দ্য ট্যাক্সি ড্রাইভার হু লাভড উইমেন

দানিয়েল
Published : 22 Jan 2012, 05:30 PM
Updated : 22 Jan 2012, 05:30 PM

রবার্ট ডি নিরোকে চিনতে সময় লাগলো। একেবারে ইয়াং। গর্জিয়াস লুকিং। মধ্যবয়সী যে নিরোকে দেখে আমরা এ সময়ের ছেলেমেয়েরা অভ্যস্ত, তারা এই পূর্বচেহারা দেখে চমক পাবেন। ডি-নিরো ওয়ার ভেটেরান। ভিয়েতনামে মেরিন হিসেবে অংশ নিতে হয়েছিল। দেশে ফিরে ট্যাক্সি ড্রাইভিং করছেন। ভাগ্যিস, ওখানে ট্যাক্সি ড্রাইভাররাও মানুষ। নইলে তো বলেই ফেলেছিলাম- হোয়াট আ সোসাইটি।

উফস! যাহ! বলতে ভুলেই গেছি- ট্যাক্সি ড্রাইভার মুভির গল্প করছি। বহু মানুষ অলরেডি দেখে ফেলেছেন ছবিটা। তাই নামটা শুরুতে বলাটা ঠিক দরকারী মনে হলো না।

গল্পটা…
সত্যি বলতে, গল্পটা জুতসই মনে হয়নি। ওয়ার ভেটেরান একজন দেশে ফিরে ট্যাক্সি চালাচ্ছেন। একা, ব্যাচেলর। সুন্দরী মেয়েদের ব্যাপারে আগ্রহ আছে। রাতে ঘুম আসে না। গভীর রাতে সিনেমা দেখেন। বয়স্কদের সিনেমা। ট্যাক্সির ড্রাইভিং সিটে বসে রিয়ার ভিউয়ে যাত্রী পর্যবেক্ষণ করেন। অভ্যাস আর কি।

এটুকু ব্যাকগ্রাউন্ড। গল্পটার আসল শুরু হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার ক্যাম্পে। এক প্রার্থীর প্রচার ক্যাম্পে সুন্দরীকে দেখে পিছু নিলেন ডি-নিরো। কয়েকবার দূর থেকে দেখার পর সামনাসামনি। কথা হলো, অ্যাপেল পাই আর কফি খাওয়া হলো। দ্বিতীয় সাক্ষাতেই মিসটেক। সিনেমা দেখার অফার। জোরাজুরিতে মেয়েটা রাজি হলেও অঘটন ঘটলো অন্যখানে। ছবিটা ছিল অ্যাডাল্ট। মাঝখানেই হল ছেড়ে বেরিয়ে আসলো মেয়েটা। সম্পর্ক কাট-অফ। হাহাহাহাহা।

তারপর। তারপর, গল্পটা সংক্ষেপ করা যাক। আরেকটি মেয়ে, কমবয়সী। তাকে বাঁচাতে একাকি একটা সশস্ত্র গ্যাংয়ের মুখোমুখি হলেন নিরো। ফলাফল হিরো। শেষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রচারযন্ত্রী মেয়েটার ভুল ভেঙেছিল বলে আমরা বুঝতে পারি। গল্প শেষ।

প্রেম
ডি-নিরোর শক্তির উৎস প্রেম। নারীর প্রতি প্রেম। সুন্দরী হওয়াটা আবশ্যক। একলা থাকায় ডানেবামে মেয়ে খুঁজেছেন সবসময়। সিনেমা হলের লবিতে পপকর্ন-পেপসি কেনার ফাঁকে দোকানি মেয়েটার নাম জানার চেষ্টা দিয়ে শুরু। পাত্তা মিললো না সেখানে। পরে দেখা গেলো নির্বাচনী ক্যাম্পের বাইরে ট্যাক্সিতে বসে মেয়ে দেখা হচ্ছে। কিছুটা এগোলো। কিন্তু কাজ হলো না। ডি নিরো ফ্রাসট্রেটেড।

যাত্রীদের নিয়ে প্রায়ই যেসব রাস্তায় চলতেন ডি-নিরো, দু-পাশে তার ললনাদের ভিড়। ব্রোথেল। এদের একজনকে চোখে পড়ে ডি-নিরোর। অল্পবয়সী। সুন্দরী অবশ্যই। তার সাথে দেখা করেন নিরো। কাস্টমার হিসেবে। এ জীবন থেকে উদ্ধার করতে চান। কিন্তু 'এ রাজচক্র। ইহার মর্মভেদ করা বড়ই কঠিন।'

অস্ত্রশস্ত্র কিনে ব্যায়াম করে একটা অভ্যুত্থানের প্রস্ততি নেন নিরো। অভিযান হলো। মেয়েটাকে মুক্ত করে হিরো বনলেন নিরো। বাঙালির চোখকে ফাঁকি দেবে কি করে বালক? বোঝা যায়, এখানেও মেয়েটার প্রতি ভালবাসাই চালিকাশক্তি। প্রেম বলাটা অবশ্য গ্রামাটিক্যালি ভুল হবে।

ও হ্যাঁ! হিরো হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পরেও কিন্তু বেটসি'র সঙ্গে দেখা হয়েছিল নিরোর। বেটসি কে চিনলেন না? নির্বাচনী অফিসের মেয়েটা। নিরোর চোখে- 'দ্য মোস্ট বিউটিফুল গার্ল আই হ্যাভ এভার সিন।'

সমাজ
প্রেম পর্ব শেষ। এবারে সমাজ পর্ব। ট্যাক্সি ড্রাইভার ছবিটি নির্মিত হয়েছে ১৯৭৬-এ। ছবির ঘটনাকাল পোস্ট ভিয়েতনাম যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ৭৬-এর এপ্রিলে। সো, ছবির ঘটনাকালটাও সমসাময়িক। ছবিতে প্রেম ছাড়াও কয়েকটা জিনিস মুফতে পেলাম আমরা।

যুদ্ধ ও যোদ্ধা। ফ্রাসট্রেশান শুরু ইরাকের মেরিন সেনাদের একার সম্পত্তি না। আমরা যারা এরিক মারিয়া রিমার্কের ট্রিলজি (অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, স্বপ্ন-মৃত্যু ভালবাসা, দ্য রোড ব্যাক) পড়েছি, তারা জানি ফ্রাসট্রেশান হলো সেনাদের জন্য যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী উত্তরাধীকার। ডি-নিরো তা থেকে বঞ্চিত হননি। একটা সুস্থ, ঋযু, আকর্ষণীয় মানুষ। খামাখাই উদ্দেশ্যহীন অর্থহীনতাই ভুগছেন। ছবির মূল উপজীব্য নয়, বাট কেউ চাইলে মেসেজটা নিতে পারেন।

ছিয়াত্তরের রাতের আমেরিকা দেখে অদ্ভুত লাগে। ব্রোথেল এরিয়াতে যেভাবে মেয়েরা ঘুরছে, সেটা চরম শেকড়হীন সমাজের ইঙ্গিত দেয়। এক ভদ্রলোক ডি-নিরোর ট্যাক্সিতে এক বাড়ির সামনে দাঁড়ালেন। নিরোকে বললেন, পাশের বিল্ডিংয়ের জানালায় কোন মেয়েকে দেখা যায়। নিরো তাকালেন। হ্যা, দেখা যায়। শি ইজ মাই ওয়াইফ, বাট দ্যাটজ নট মাই এপার্টমেন্ট। আই হ্যাভ ডিসাইডেড টু কিল হার। এই ভদ্রলোকের কাছে নিজস্ব রিভলভার আছে। ম্যাগনাম পয়েন্ট টু-টু।

ডি-নিরোর সাথে বেটসি'র আচরণ বিশ্লেষণে মনে হয়, (ইফ সি রিয়্যালি রিপ্রেজেন্ট দ্যাট টাইম), সে সময়ের মার্কিন মেয়েদের বাঙালি স্বভাব প্রবল ছিল। সহজেই পটে যাওয়া। মান-অভিমান। সম্পর্কোচ্ছেদ। বাট সেক্স এণ্ড দ্যা সিটিজ-এর যুগে সেটার যে আর ছিটেফোটা অবশিষ্ট নেই, সে ব্যাপারে বাজি ধরা যায়।

ও হ্যাঁ। নির্বাচনী ক্যাম্পিং আর প্রচারণার মেকানিজম অনেকটা বর্তমানের মতোই। কম্পেয়ারিং টু দ্যাট অফ ওবামা। ওদের ডেমোক্র্যাটিক প্র্যাকটিসগুলো পুরনো মাইরি। এমনিতে এতদূর আসেনি!

কারিগরি টুকিটাকি
ছবির মেকিং অসাধারণ। আমার হিসেবে চরম মেদহীন। ক্যামেরার কাজ ক্লাসিক পর্যায়ের। ক্যামেরা লাইটিং এডিটিং- এ তিনটা জায়গা ঝকঝকে পরিস্কার। নিখুঁত প্রায়। ছিয়াত্তর খুব বেশি পেছনে নয়। তবু ওই সময়ের এরকম ঝকমকে পরিপাটি মেকিং দেখলে কলিজা শীতল হয়ে যায়। আর এতটাই মেদহীন, যে একটি শটও মনে হয় এদিক ওদিক করা যাবে না। এই জায়গাটাতেই অনন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছবিটা।

গল্পে দুর্বলতা আছে। ডি-নিরোর দিনরাত্রি ঘিরেই ছবির গল্প এগোতে থাকে। ছবির মেকিংয়ের কারণেই হোক, গল্পের পরিণতির যতটা আগ্রহ তৈরি হয়, ততটাই হতাশ করে কালমিনেশানটা। বিশ কেজি চালের জন্য তিনঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তিন কেজি নিয়ে বিদায় নেয়ার মতো। ফিল্মটার বড় ত্রুটি সম্ভবত এটাই।

অভিনয় ভাল। তবে আহামরি নয়। হয়তো ছবির জন্য সেটা জরুরি ছিল না। ডি-নিরো ছাড়া আর কারো অভিনয়ের কথা ছবিটা জোর করে মনে করাতে পারছে না। তবে অবশ্যই বিলো-স্ট্যান্ডার্ডও কেউ নেই। হলিউডের ছবিতে সেটা থাকেও না বলা যায়।

ট্যাক্সি ড্রাইভার চারটি অস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। মুভি ডেটাবেজে রেটিং ৮.৫ আউট অব ১০। আরে ভাই সব বলে দিলে মুভি দেখার আগ্রহ থাকবে নাকি? যান, ছবি দেখেন গিয়া। আজাইরা প্যাচাল বন্ধ।