ছবিটি ০৯/০৩/২০১৮ তারিখ দৌলতপুর, খুলনা এলাকায় রেললাইনের উপর অস্থায়ী কাঁচামালের বাজার থেকে সংগ্রহ করা। এখানে বাজারটি বসে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে। পাশেই খুলনার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারী ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী দৌলতপুর এলাকায় থেকে পড়ালেখা করেন। কলেজটির নিজস্ব ছাত্র ও ছাত্রী থাকার আবাসিক ভবনগুলোতে প্রচুর শিক্ষার্থী। প্রায় দশ বছর পূর্বে আমিও ছিলাম ওই প্রতিষ্ঠানে অনার্স এবং মাষ্টার্স এর ছাত্র।
তখনকার দিনে একটি বিষয় বুকের মধ্যে হয়তো অজান্তেই দাগ কেটে গিয়েছিলো, যা আমি তখন বুঝিনি। কিন্তু স্মৃতিতে স্মরণ এসেছে বার বার। কখন কোনো প্রয়োজনে দৌলতপুর গেলে যদি ওই রেললাইনের পাশে কোন প্রয়োজনে যেয়ে বসি, দেখতে পাই সেই মানুষটিকে। যে শান্ত, সৌম্য, বিনয়ী ব্যক্তিত্ত্বে রেললাইনের একটি পাটিতে বসে হকারি করছেন।
খুব ইচ্ছে করলো একটু কথা বলি। এগিয়ে গিয়ে একটা নেইল কাটারের দরদাম প্রসঙ্গ শুরু করলাম। তার ভিতর দিয়ে তার ফটো নেয়ার অনুমতি নিয়ে ফটো সংগ্রহ করলাম।
ছবির ব্যক্তিটির নাম মাসুদ মৃধা। পূর্ব পূরুষের ভিটে-বাড়ি আলাইপুর, রূপসা, খুলনা। রূপসা নদীর ওপারে যখন ট্রেনলাইন ছিলো, রূপসা টু বাগেরহাট পযর্ন্ত। তখন মাসুদ মৃধা পাঁচ বছর ওখানে রেল লাইনে হকারি করছিরেন। রূপসা টু বাগেরহাট রেল লাইনটি যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন তিনি আলাইপুর ছেড়ে রুটি-রুজির জন্য পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। আশ্রয় নেন সেনহাটি, দিঘলিয়া, খুলনা। সেই থেকে দৌলতপুর এই রেললাইনে, যেখানে ফটোটিতে প্রদর্শিত স্থান, ওখানেই পশ্চিম মুখ বসে আজ প্রায় পনের বছরেরও বেশি সময় ধরে হকারি করছেন।
তিনি আরও জানালেন, পরিবারে চারটা মেয়ে এবং আমরা ঘরে বাইরে দুই জন আছি। মেয়েরা সকলে পড়ালেখা করে। বড় জনকে বিয়ে দিয়েছি। মেজ মেয়ে ফতেহ বাজার মদ্রাসায় পড়ে। তার পরের জন ফাইভে পড়ে। ছোট জন এখন স্কুলে যায় না। আমি মাসুদ মৃধার এই সৎ পথে জীবন যাপন এবং জীবন সংগ্রামের জন্য অভিনন্দন জানাই।