কানাডার উপকূল থেকে উপকূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

দেলোয়ার জাহিদ
Published : 18 April 2016, 10:04 PM
Updated : 18 April 2016, 10:04 PM

ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিপরীতে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন পয়লা বৈশাখ- বাংলা নববর্ষ! একে বরণ করে নিতে দেশে বিদেশে নানাহ আয়োজন। হৃদয়ের উচ্ছাস দিয়ে স্নিগ্ধ, নির্মল আনন্দঘন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের উৎসব বাংলা নববর্ষ । বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্বকে জানান দেয়ার একটি উৎসব যা ছড়িয়ে গেছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে মহাশহরে, স্বদেশ থেকে বিদেশে.
বৈশাখী উদযাপনের অন্যতম আকর্ষণ এবার ভিন্নমাত্রা লাভ করেছে কানাডায় তথা দক্ষিন আমেরিকায়। কতগুলো প্রশংসনীয় উদ্যোগ প্রবাসে এ উৎসবকে নতুন এক সাংস্কৃতিক মেরুকরনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী বাঙালিরা সাড়ম্বরে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ দিনটিকে পালন করতে শুরু করেছে। নববর্ষকে হৃদয় দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা ।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন থেমে নেই শুধু আনন্দ উৎসবে। বাঙালি সংস্কৃতিনির্ভর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরার যেকোন সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন প্রবাসীরা। এবারের বৈশাখী উৎসব অনেকটা ব্যতিক্রমী। এই উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার, চাকরিতে বোনাস ও প্রবর্তন করেছে।এই বছর হতেই শুরু হয়েছে সংস্কৃতি উৎসব বোনাস। আমরা দাবি জানিয়েছি বাংলা নববর্ষ উদযাপনের এ দিনটিকে জাতীয় হেরিটেজ দিবস হিসেবে ঘোষনা করার। এর যুক্তিকতা এখন প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়, এর সংস্কৃতি, খেলাধুলা এখন ক্রমবিকাশমান। বাঙালি সংস্কৃতিকে ভিন্ন ধারায় তুলে ধরতে আরো একটি অনন্য আয়োজন। প্রবাসে মূলধারার রাজনৈতিক ও জনগনের কাছে ইতিবাচকভাবে স্বদেশকে তুলে ধরার সূবর্ণ সুযোগগুলো স্বার্থকভাবে কাজে লাগাতে প্রবাসীরা তৎপর। শ্রমিক, পেশাজীবি, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, সংবাদকর্মী ও খেলোয়ার কেউ পিছিয়ে নেই এ দৌড়ে!

গত ১৭ই এপ্রিল বিকেলে এডমোনটনের আবর্টসফিল্ড পাবলিক লাইব্রেরীতে বর্ষবরণ উপলক্ষে বিশিষ্ট ক্রিকেটার হালিম শাহকে সমবর্ধনা দেয়া হয় এবং এমজেএমএফ বাংলাদেশ স্পোর্টস ক্লাব এর নতুন কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন সভাপতিআহসান উল্লাহ, স্পোর্টস ক্লাব কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে সহসভাপতি আনামুর রহমান, কমিউনিকেশান সেক্রেটারী তানভীর হাসান, ও শোহা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেরিটেজ সোসাইটি অব আলবার্টার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডয়ার্ড মন্ডল, ম. মুতালিব, হায়দার জান চৌধুরী, তাবাস্সুম আনাম প্রমুখ।
সম্বর্ধনার জবাবে হালিম শাহ প্রবাসে বাঙ্গালী শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মান উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহন এবং পয়েলা বৈশাখকে সার্বজনীন করে তুলতে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার অন্টারিও, ক্যুবেক, নিউ ব্রান্সউইক, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাভাডর, নোভা স্কটিয়া, প্রিন্স এডওয়ার্ড, সাস্কাচেওয়ান প্রদেশের সাস্কাতুন এবং আলবার্টা প্রদেশের রাজধানী এডমন্টন শহরে বাংলাদেশিরা বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে, আয়োজন করেছে বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ হলেও প্রবাসীদের ঐতির্য্য নিয়ে কর্মতৎপর একটি সংগঠন- বাংলাদেশ হেরিটেজ সোসাইটি অব আলবার্টার বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালা দিয়ে এ উৎসবের শুভযাত্রা সূচনা করে। এডমোনটন সিটির প্লিসেন্ট ভিউ কমিউনিটি হলে গত ২রা এপ্রিল সন্ধ্যায় বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক বাংলা নববর্ষ উৎসব উদযাপিত হয়. প্রবাসে আনন্দ উৎসবে এডমোনটনের বৈশাখী মেলা ক্ষণিকের জন্য হলেও হয়ে উঠে ছোট্র এক চিলতে বাংলাদেশ.।

এতে সন্মানিত অতিথি রড লওয়োলা এম এল এ ও ডেনিস ওলয়ার্ড এম এল এ, কে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন । বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বর্ষবরণের আনন্দমুখর দিনে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান লেখক। গত ৯ই এপ্রিল এডমন্টন প্লিজেন্ট ভিউ কমিউনিটি হলে ছিলো আরো একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল ও বাঙালি পোশাকের স্টল সহ বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান, নাচ,. কৌতুক, নাটকসহ ছিলো নানাহ আয়োজন।

নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে নাচ-গান ও পুতুলনাচ সহ ১৫টি স্টল নিয়ে বসেছিল এ মেলা। শামিমা শহীদ ডালিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের জোয়ারে মেতে উঠেছিলো এডমন্টন সিটি। । রওশন শিল্পী ও মানওয়ার খানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে শায়লা ফেরদৌস নিশির সহযোগিতায় একক ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন এডমন্টনের স্থানীয় শিল্পীরা।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এডমোনটনে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমোনটন নতুন বছরে প্রবাসীদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে ১৬ এপ্রিল স্থানীয় বনিডন কমিউনিটি হলে আয়োজন করেছে বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানমালার।

বাঙালি জাতির আনন্দের ও উৎসবের এ দিনকে স্বরণীয় করে রাখতে এ এক অনবদ্য আয়োজন। উপচে পড়া মানুষের ভীড় এবার বৈশাখী আয়োজনগুলোকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন থেমে নেই শুধু আনন্দ উৎসবে। বাঙালি সংস্কৃতিনির্ভর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরার যেকোন সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন প্রবাসীরা। এবারের বৈশাখী উৎসব অনেকটা ব্যতিক্রমী। এই উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার, চাকরিতে বোনাস ও প্রবর্তন করেছে।এই বছর হতেই শুরু হয়েছে সংস্কৃতি উৎসব বোনাস। আমরা দাবি জানিয়েছি বাংলা নববর্ষ উদযাপনের এ দিনটিকে জাতীয় হেরিটেজ দিবস হিসেবে ঘোষনা করার। এর যুক্তিকতা এখন প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়, এর সংস্কৃতি, খেলাধুলা এখন ক্রমবিকাশমান। বাঙালি সংস্কৃতিকে ভিন্ন ধারায় তুলে ধরতে আরো একটি অনন্য আয়োজন। প্রবাসে মূলধারার রাজনৈতিক ও জনগনের কাছে ইতিবাচকভাবে স্বদেশকে তুলে ধরার সূবর্ণ সুযোগগুলো স্বার্থকভাবে কাজে লাগাতে প্রবাসীরা তৎপর। শ্রমিক, পেশাজীবি, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, সংবাদকর্মী ও খেলোয়ার কেউ পিছিয়ে নেই এ দৌড়ে!

দেলোয়ার জাহিদ : বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা ও বাংলাদেশ হেরিটেজ মিউজিয়াম অব আলবার্টার সভাপতি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট কমান্ডের নির্বাহী সদস্য (ফোন:৭৮০-২০০-৩৫৯২)