মহামান্য আদালতের স্ব – প্রণোদিতা নিয়ে স্ব- প্রণোদিত কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই ?

মাসুদ খানমাসুদ খান
Published : 28 May 2012, 08:57 AM
Updated : 28 May 2012, 08:57 AM

পৃথিবীর সব দেশে আইন আদালতকে সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয় । কিন্তু এ সহজ এবং চিরন্তন সত্য কথাটি আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারছি না একজন বাংলাদেশি / বাঙালি হিসেবে । কিন্তু কেন যে কথাটি সর্বজনবিদিত সে কথাটি কেন আমাদের বেলায় হবে না ?

আদালত-এর বিচারপতিদের বা হাকিমদের বলা যায় একটি জাতির বিবেক । জাতির যে কোন সংকটময় মুহূর্তে সঠিক বার্তা নিয়ে এসে উনারা আমাদেরকে পথ বাতলে দেন । কাঙ্খিত সমাধান দেন। এ নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত ।

দেশ ভাগের আগে বা পরে যে কোন সময়ের বিবেচনায় আদালত প্রায় সময় নিরপেক্ষ ছিল । কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আমাদের সে গর্বের ফানুস অনেকটা ম্রিয়মান হওয়ার পথে । যে কোন সময় ফানুসের আগুন নিভে যাবে , আর নিভে যাওয়া মানে বলা যায় সামনে অবারিত অন্ধকার । অনেক আশা ভরসার একটি স্থান এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই অবশিষ্ট আশা টুকুও যে হারাবে তা চোখ বুজেই বলা যায় । এ দুরবস্থার জন্য দায়ী কে ? কে অনবরত সর্বনাশ করে যাচ্ছে পবিত্র আদলতের ? এ কথা যখন আসবে ঠিক তখনি মনে পরবে যে সরকার আসে তাদের পোষা পাখিদের নিয়োগ পাওয়ার কথা , মনে পরবে জাল সনদ নিয়েও হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়া , মনে পরবে, না আর মনে করবো না । তাহলে কি ভুলে যাব ?

আমরা হরদম দেখে যাচ্ছি আদলতে দলীয় ক্যাডাররা নিয়োগ পাচ্ছে , আনুগত্যের পরীক্ষায় কার পাশ মার্ক বেশি তা দেখা হচ্ছে , আবার এটাও দেখা হচ্ছে গোপালগঞ্জ না ফেনী অথবা বগুড়ার । এগুলি এখন বাংলাদেশের হাই কমান্ড জেলা! কিন্তু আমাদের মহা জ্ঞানী আইনমন্ত্রীরা বলে উঠবেন নির্বাহী বিভাগ থেকে এখন বিচার বিভাগ পৃথক , এখন আর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন নেই । এ কথা শুনলে আমাদের হয় ফেল ফেল করে উনার মুখের দিকে থাকিয়ে থাকতে হবে আর না হলে অবিরাম মিথ্যা বলার জন্য সাধুবাদ জানাতে হবে । এ ছাড়া আর কি বা করার আছে আমাদের ?

আদালতের এখতিয়ার কোথায় কোথায় আছে তার কোন প্রশ্ন তোলা মনে হয় অবান্তর হবে না ! তবে যেখানে ইচ্ছা সেখানে নাক না গলানো উচিত হবে বলে মনে করি । আদলত রাষ্ট্রযন্ত্রের কোন ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবে এটাই কাম্য , কিন্তু সরকারের আজ্ঞাবহ হওয়ার জন্য কে হাতে পায়ে ধরেছে ?

আমরা দেখছি আদালত এখন সরকার গুলোর ছায়া হিসেবে কাজ করছে । সরকারের নানান অনিয়ম গুলোকে বৈধতা দিচ্ছে পারলে নিজ উদ্যোগে । এটা একটি জাতির জন্য অবমাননাকর ! কারন আমরা আদলতের কাছে নীতি কথা যেমন আশা করি ঠিক তেমনি আশা করি জাতির ক্রান্তিলগ্নে তাদের ভুমিকা শেয়াল এর মতন হবে না । সর্বদায় সাদা'র পক্ষে থাকুক এটাই আমরা চাই । কিন্তু অন্য দশটি চাওয়ার মত এটাও কি চাওয়ার মধ্যেই সার!

বলছিলাম আদালতের ভুমিকার কথা , কিন্তু যেখানে গড়াতেই অনিয়ম সেখানে ভাল কিছু আশা করাটাই মুর্খোমি হবে মনে হচ্ছে । আজকে আমাদের আইন আদালতে রাজনীতির যে উর্বর চর্চা শুরু হয়েছে তা দেখে মনে হয় উনারা আইনের ধারা নিয়ে চিন্তা করছেন না , চিন্তা করছেন নেতা নেত্রীদের'কে কিভাবে খুশি করা যায় । তাহলেই যে পরে এটর্নি জেনারেল বলি আর পি. পি. বলি সব পথই খোলা থাকবে । অথাবা সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন অথবা বার সমিতির লোভনীয় পদ তো আছেই !

আমাদের আদলত সামরিক শাসকদের শপথ পড়ায় , তখন উনারা না বলতে পারেন না । কখন যে কাঁধের উপর বন্দুক ঝুলাবে তার কোন গ্যারান্টি নেই , কিন্তু ১৬ কোটি জনগণ এর উপর বন্দুক ঝুলাতে উনাদের কাঁধ কাঁপে না । কিন্তু শপথ নেওয়ার সময় উনার যে বলেন কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না , সর্বদা দেশের ভালো কে গুরুত্ব দিবেন , এ কথা গুলু এখন বিষ মাখা পানি বলে মনে হয় । উনাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় শপথ আর অন্য দশ জনের মত ।

কিন্তু এ কথাও মানতে মানছি সব বিচারিক আদালত খারাপ বা সব বেঞ্চের আইনজীবীরা দুর্নীতিবাজ । তবে প্রায় যে দুই নাম্বার এ কথা বুকে হাত রেখেই বলা যায় । আদালত যে কি জিনিস শুধু মাত্র তারাই বুজে যারা মামলার ঘানি টানতে টানতে নিজের সব উপার্জন ক্ষয় করে ফেলেছেন , এটা তারাই জানে যারা বছরের পর বছর জুড়ে মামলা চালাচ্ছেন তারা । এখানে প্রতি দিন এর মামলা এর কার্যতালিকা যখন দেখে তখন ই বোঝা যায় অন্তরালে কি ঘটেছে । অমুক অই বেঞ্চে যাবেন না , তমুক অই বেঞ্চে গেলে সঠিক বিচার পাবেন না! ঐ বেঞ্চ বিএনপির, ঐ বেঞ্চ আওয়ামী, ঐ বেঞ্চ জামাতের …! এ ধারনা থেকেই বোজা যায় আদালতের হাড়ির খবর !

আমরা আদালত'কে কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে আর দেখবো না এটা যে কখন বাস্তবে রূপান্তরিত হবে তা আল্লাহ মালুম । আমরা কখন দেখবো যে আদালত সরকারের নীতি বিরুদ্ধ কাজ গুলুকে নিজ উদ্যোগে সমর্থন করে বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করে রুল জারি করবে না ।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর- রুনি হত্যাকাণ্ডের নিয়ে সরকারকে সমর্থন করলো আদালত। কিন্তু কেন ? আদালত কি শুধু মাত্র সরকারের জন্য ? এখানে সাধরন মানুষের মতামতের কোন মূল্য নেই ? আদালত শুধু মাত্র সরকার কেই সময় দিবে নানান অনিয়ম গুলোকে বৈধতা করে নিতে , কেন আদালতের আদেশ গুলো সরকার বাস্তবায়ন করে না । কেন আমজনতার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নিয়ে আদালত চুপ থাকে ? হাটহাজারীতে ঘটা দুষ্কর্ম নিয়ে আদালত এর রুল যেমন আশাবাদী করেছে আমাদেরকে আবার ঠিক তেমনি বোরখা নিয়ে নির্লিপ্ত থাকা অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং সাম্প্রতিক একজন বৃদ্ধ শিক্ষক যিনি আবার মুক্তিযুদ্ধা উনাকে যে ভাবে পুলিশ পেটাল, স্মারকলিপি দিতে গিয়ে মানুষ গড়ার কারিগররা যেভাবে ছিঁচকে চোরের মত, দাগি আসামির মত নাজেহাল হল তাতেও আদালত নীরব ? কারন অই শিক্ষক সরকারি দলের কেও না হওক না উনি দেশের সূর্য সন্তান তাতে কি হয়েছে ? শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন উনারা অভিযোগ নিয়ে তাও আবার একটা যৎসামান্য কাগজে করে নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে , যে গুলু লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বড় বড় হরফে লিখা ছিল কিন্তু ক্ষমতার স্বাদে অন্ধ হয়ে তা আজ বেমালুম চেপে যাচ্ছে এরা । আমরা চাই হয় আদালত থেকে সমস্থ রীতি নীতি বিরুদ্ধ কাজের সমালোচনা করা হবে আর তা করতে না পারলে দয়া করে গদি ছাড়ুন । এ ভাবে কাজ চালানোর কোন মানেই হয় না ।

এখানে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সাধরন জনগণের মামলার কথাটা আর উল্লেখ করলাম না কিন্তু কোর্ট এর রায়'কে বিকৃত করে যারা সব দোষ আদালতের উপর চাপাচ্ছে তাদের উপর কোন সমন জারি হচ্ছে না ? কেন উনাদের চালু মুখ অচল হয়ে গেল ? আদালতের রায় মতে আরও দুই মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার কথা বলা হয়েছে এও বলা হয়েছে যে এ সময়ের মধ্যে সবাই বসে ঠিক করতে হবে আগামী নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে । কিন্তু এখন অনেকের মুখে শুনি যে আদালত কর্তৃক বাতিল হয়েছে এ পদ্ধতি । কই আমরা দেখলাম না উনাদের প্রতি রুল জারি করতে । তাহলে আমরা কি ধরে নিবো __

" আদালত শক্তের ভক্ত নরমের জম "

যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমাদের মানে আমজনতার সর্বশেষ স্থানটিও কক্ষ পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল ।

আমরা আশা করবো আদালত যখন সমালোচনা করবেন তখন কে প্রধানমন্ত্রী অথবা কে বিরোধী দলের নেত্রী তা বিবেচনায় আনবেন না , বিবেচনায় আনবেন কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা ।

এখানে মাহমুদুর রহমান-এর মামলাটির কথা উল্লেখ না করাই ভাল , কারন আদালত এর সেই সময়কার অপ্রিয় কথাটি মনে রাখার মত কঠিন কাজটি থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইলেও পারছি না ।