দলদারি ঠারি করি

দীপেশ রায়
Published : 9 March 2015, 05:56 PM
Updated : 9 March 2015, 05:56 PM

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে অতি পুরাতন একটি ঘটনা যা আজও চলছে এবং পাশবিকতার চরম তুঙ্গে পৌঁছে গেছে । অমানুষটা যখন বুদ্ধি যোগ্যতা ও মেধায় পরাজিত হয় মেধাবীদের কাছে তখন দাঁত বসান ছাড়া আর কি থাকে? মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি হতে পারে না । রাজনীতি একটা পূত পবিত্র রীতি ও আদর্শ।যা দ্বারা সেবা ভালোবাসা সাম্য ইত্যাদি গূঢ়তম বিষয় গুলি চর্চা করে মহত্তর আদর্শ ময় সমাজ বা রাজ্য গঠন সম্ভব।অর্থের লোভে যারা রাজনীতি করছে তাদের পক্ষে তা কখন সম্ভব নয়। আজ বাংলাদেশে বর্তমানে যারা রাজনীতি করছে, তার মধ্যে শতকারা ৯৮% রাজনীতি বানান করতে পারে না; রাজনীতি বোঝা তো পড়ে মরুক।

প্রসঙ্গত একটা ঘটনা বলা যাক, যা আমার জীবন থকে নেয়া। তখন আমি এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দিচ্ছি। প্রথম বেঞ্চে আমার সীট পড়েছে। একই বেঞ্চের ডান পাশে আমার এক সহপাঠি।তার নামটা প্রকাশ করব না। ও পড়া-লেখা জীবনে কখন করত না। যুক্তিবিদ্যা পরীক্ষায় নকল করে ম্যাজিসটেট স্যার এর হাতে ধরাপড়ে। ওকে এক্সপেল্ড করলেন না, তবে ওই পরীক্ষার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেলেন। হলে দায়িত্ব্যরত স্যারকে দুই ঘণ্টা পর খাতা দেয়ার কথা বলে গেলেন। দুই ঘণ্টা পর খাতা পেলে ওর আর আধা ঘণ্টা সময় থাকে সামনে।ম্যাজিসটেট স্যার যাবার পর ও পাঁচ গেলাস পানি খেয়েছিল তা আমার আজও বেশ মনে পড়ে।যাই হোক সংক্ষেপ করি, ও এইচ এস সি পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি মোট চার বার দিয়েও। কি আর করা, পড়া-লেখা ওখানেই শেষ করে নিজ গ্রামে গিয়ে দলদারি করা সুরু করল। দলদারি মানে রাজনীতি, এটা গ্রাম-গঞ্জে বেশী শোনা যায়। ‚এই কি করিস এখন? " ‚এই দলদারি ঠারি করি।" ‚পড়া-লেখা?" ‚ও….ছেড়ে দিছি।" এ ধরনের সংলাপ প্রায়ই শোনা যায়।তো আমার ওই সহপাঠি দলদারি ঠারি করে।একদিন গ্রামে গিয়ে শুনি সে খুব বড় মাপের এক জন নেতা হয়ে গেছে।এখন এই নেতার দ্বারা ওই সমাজে বা রাষ্ট্রের গণ-মানুষ কি ধরনের আদর্শ আশা করে বা তার ভাবনা চিন্তা চেতনা থেকে কি ধরনের আদর্শ পাওয়া যেতে পারে, সেটা কিন্তু সহজে অনুমান করা যায়।

সকল মেশ পালক আব্রাহাম লিংকন হবে না, সকল চা বিক্রেতা শ্রী নরেন্দ্র মোদী হবে না, সেই গরু বিক্রয়ের টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে পালান ছেলেটি একদিন আর হয়ে উঠবেনা নেলসন ম্যান্ডেলা; এটা কিন্তু সব সময় মনে রাখতে হবে। তাঁদের মধ্যে উন্নততর আদর্শ দুরদর্শিতা ও সুশিক্ষা গুণগুলির দ্বারা জীবনকে জীবরেন মত গড়তে পেরেছেন এবং হয়েছেন গণ-মানুষের নেতা, হয়েছেন ইতিহাস বিখ্যাত।এর জন্যতো শিক্ষা চাই সুশিক্ষা। শিক্ষাহীন মেধাহীন এদের দ্বারা কি করে তা সম্ভব?

কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের অদূরদর্শীতার জন্য একটি দেশ শ্মশানে পরিনত হতে পারে, তার শুভ সূচনা করেছিল ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট।এ সূচনা বা ভাবনা তাদের জন্য শুভ ছিল।কেননা তারা চায়নি স্বাধীন ভূখণ্ড।তারা চেয়েছিল পরের গোলামী করে বাচঁতে।এ শ্রেণীর জাতকের কোথায় কিভাবে জন্ম হয় তা কিন্তু সুপ্রজনন নীতি বিশেষজ্ঞ মহদয় গণ ভাল ভাবেই জানেন।কিন্তু ঐ পর্যন্ত।সমাজের জন্য তার দায়বদ্ধতা কোথায়।একটা গলা কাটার ভয়ে যদি পিছিয়ে থাকা তাহলে সমাজটা দেশটা ওদের।আর ওদের অচৈতন্য গত প্রতিহিংসার জন্য দেশে কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট বারবার আসা অসম্ভ কিছু নয়।
পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা সেখানে অনেক বিষয়ই পেয়ে থাকি যা স্বার্থ কেন্দ্রিক ।কিন্তু স্বার্থ যখন বর্বরতায় পরিনত হয় তখন তা হয় ঘৃণার।আর এই ঘৃণ্য নির্মমতা যাদের দ্বারা সংঘটিত হয়ে চলেছে তাদের কেই আমরা চিরতরে বর্জন করবো। না, তাদের জীবন নিয়ে নয়।তাদের নৃশংস জগতটাকে ভেঙ্গে দিলে শান্তির পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত হবেই।