তাহলে কি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ইলিয়াস আলীর ফিরে আসা?

চশমা
Published : 24 April 2012, 12:17 PM
Updated : 24 April 2012, 12:17 PM

ইলিয়াস আলীকে অপহরণ কিংবা লুকিয়ে রাখা হয়েছে এ দ্বিমুখী অভিযোগের মাঝে এ দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষের উৎকণ্ঠায় সময় পার হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, অপহরনকারী কারা?…সরকারী বাহিনী, নিজদলের কেউ না সাধারণ অপহরণকারীরা !

ঘটনার পরম্পরার সাদামাটা বিচার- বিশ্লেষণে সাধারণ অপহরণকারীদের ভূমিকা নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। নতুবা ইতিমধ্যে তারা তাদের দাবী পেশ করত, তাছাড়া, ইলিয়াস আলীর মত লোককে নিয়ে এরকম অপহরনের নাটক সাধারনত করার কথা না। এবং দেশে এরকম সাহসী সাধারণ অপহরণকারী কোন গ্রুপ আছে বলে এখনো প্রকাশ পায়নি।

এবার আসা যাক, ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্বের ব্যাপারে। অতীত ঘটনা সমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এরকম ক্ষেত্রে গুমের চেয়ে প্রতিপক্ষ স্পটেই কিলিং অপারেশনে পছন্দ করে, এ ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ খুবই কম। কেননা, কোন বুদ্ধিমান প্রতিপক্ষই চাইবে না, ইলিয়াস আলীকে নিয়ে অপহরণের খেলা করতে। তাছাড়া নির্ণীত অপহরণ স্থল রাত ১২টার পরে অনেকটা ফাঁকা থাকার কথা।

আচ্ছা এমনকি সম্ভব, ইলিয়াস আলী নিজকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করতে অন্তর্ধানের নাটক করছেন? যদি তাই হত, তবে অবস্থার বিচারে তার জনপ্রিয়তা ইতিমধ্যে যতখানি বেড়েছে তাতে তার বেরিয়ে আসার কথা।

তাহলে কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিরোধী দল আন্দোলনের ইস্যুর জন্য তাকে লুকিয়ে রেখেছে? কিংবা বিরোধী দলের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকার তার বাহিনী দিয়ে গুম করেছে?

বিরোধী দলের নেতার বর্তমান আন্দোলনের ধারা দেখলে একটা বিষয় স্পষ্ট, বর্তমান সরকারের শেষদিন পর্যন্ত তিনি মেয়াদ পূর্ণ হতে দিতে চান। আর জনগনের যে মতামত ইতিমধ্যে ফুটে উঠেছে, তার ইমেজকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে চান, পাশাপাশি বিশ্বের কাছে নিজদেরকে অনেক সহনশীল হিসাবে পরিচিত করতে চান, কেননা তার দলের সাংগঠনিক কাঠামো এখনো অনেক দূর্বল! আর সরকার তো নিজেরাই নিজেদের পানি ঘোলা করছে প্রতিনিয়ত। সৌদি কূটনীতি, গ্রামীন ব্যাংক আর যুদ্ধাপরাধী নিয়ে সরকারের অবস্থা বহির্বিশ্বে এখন অনেকটা টালমাটাল। দেশে সুরঞ্জিত বাবু, সাগর-রুনি ইস্যু এখনো জ্বলন্ত। সুতরাং নতুন ইস্যু তৈরীর যথোপযুক্ত সময় এখন নয়। খালেদার মত নেত্রী এরকম সিদ্ধান্ত ইলিয়াসকে নিয়ে তৈরী করবেন এটা হিসাবে মানায় না।

আর সরকারী দল স্বাভাবিকভাবেই দেশের এমন পরিস্থিতিতে সরকারের শেষ সময় নতুন কোন তাজা ইস্যু বিরোধীদলের হাতে তুলে দিবেন, এটা পাগলও বিশ্বাস করবেনা। ইতিমধ্যে সরকারী দলের নেতা, মন্ত্রীরা যেভাবে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাতে স্পষ্ট যে, বিষয়টি তারাও জানেনা।

তাহলে কারা এই ঘটনার নেপথ্য..?? সবার মত এ প্রশ্ন আমার মাথায়ও ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে কি দেশে এমন কোন শক্তি কাজ করছে,যারা সম্পূর্ণ বাহিরের ডিকটেশনে পরিচালিত? যাদের ব্যাপারে সরকারের হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ জানিনা। যারা অন্য কোন বাহিনীর নাম, পোষাক পড়ে এরকম কাজগুলো পরিচালনা করছে। তাতে দুটো লাভ, সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে জনগনের মুখোমুখি দাঁড় করান গেল আবার স্বার্থ সিদ্ধি হল….!! একটু চিন্তা করলে ঘটনার পরম্পরায় কিন্তু হিসাব মিলে যায়।

তবে, যে পর্যায়ে কিংবা যে উদ্দেশ্যে ইলিয়াস আলী অপহরণ হোক না কেন, সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। অপহরণকারী যেকোন পক্ষই চাইবে না, এই মূহূর্তে আর ঝামেলা দীর্ঘায়িত করতে। তাই সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে অনাকাঙ্খিত সেই ঘটনার মুখোমুখি দেশবাসী হতে পারে। সেখানে অবশ্যই বতর্মান সরকারের কফিনে আরো একটি পেরেক বসবে। আর আগামীতে বর্তমান বিরোধী দল ক্ষমতায় আসলে পাল্টা জবাব হিসাবে নতুন কোন অনাকাঙ্খিত গুমের মুখোমুখি হবে দেশবাসী।

তাই কোন শর্ত থাকলে, প্রয়োজনে যে কোন শর্তে তাকে ছাড়ানো হবে সরকারী কিংবা বিরোধী উভয় দলের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ।

সকল সংশয় দূর করে একটি সুন্দর সংবাদের প্রত্যাশায়………….অপেক্ষমান গোটা দেশবাসী।