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে আমার মত আমজনতার নাগরিক অধিকার শুধু খর্ব নয় ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। তাই বিএনপি-জামাত জোট যদি নাগরিক অধিকারের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাশীল হয় তবে দেশের মালিক আমজনতার সামান্য সমস্যা হয় এমন কাজ করা থেকে তারা এখনি বিরত হবে।