অনলাইন সংবাদপত্রের জন্য খসড়া নীতিমালা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

দেলোয়ার জাহিদ
Published : 28 Sept 2012, 06:35 AM
Updated : 28 Sept 2012, 06:35 AM

অনলাইন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রতিনিধিদের এক সভায় সম্প্রতি অনলাইন গণমাধ্যম নিয়ে প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালা নিয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচক সম্পাদকবৃন্দ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের কন্ঠে এ প্রস্তাবিত অনলাইন নীতিমালাটি নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা প্রকাশ পেয়েছে। এ নীতিমালা যেন অনলাইন সাংবাদিকতার পথে কোন অযাচিত হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণের বিষয় না হয়ে দাড়ায় এ সম্পর্কে সকলেই একমত হন এবং সরকারের একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন।

এ ধরনের সময়োপযোগি একটি বৈঠকের আয়োজন এবং সকলকে সংগঠিত হবার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ সহ অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

অতি জনপ্রিয় ও বিকাশমান এ যুগের অনলাইন গণমাধ্যম এবং নতুন ধারার এ সাংবাদিকতা । এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সরকারকে অনেক গুছালো ও সুচিন্তিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। অনলাইন গণমাধ্যমের বিকাশে অবশ্যই অনলাইনবান্ধব নীতিমালার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। তবে এ খাতটিকে আশু শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে । তাহলেই হাজারো শিক্ষিত তরুন ও মেধাবীদের জন্য কর্মসংস্থানের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হবে। অনলাইন গণমাধ্যমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকারের সাথে নিয়মিত সংলাপ ও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন সুচিন্তিত কিছু সুপারিশমালার আলোকে এ খাতে সরকারী সহযোগিতা বৃদ্ধি করা ও অনলাইনবান্ধব কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা, যার লক্ষ্য হবে বিকাশ, বিনাশ নয়।

জনপ্রিয়তার শীর্ষে এখন দেশের অনলাইন গণমাধ্যম।এমনকি প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলোর ও রয়েছে অনলাইন সংস্করণ এছাড়াও প্রায় সকল গণমাধ্যমেরই কোন না কোন ভাবে অনলাইন নির্ভরতা রয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে এ নতুন ধারার সাংবাদিকতা। সরকার থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক, সাংগঠনিক কার্যক্রম, কলা, বিনোদন,সম্পাদনা, ফটো জার্নালিজম, ডকুমেন্টারী তৈরী সহ অনেক কিছুই এখন নানা ধারার সাংবাদিকতার আওতায়।

জনগনের অংশ গ্রহনে ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ, প্রতিবেদন পেশ, বিশ্লেষণ এবং এর উপর মতামত প্রকাশকে আমরা সিটিজেন জার্নালিজম বলি। কমিউনিটি জার্নালিজম ও সিভিক জার্নালিজম নিয়ে এখন মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। সিটিজেন জার্নালিজমে পেশার প্রশিক্ষন ছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কেউ এতে অংশপ্রদান করার সুযোগ পায়। তবে সমালোচকেরা এর মান, স্বচ্ছতা অনিয়ন্ত্রনতা ও অপেশাদারীত্বের বিষয় নিয়ে নানাহ প্রশ্ন তুলেন।

কমিউনিটি জার্নালিজম বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়ে স্থানীয় সরকার, পরিবেশ, অর্থ, সংস্কৃতি, শহর, উপশহর, শিক্ষা, বিনোদন, খেলাধুলা, আঞ্চলিক, ও আন্তর্জাতিক খবরাদি প্রকাশ করে কমিউনিটি জার্নালগুলো। এ মাধ্যমগুলোর সাংবাদিকেরা পেশাদার সিটিজেন জার্নালিষ্টদের মতো অপেশাদার নন। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জীবনের অংশ এ কমিউনিটি গণমাধ্যমগুলোতে সরকারের পৃষ্টপোষকতা উল্লেখযোগ্য।

কলাবরেটিভ জার্নালিজম-জার্নালিজমের একটি সমন্বিত ক্ষেত্র বলা চলে, এতে এক বা একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠনের দেয়া তথ্যের সংযোজন করে কোন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ ধারাটি পেশাদার ও অপেশাদার উভয় শ্রেনীর সাংবাদিকেরা ব্যবহার করে থাকেন।

বর্তমানে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো মূলধারার সংবাদপত্রগুলোর সাথে কোন প্রতিযোগি বা প্রতিদ্ধন্ধী নয় বরং একে অপরের সহযোগি। অনলাইনে ইন্টারেক্টিভ জার্নালিজম বা ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাংবাদিকতা দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে। প্রতিবেদনের উপর লেখক, পাঠক ও জনগনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশের সুযোগ থাকায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

জয়শে ওয়াই এম যে ৫টি পাবলিক জার্নালিজমের কথা বলেছেন, এগুলোঃ ঐতিহ্যবাহী জার্নালিজম, পাবলিক জার্নালিজম, ইন্টারেক্টিভ জার্নালিজম , পার্টিসিপেটরী (অংশগ্রহণকারীত্ব মূলক)জার্নালিজম ও সিটিজেন জার্নালিজম। স্বতন্ত্র কন্ট্রিবিউটর বা ফ্রিল্যান্সারদের ও আজকাল এ পেশায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। জার্নালিজম পেশার অন্যান্য ক্ষেত্র যেমনঃ পাবলিসিং, ফটো জার্নালিজম, স্ক্রীন রাইটিং, কপি রাইটিং, গ্রাফিক ও ওয়েব ডিজাইন, ভিডিও প্রোডাকশন ইত্যাদি। ঐতিহ্যবাহী জার্নালিজম ছাড়া অন্য এ ৪ ধারার সাংবাদিকতায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই জনগনের ব্যাপক অংশগ্রহন রয়েছে যেগুলো মূলতঃ অনলাইন। সুতরাং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সক্রিয় সহযোগি দেশের অনলাইন গণমাধ্যমগুলো তা নির্দ্বিধায় বলা চলে। এ ক্ষেত্রটির পরিপূর্ণ বিকাশই সরকারের সফলতা।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কানাডার ডিজিটালজার্নাল়কম একটি গ্লোবাল ডিজিটাল মিডিয়া হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ৪০ হাজারের অধিক পেশাজীবি সিটিজেন জার্নালিষ্ট, ফটোগ্রাফার, স্বতন্ত্র কন্ট্রিবিউটর বা ফ্রিল্যান্সার, ও ব্লগার সহ ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে কাজ করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে এর যাত্রা শুরু । ২০০৬ সাল থেকে এর সুনাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিন প্রায় ১০০টি আর্টিক্যাল আপলোড করা হয়। কানাডার প্রচলিত আইন ও নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে এ অনলাইন গণমাধ্যমটি।

শুধুমাত্র অনলাইনবান্ধব নীতিমালা হলেই হবে না বরং এ শিল্পের পরিপূর্ণ বিকাশে সরকারকে সহায়ক হতে হবে। এ মাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ও অবশ্যই দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক ও সর্বাত্মক সহযোগিতার মনোভাব ও পদক্ষেপ প্রত্যাশা আমাদের জন্য খুবই সঙ্গত।

লেখকঃ দেলোয়ার জাহিদ, হিউমান রাইটস এডভোকেট, সাংবাদিক, জাতীয় সংবাদপত্রে নিয়মিত প্রবন্ধ, ফিচার ও স্তম্ভ লেখক। সাবেক সভাপতি,জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা কেন্দ্রীয় কমিটি, কুমিল্লা প্রেসক্লাব ও কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে কানাডা'র এডমোনটন সিটি নিবাসী।
ফোনঃ ১ (৭৮০) ২০০ ৩৫৯২