বাংলাদেশের ব্যবচ্ছেদ

রাজু চাকলাদার
Published : 23 Dec 2015, 07:41 PM
Updated : 23 Dec 2015, 07:41 PM

বাংলাদেশ ও সরকারী চাকুরী প্রার্থীর অনুভূতির মৌন ব্যাবচ্ছেদ

বাংলাদেশ স্বপ্নদেখে। স্বাধীনতার চেতনায় ভাস্বর, ১৬ কোটি বাঙালির দেশ, স্বপ্নদেখে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত হবার। দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে এই উন্নয়ন কতটা সম্ভব? কোন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি দুর্নীতিগ্রস্থ হয় তাহলে অধস্তঃন কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ তার সাথে জড়িয়ে পড়াটাই আসলে বাস্তবতা। প্রশাসনিক দুষ্টচক্রে আবর্তিত হবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের টোটাল সিস্টেম। আমি মনেকরি, জাতীয় পর্যায়ে মেধার অবমূল্যায়ন এক ধরণের রাষ্ট্রীয় বোকামী। রাজত্ব করার জন্য যে বীরের জন্ম দাসত্ব করা তাঁর ধাঁতে থাকে না। জাতীয় স্বার্থে মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ জনবলকে যোগ্যতর দায়িত্বে/পদে নিয়োগ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পযার্যের পোষা কোটারী কর্মকর্তা/কর্মচারী দিয়ে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে, এটা বিশ্বাস করা বোকার স্বর্গে বসবাস করার শামিল।

আসুন, একটি ক্যালকুলেশন করি, ক্রিকেট খেলায় খেলোয়াড় দরকার ১১ জন। ১১ জন খেলোয়াড়ের এর ৫৬% হল ৬.১৬ অর্থাৎ, ৬ জন। আপনি চিন্তা করুন, আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলে যদি কোটার ভিত্তিতে ৬ জন এবং মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বাকী ৫ জনকে নিয়ে গঠিত ১১ সদেস্যের বাংলাদেশ জাতীয় দল, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের সাথে খেলতে মাঠে নামে… ফলাফলটা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। বাংলা টিমের গো-হার!

আমাদের সোনার বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬% কোটায় এবং ৪৪% নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। তাও আবার গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত "প্রশ্নপত্র ফাঁস" হল এ সময়ের সবচেয়ে কমন ঘটনা।এটা ছাড়াও ঘুষ, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে লুটকরা হয় মেধাবীদের ৪৪% এর বৃহত্তম অংশ। বর্তমান সময়ের সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যেও এই রূঢ় বাস্তবতা বিদ্যমান। একবার ভাবুন, স্বাধীন বাংলাদেশে মেধায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার হার কতটা নগন্য!?

বাংলাদেশিদের প্রতি পাকিস্তানি বর্বর শোষকরা যে বৈষম্য করতো, সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, সে সরকারই সেরূপ বৈষম্য করে চলেছে মেধাবীদের প্রতি! রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সকল ঘটনা ঘটে লক্ষ্য করুন, তাতে অদক্ষতার ছাপ স্বচ্ছ কাঁচের মত পরিস্কার। আর "অষ্টম পে-স্কেল-২০১৫" হল তার বাস্তব উদাহরণ! সমগ্র দেশ আজ এই একটি ইস্যু নিয়ে টালমাটাল। ক্যাডার-ব্যাংকার-প্রকৌশলী-ডাক্তর-শিক্ষক সবাই আন্দোলনে শামিল হচ্ছে। কিন্তু কেন? এর উত্তর আমাকে দিতে হবে না। গণমাধ্যমে চোখ রাখুন। উত্তর পেয়ে যাবেন। নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে আজ; স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এসেও মেধার চেয়ে কোটার দৌরাত্ম্য বেশী হওয়া কতটা যৌক্তিক?!

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট টিম। বাংলাদেশের ক্রিকেট শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার পেছনের রহস্যটা হল- কেবল "যোগ্য ও দক্ষতার" ভিত্তিতে দল গঠন এবং পরিচালন। বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমে যেমন কোটারি খেলোয়াড় নেই, তেমনি বাংলাদেশে যেদিন কোটারি কর্মকর্তা থাকবে না (অথবা সময়ের বাস্তবতায় কোটারীরা থাকবে অতি নগন্য মাত্রায়) এবং মেধাবীদের প্রাধান্য থাকবে সর্বত্র, সেদিন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে আর্থিক ও সামরিক পরাশক্তিরূপে! এশিয়া মহাদেশের নেতৃত্বে থাকবে ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা আমাদের বাংলাদেশ।