এক
ঘুমজাগানিয়া বন্ধ চোখে একের পর এক হাঁটতে থাকি অতিচেনা আইল ধরে। আমন ধান আর বাতাসের তালে তালে ঘাসফড়িং ধরার প্রতিযোগিতায় আমি সবসময় পিছিয়ে পড়লে তুমি ভীষণ অভিমান করে বরপইরে গিয়ে ও-পাশ ফিরে আনমনে পইরের পাড়ে বেড়ে উঠা দূর্বাঘাস ছিঁড়তে
আমি তখনও অধীর আগ্রহে ঘাসফড়িং এর লেজের দিকে চেয়ে ভাবি-
আর পারা গেল না; হেরে গেলাম আজও…
দুই
বরপইরের কোণাকোণি দৈর্ঘ্য কত হতে পারে? কখনো জানা হয়নি। কখনো অর্ধেক, কখনো একচতুর্থাংশ সাঁতার কেটে স্নানের স্বাদ মিটিয়ে উঠে পড়তাম। আহা! আমাদের বরপইর…। এক সময় সাহসের পাখায় ভরে কোণাইচ্ছা সাঁতার কাটার ভূত তাড়াতে গিয়ে মাঝপথে বার-বার ডুবে যেতে-যেতে ডানদিকে অনেক কষ্টে হাঁফাতে হাঁফাতে, শরীর আর চলে না; শেষ-মেষ কিনারা পেয়েছিলাম
এখন শুধু ঘুমজাগানিয়া দীর্ঘশ্বাস- এপাশ ওপাশ…
তিন
"ইবা কি মরিচ? এক্কু ডুবে ধরিচ"- মরিচ মরিচ খেলার নেশায় চৈত্যের ভর দুপুরে স্কুলের জানালায় কতবার হারিয়ে গেছি।… বই-পত্তর ছুঁড়ে দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দে এখনও হারিয়ে যাই সেই বরপইরে। মরিচ মরিচ খেলতে গিয়ে একসময় পাঁচেকজনের নিচে পড়ে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে পানি খেতে খেতে ভেসে উঠেছিলাম!
আজও ঘুমজাগানিয়া মরিচ খেলায় বার বার শ্বাস বন্ধ হয়ে জেগে উঠি আর হাসি
চার
আজ ইতিহাসের ভয়াবহ দিন। দাদীমা তসবীহ হাতে মলিন চেহারায় ভগবানের নাম জপছেন। বরপইরের ইতিহাসে কেউ ডুবে মরেছে কিংবা কোন অঘটন ঘটেছে, এমন নজির নাই বললেই চলে। দাদীমার মুখে শোনা-কতবার ডুবে মরতে মরতে ভেসে উঠেছি। দাদীমা তাঁর দাদীমার কাছ থেকে শোনা গল্প প্রায় বলতেন; যেদিন পুকুর কাটা শেষ হয়ে ছিল; এলাকার প্রভাবশালী স্বপ্নে দেখলেন "গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী নববধুকে পইরে ডালী দিলেই কারো কোন ক্ষতি করবে না।" তিনি তাই করলেন। সারা গ্রামের লোকজন কেউ সাঁতার কাটছে, কেউ আছড়িয়ে কাপড়-কাচসে, কেউ সাবান ডলে গোসল করছে
আজ ইতিহাসের ভয়াবহ দিন
আজ বরপইরে জাল ফেলা হবে