দেশের উন্নয়ন চাই, তবে নিজের বাস্তুভিটা ও অস্তিত্ব বিলীন করে নয়!

শাহানূর ইসলাম সৈকত
Published : 23 April 2016, 12:02 PM
Updated : 23 April 2016, 12:02 PM

নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে ভূমি তলদেশে ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চুনাপাথরের বড় খনি আবিষ্কার হওয়ায় সমগ্র দেশবাসীর ন্যায় আমিও অনেক বেশী আনন্দিত/খুশি হয়েছিলাম। এত বড় প্রাপ্তি, দেশের উন্নয়ন-আনন্দিত/খুশি না হয়ে উপায় আছে? কিন্তু সে আনন্দ/খুশি বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি যখন দেখলাম এই আনন্দ/খুশির পিছনে লুকিয়ে আছে আমিসহ আমার এলাকার হাজারও পরিবারের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ আতঙ্ক। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্ন!

সদ্য আবিষ্কৃত তাজপুর চুনাপাথর খনি থেকে ব্যনিজ্যিকভাবে চুনাপাথর উত্তোলন করলে-শুধুমাত্র বারফালা, তাজপুর, নাজিরপুর, জোলাপাড়া, লক্ষ্মীপুর ও দৌলতপুর-এই ৬টি গ্রামের আমিসহ কমপক্ষে ১,৯৫৩ পরিবারের ৩,৯৬৯ জন মানুষ তাদের বসতবাড়ী, পুকুর, বাগান ও ফসলী জমি থেকে সম্পন্নভাবে উচ্ছেদ হবে। পাশাপাশি বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের ৭,৬৮৯ পরিবারের ২৬,৬৬৪ জন মানুষ আংশিকভাবে বসতবাড়ী, পুকুর, বাগান ও ফসলী জমি থেকে আংশিকভাবে উচ্ছেদ বা কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাছাড়া, খনি খনের ফলে এলাকার ভূমি অবক্ষয় ঘটবে, অরন্য উচ্ছেদ হবে, ভূমি অভ্যন্তরে ক্ষতিকারক ভিসুয়ালের অনুপ্রবেশ ঘটবে, বাতাসে প্রচুর পরিমানে ধুলি কনার সৃষ্টি হবে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিপাবে, বাতাসের আদ্রতা ও বাতাসের গতি কমে যাবে, ক্রমান্বয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে যাবে, উচ্চশব্দের সৃষ্টি হবে, ভুঅভ্যন্তরে কম্পনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, জমির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।

শুধু বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা নয় সমগ্র বদলগাছি উপজেলা, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার মানুষ মারাত্ত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। পরিবেশের নেতিবাচক পরিবর্তনের ফলে উক্ত এলাকার জনগণ কানে কম শোনা, চোখে কম দেখা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেষ্টরেলের মত্রা বৃদ্ধিসহ হৃদরোগ, কিডনীরোগ, ক্যান্সার এর মত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবে।

ভূ-অভ্যন্তরে কম্পনের সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ভেঙ্গে পড়বে, ফসলী জমি জমা ডেবে যাবে, জমির পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাবে। ভূ-পৃষ্টের পানি দূষিত হয়ে পড়বে এবং ভূ-অভ্যন্তরে পানির লেভেল অনেক নিচে নেমে যাবে। ফলে সমগ্র এলাকা পানি সংকটে পতিত হবে।

নিজেদের বাস্তুভিটা ও অস্তিত্ব রক্ষায় কাউকে কোন প্রকার ছাড় প্রদান নয়। প্রয়োজনে বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার

সংগ্রামে লিপ্ত হোন। কারণ অধিকার কেউ কাউকে স্বেচ্ছায় অর্পন করনা, অধিকার নিজেদের অর্জন করতে হয়, নিজেদের ছিনিয়ে নিতে হয়। তাই নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকে সচেতন করুন। বাস্তুভিটা রক্ষা সংগ্রাম কমিটিতে যোগ দিন এবং নিজেদের বাস্তুভিটা ও অস্তিত্ব রক্ষা করুন!