বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

দেলোয়ার জাহিদ
Published : 26 Oct 2016, 05:54 AM
Updated : 26 Oct 2016, 05:54 AM

(ছবিতে হেরিটেজ ম্যাগাজিন হাতে লেখকের সাথে অমরজিৎ সুহি)

মার্চ মাসকে 'বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস' হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে অর্থাৎ পার্লামেন্টে প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। স্কারবোরো সাউথওয়েষ্ট এলাকার এমপিপি লরেঞ্জো বেরারডিনেটি এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন এবং বিচেস ইষ্ট ইয়র্ক এলাকার আর্থার পটস, এমপিপি এটিকে সমর্থন দেন। ফলে এসেম্বলিতে প্রস্তাবটি গ্রহণের জন্য অনুমোদন পায়।পরবর্তী পর্যালোচনার (অর্থাৎ সেকেন্ড রিডিং)এর পর তা অনুমোদিত হলে এ প্রভিন্সে মার্চ মাস বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চের সম্মানে এ স্বীকৃতির উদ্যোগ। আশা করা যায়, ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে তা বাস্তবায়ন হবে।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং সকল সহযোদ্ধার পক্ষে এতে পরম আনন্দিত ও গর্বিত। দলমত নির্বিশেষে কৃতজ্ঞ কানাডায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে যারা ইতিবাচক ভূমিকা রেখে আসছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, আমাদের গণমাধ্যমের সচেতন ভুমিকার প্রতি।
সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন একটি পরিচিত নাম।বন্যা, মহামারি, খরা, আর দূর্ভিক্ষের দেশ হিসেবে নয় বরং এগুলো থেকে উত্তরনের একটি রোল মডেল দেশ হিসেবে. আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার ঐতির্হ্য কানাডার স্পন্দনশীল বহুবিচিত্র মাঝে তার স্বীয় স্থান করে নিচ্ছে। প্রতিবছর এডমন্টনের "সারভাস হেরিটেজ ফেস্টিভাল" হয়। বিশ্বের পঁচাশিটির ও বেশি সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী অবিশ্বাস্য এক জনসমাগমের মেলা বলে খ্যাত এ "সারভাস হেরিটেজ ফেস্টিভাল". কানাডার স্পন্দনশীল বহুবিচিত্র ঐতিহ্যের কেন্দ্রে, উত্তর সাসকাচোয়ান নদীর সীমানায় অনুষ্ঠিত উত্তর আমেরিকার উল্লেখযোগ্য এ বড় মেলা যা হেরিটেজ ফেস্টিভাল বলে খ্যাত।
২০১৫ সালে মেলার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপিত হলো যাতে প্রায় ৬০টি প্যাভিলিয়ন অংশ নিয়েছিলো। অবিশ্বাস্য এ উদযাপনের অংশ হয়েছিলো বাংলাদেশ, নানা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর মাঝে তার স্থান নিয়েছিলো বাংলাদেশ হেরিটেজ সোসাইটির নেতৃত্বে। সুস্বাদু রন্ধনসম্পর্কীয় খাদ্যের নমুনা, সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক পারফরমেন্স, কারুশিল্প, আর্টওয়ার্ক, এবং পোশাকের দোকান, অথবা তাদের সাংস্কৃতিক শিকড় ও কানাডায় অধুনাতন সম্প্রদায় সম্পর্কে একটু জানতে আগ্রহী মানুষের সাথে আলাপচারিতার অপূর্ব এক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো। বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমন্টন ২০১৬ সালে বহুবিচিত্র এ মেলায় বাংলাদেশকে গর্বিতভাবে উপস্থাপনের নেতৃত্ব দিয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আলবার্টায় বৈশাখী মেলা তথা 'বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল'-এর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমন্টন, বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা, বাংলাদেশ হেরিটেজ মিউজিয়াম এবং বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব সেন্টার আলবার্টা (BPCA) সহ অন্যান্য সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে অংশ নেয়। বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল বা বৈশাখী মেলার বর্ণাঢ্য এসব আয়োজনে থাকে দেশ ও প্রবাসের স্বনামধন্য শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা, থাকে স্টল, রকমারী ও বাহারি সব দেশজ পণ্যের সমাহার।
বাংলাদেশ পেভিলিয়নে নজরকাড়া মানুষের ভীড় থাকে, খাবারের প্রতি আগ্রহ, পোষাক, জুয়েলারী, কারুকাজের প্রতি মানুষের আগ্রহের কারনে। মহতি উদ্যোগ উদ্দিপনায় কমিউনিটিতে বাংলাদেশের নাম হেলায় ফেলে দেয়ার মতো নয় বরং বাংলাদেশ কখনো কখনো পথিকৃতের পালন করে থাকে।


অবকাঠামো ও সম্প্রদায়গুলোর বর্তমান সন্মানিত মন্ত্রী অমরজিৎ সুহি (এডমন্টন মিল উডস)২০১৫ সালে যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন. বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে এসে হেরিটেজ ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন তথা বাংলাদেশের মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সারা বিশ্বে বহুসংস্কৃতির মাঝে তার স্থান করে নিচ্ছে। প্রবাসী বাঙালির জীবনে স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকছে এসব দিবস। গ্লানি আর আত্নপ্রবঞ্চণা বিমোচনের দিনগুলো, আমাদের স্বাতন্ত্রবোধকে জাগ্রত করে একএকটি দিন., যাদের অসামান্য অবদানের জন্য আমরা মাতৃভাষা (বাংলা)য় লিখছি, বলছি, প্রাণ খুলে হাসছি, আলোচনায় মাতছি, তাদেরকে স্বশ্রদ্ধ সালাম। ভাষা আন্দোলনে, স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে, স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের প্রতি উৎসর্গকৃত হোক প্রবাসী বাঙালিদের সকল অর্জন।

বাংলাদেশের ঐতির্হ্য ও সংস্কৃতি স্বদেশের গন্ডি পেরুয়ে প্রবাসে ও তার স্থান দখল করে নিচ্ছে। কানাডার রাষ্ট্র, সরকার প্রধান ও মন্ত্রী বর্গের শুভেচ্ছা বানী নিয়ে ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে -হেরিটেজ ম্যাগাজিন যা অনলাইনে ও পড়া যায়-http://bhesa.ca/files/pdf/publications/BHESA_EdmontonBichitra_2015_BHSE.pdf)।

এডমন্টন এর খাদ্য ব্যাংক একটি কেন্দ্রীয় গুদাম এবং রেফারেল কেন্দ্র, যা ২১০ টির ও বেশী সংস্থা, গীর্জা ও খাদ্য ডিপোর মাধ্যমে মানুষের জন্য খাদ্য সেবাপ্রদান, তথা খাদ্য বিতরণ করে. দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো জটিল কর্মসুচির অংশীদার হিসেবে ৫৯ হাজার ৫৬৮ ডলার তহবিল গঠনে সহায়তা করে এবং প্রশংসিত হয় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনের পথ বিবর্তিত সামাজিক গোষ্ঠী,সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য,বাংলার ১৯ হাজার রেনেসাঁ এবং ২০ শতাব্দীর বাংলা লেখক,বিজ্ঞানী,গবেষক,সঙ্গীত,চিত্রশিল্পী এবং চলচ্চিত্র প্রস্তুতকারকদের তথা চিন্তাবিদদের এ সংস্কৃতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার প্রশংসা করতে হয়। বাংলার রেনেসাঁ একটি জায়মান যাতে রাজনৈতিকভাবে জাতীয়তাবাদের বীজ রয়েছে এবং আধুনিক ভারতীয় শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পূরোধা বলা চলে বাঙ্গালীদের। বাংলাদেশের সংস্কৃতি যৌগিক, শতাব্দী ধরে ইসলাম, হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান প্রভাব এতে সম্পৃক্ত করেছে। শিল্প নৈপুণ্য ও লোকাচারবিদ্যা এবং ভাষা ও সাহিত্য ;দর্শন ও ধর্ম ; উৎসব ও তা পালনের মধ্যে এ সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক সংহতির সাথে একাত্ম হয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতির ব্যাপকতা ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, শান্তি, মানবতার শিক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শরীক করেছে। এ নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে প্রবাসে ঐক্যব্দ্ধ ও সমন্বিত ভাবে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।

সমন্বিত কোন উদ্যোগর মাধ্যমে বাংলাদেশ হেরিটেজ দিবস/ফেস্টিভাল সংগঠিত করতে এবং স্থানীয় সরকার, প্রশাসন ও মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারলে বাংলাদেশের সুনাম আরো বৃদ্ধি পাবে।
____________________________________________________________
লেখক: দেলোয়ার জাহিদ, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা ও বাংলাদেশ হেরিটেজ মিউজিয়াম এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কানাডা ইউনিট কমান্ডের নির্বাহী সদস্য ফোনঃ ১ (৭৮০) ২০০-৩৫৯২