উপবন ট্রেন হঠাৎ ছাত্রদের দখলে, রাতভর যাত্রী ভোগান্তি

চমন হাসান
Published : 30 Oct 2011, 02:26 AM
Updated : 30 Oct 2011, 02:26 AM

ভোর ৪ টা। শ্রীমঙ্গল স্টেশনে বসে লিখছি। স্টেশন মাস্টার মহোদয় দয়ালু মানুষ হবেন। তাঁর বদান্যতায় ভি আই পি ওয়েটিং রুমের চাবিটা আমাদের হাতে । ভ্রমণ সঙ্গী দরজায় তালা লাগিয়ে সোফায় শুয়েছেন, খুব ক্লান্ত বলে হয়ত ঘুমিয়েই পড়েছেন।

ঢাকায় ফিরে কাল ( রবিবার ) সকালে অফিস করব বলে শ্রীমঙ্গল থেকে উপবনের টিকিট কাটা ছিল। রাত ১২টায় স্টেশনে পৌছে শুনি ট্রেন লেট হবে, কেন হবে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে জানা যাচ্ছে না। ভাবলাম বাংলাদেশের ট্রেন! লেট তো হবেই,কোন কারন খুঁজতে যাওয়া ঠিক হবেনা।

সময় যত গড়াচ্ছিল, ততই বিভিন্ন রকম খবর পেতে থাকলাম। ট্রেন নাকি শাবিপ্রবিতে ভর্তি প্ররীক্ষা দিতেআসা ছেলেমেয়েরা দখল করে নিয়েছে! স্টেশন মাস্টার একই কথা শোনালেন একটু অন্যরকম করে- ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ছেলেমেয়েরা কোন ট্রান্সপোর্ট না পেয়ে উপবন ট্রেনে উঠে গেছে ! সিলেট থেকে ছাড়ার পর থেকে বিভিন্ন স্টেশন গুলোতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সাথে ঝামেলা হচ্ছে!

সময় গড়াতে গড়াতে রাত ৩ টা। শুনতে পেলাম ছেলেরা ট্রেনের দরজা সব লাগিয়ে দেয়েছে! আর এদিকে শায়েস্তা গঞ্জের যাত্রীরা নাকি অন্যরকম প্রস্তুতি নিচ্ছে !! ভয়াবহ সব খবর। দিনের বেলা হলে ব্যাপারটা অন্যরকম ফিল করতাম , রাত বলেই বোধহয় আশঙ্কা একটু বেশি হচ্ছে!

অনেক যাত্রী টিকিট ফেরত দিলেন, আমরা অনিশ্চয়তা নিয়ে অপক্ষা করছি । ৩.৩০ এর দিকে ট্রেন আসলো। অবস্থা দেখে আমি হতভম্ব ! কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে , যে যেখানে পারে, বসে, দাঁড়িয়ে, দরজায় পা ঝুলিয়ে, ছাদে, বার্থগুলোর মেঝেতে, করিডরে…কোথায় নেই! আমার টিকিট প্রথম শ্রেনীর বার্থে। দরজা দিয়ে তো উপায়ই নেই, জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখলাম ক্লান্ত কতগুলো মুখ, ব্যাগটাকে বালিশ বানিয়ে কেউ শুয়ে আছে, কেউ দাড়িয়ে!

একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম- " ভাইয়া, কি আবস্থা?'
আমাকে বলল, "এটা আপনার কেবিন?"
আমি বললাম হ্যা !
ছেলেটি করুন মুখে বলল, " না উঠলেই ভাল হয়"।
ভেতরের আবস্থা দেখেই বুঝতে পারছিলাম উঠা সম্ভব নয়! ছেড়ে দিলাম ট্রেন। দু একজন ছাড়া (দরজায় ঝুলে)কেউ উঠতে পারল না !

কেন এমন হল কর্তৃপক্ষ কি জবাব দেবেন? সিলেট থেকেই যেহেতু এই অবস্থা, সিলেটের স্টেশন মাস্টার সাহেব কি পরের স্টেশন গুলোতে আগেই সতর্ক করে দিতে পারলেন না ? অন্তত বাসে চেষ্টা করে দেখ যেত! পরীক্ষা দিতে আসার জন্য বাড়তি চাপ সামাল দিতে বাড়তি বগির ব্যাবস্থা করা কি যেত না ?

ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো যেমন করে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে, আজ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে? সাধারন যাত্রীদের দুর্ভোগের দায় কে নেবে ?
সেলুকাস !! আমিই তো বোকা !! কাকে এসব প্রশ্ন করছি !?