বিয়ে করার পর প্রথম যে ধাক্কাটা খেলাম তা হল বাক স্বাধীনতা হারালাম। স্ত্রীর করা নির্দেশ কথা বলতে হবে শুদ্ধ বাংলায়। অফিসে শুদ্ধ বাংলা চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি কিন্তু বাসায়, এতো অসম্ভব! কিন্তু অসম্ভব কে সম্ভব করাই জলিলের কাজ। তাই আমার ইউনিভার্সিটি র ক্লাসমেট জলিলের কাছে সাহায্য চাইলাম। জলিল না আসলে জলি। জলি আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড এখনো। তো জলিকে আমি বললাম আমার তো ম্যাজিক টুথ পাওডারের মফিজের মত অবস্থা। বাড়িতে তো মুখ খুলতেই পারিনা। মুখ খুললেই আঞ্চলিকতার টান থাকে, আর তোর ভাবি তো রেগে বুম! জলি বলল" তোর তো বাংলা উচ্চারণের কোর্স করতে হবে। কোর্সের নাম হবে "প্রচণ্ড শুদ্ধ বাংলা"।" আমি তো আরও বাকহত। শুদ্ধ বলতে পারি না, প্রচণ্ড শুদ্ধ কিভাবে বলবো? যাই হোক জলির সহায়তায় প্রচণ্ড শুদ্ধ বাংলার চর্চা শুরু করলাম। আঞ্চলিকতা বাদ দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বিধিবাম। বৌয়ের সাথে কথা বলতে গেলেই মফিজ হয়ে যাই। গোঁগোঁ আওয়াজ বের হয় কিন্তু শুদ্ধ বাংলা বের হয়না। তখন মনে হয়, শালা ঘটক, তোরে যদি ঘাচাং কইরা দিতে পারতাম!!!! তো কিছুদিন পর প্রচণ্ড শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে গিয়ে দেখলাম ব্যাপারটা খারাপ না। "র" আছে এমন শব্দ বেশি বলতে হবে এবং "র" কে যদি "ড়" বলা যায় তাইলে তো আপনি ব্যাপক স্মার্ট। প্রচণ্ড শুদ্ধ বাংলা বলতে পাড়েন।
কথায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার কালে কলেজ জীবনের কিছু কথা মনে পড়ে গেলো। তখন ইন্টার পড়ি ঢাকা কলেজে। হলে থাকার সুবাদে ক্লাসে যেতাম দু মাসে একবার। মাঝে মাঝে তাও না। যেদিন কলেজ যেতাম কোন না কোন ঘটনা ঘটতই। অনেকদিন পর একদিন গেলাম বাংলা ক্লাসে। আমাদের বাংলা বিভাগে নাকি খুব সুন্দরী এক মিস এসেছে (মুখ্য উদ্দেশ্য) এবং সে নাকি খুব ভালো ক্লাস নেয় (গৌণ উদ্দেশ্য) এই শুনে। পোলাপান নাকি ইদানিং তার বাড়িতে লাইন দিয়ে পড়তে যায়। সেদিন আমাদের ক্লাস ছিল গ্যালারিতে। আমাদের গ্রপ সব সময় শেষেই বসতাম। তো মিস এর ভোকাল খুব বেশি জোরে ছিল না। কিছুক্ষণ ক্লাস চলার পর আমাদের বন্ধু বাটুল (ঊচ্চতায় খাটো), উঠে দাড়িয়ে বলল, মিস শোনা যায়না। মিস তাকিয়ে ওকে দেখল, তারপর বলল, মনোযোগ দিয়ে চেষ্টা করো শোনা যাবে। ইইই তে রি!!! বাটুল বসার পর বললাম মনোযোগ দিয়ে চেষ্টা করো, সোনা যাবে। এরপর থেকে কিছু হলেই বলতাম, বাটুল মনোযোগ। বাটুল এখন মনোযোগ দিয়ে রুগী দেখে প্রতিদিন।
ঢাকা কলেজের আরেকটি কথা বলি। কলেজের ভিতরে বড় করে লিখা "KNOW THYSELF". নিজেকে জানো। গ্রিক মিথ। একদিন রাতে নীলক্ষেত থেকে পরোটা খেয়ে ফিরছি। আমার রুমমেট দাড়িয়ে পড়লো লিখাটির সামনে। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বলল, মিথ-টা যদি চীন থেকে আসতো আর চু মানে যদি হত জানা, তাইলে কি হইত! ও এম জি!! বলে কি! রাত বাজে তখন তিনটা। আমি ভাবলাম গ্রিক দেবতারা যদি এখন উইঠা ওরে একটা থাবড়া মারে, আমি তো ওর লগেই আছি, নগদ আমারও একটা খাওন লাগবো।
আরেকটা ছোট অভিজ্ঞতার কথা বলি। সিলেটে গেলাম থাকতে। বাবার বদলি। নতুন বাসায় উঠার দ্বিতীয় দিনে মা বলল, একটা পান নিয়ে আয়। আমি বীরদর্পে পান আনতে চললাম। দোকানদার বলল, কাঁচা গুয়া না পাকা গুয়া। পুরাই তাস্কি! বলে কি?! সিলেটে আসার আগে এক বড় ভাই সাবধান করেছিলো, ওরা কিন্তু ছেলেদের দিকে বদ নজরে তাকায়। সাবধানে থাকবি। আমি তখন পোলাপান। স্বাস্থ্য মাসাল্লাহ। আমি তো দোকানদারের কথা শুইনা থ! শালা আমার গুয়া কাঁচা না পাকা, মানে কি? প্রথম দিন এই অবস্থা হইলে এই পাড়ায় থাকুম ক্যামনে! পয়লা দিনই যদি দোকানদার গুয়ার খবর চায়! আমি তো ভয়ে ঘামতাছি। ছেলে হইয়া কি ভার্জিনিটি হারামু! ওই সময় দোকানদার আবার কইল, কি পানে কাঁচা গুয়া দিমু না শুকনা গুয়া। দেখি দোকানদারের হাতে সুপারি। কাঁচা আর শুকনা। আহ! মন থেকে সেদিন বড় এক পাথর নাইমা গেছিল ।
বউ কি আমার সাধে রাগে। আমি আবার প্রচণ্ড শুদ্ধ বাংলাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছি। আমি এখনো উচ্চারণ শিখছি। সেই শেখার অভিজ্ঞতা না হয় আবার বলবো, সাথে বাংলা ভাষার প্রয়োগের কিছু জটিলতা।