লোডশেডিং পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখে

আকাশের তারাগুলি
Published : 20 June 2011, 10:22 AM
Updated : 20 June 2011, 10:22 AM

শিরোনাম শুনে চমকে যেয়ে অনেকেই আমার মত ফান মনে করতে পারেন। হ্যাঁ এটা ফানই, কিন্তু ব্যাপারটা ভেবে দেখলে কিন্ত ফান নয় বাস্তবই মনে হবে:)।

আমি নিজের কথা বলেই শুরু করতে চাই:P। আমার দিনের সবচাইতে বেশি সময় ব্যয় হয় কর্ম ক্ষেত্রে। আমি সিওর, অনেকেরই। ভোর বেলা ঘুম থেকে কবে উঠেছি মনে পড়েনা। কখনো যদি উঠে পড়ি তাও প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের জন্য। চোখের পাতা যতটুকু সম্ভব বন্ধ করে রাখি যাতে খুলে না যায়। বাথরুমের লাইটও জ্বালাই না। আলো আমার ঘুম কেড়ে নিতে পারে। কোন মতে ক্রিয়াদি সম্পন্ন করে শুয়ে পড়ি। প্রায় বন্ধ চোখ পুরো বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি আবার। যখন ঘুম থেকে উঠি তখন সকাল সাড়ে সাতটা। এমনও হয় ৫/১০মিনিট আগে ঘুম থেকে জেগে গেলে, সাড়ে সাতটা বা তারও পরে শয্যা ত্যগ করি। সবচেয়ে ভালো লাগে ৭.৪৫মিনিটে ঘুম থেকে উঠতে পারলে। :P:P:P হাতে থাকে ৩০-৪০ মিনিট। এর মধ্যে যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। ৯টায় অফিসে পৌছে বাসায় যখন ফিরি তখন সন্ধ্যা ৭ টা বা তারপর।

ঘুমাতে যাই রাত ১১.৩০ বা তার পর। এবার আসি আসল কথায়।

বোকা বাক্স এই কলির যুগে অতি নিম্নবিত্তের গৃহে প্রবেশ করিয়াছে। অনেক গৃহে একাধিকও প্রবেশ করিয়াছে। এই সেদিন দেখা গেল একটি পরিবার উচ্ছেদের পর প্রায় অর্ধশত বোকা বাক্স উদ্ধার হইলো। রাজা বাদশাহদের ব্যপার স্যাপার আলাদা। রাজা বাদশাহ দের আল্লাহ অনেক কিছুতে স্পেশাল দিয়েছেন আবার অনেক কিছু মনে হয় তাদের জন্য মাফ।

আমাদের জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের একছত্র আধিপত্য রয়েছে এই মুহুর্তে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কল্যানে পৃথিবী এখন নাকি বোকা বাক্সে বন্দী। এরই মধ্যে সুনামি আকারে ঢুকেছে ভারতীয় বেশ কিছু চ্যানেল। যা আমাদের সময়কে কিনে নিয়েছে পানির দরে, সম্ভবত জীবনকেও। স্টার প্লাস জিটিভি, জিসিনেমা, সনি এন্টারটেইনমেন্ট সহ নানান চ্যানেল। এসব চ্যানেলের সিরিয়াল গুলোর ব্যপারে কিছু বলার নেই।

অফিস থেকে বাসায় ফিরে কলিংবেল প্রেস করলে দরজা খুলে দেয়া হয়। এতেই চলতে থাকে ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল প্রদর্শনী গোগ্রাসে গিলছে সকলে। অন্যদিকে নজর কখনো সখনো হয়ত পড়লে সৌভাগ্যবান ভাবতে হয়। টানা এই চ্যানেল ঐ চ্যানেল চলতেই থাকে। সাংসারিক কথা বলা এসময় বাতুলতা মাত্র। সিরিয়াস কোন কথা হয়তো সিরিয়ালের কল্যানে কথার কথাই মনে হবে। তখনই মেজাজ চড়ে গেলেও আসলে কিছুই করার আছেকি? নেই, না নেই? বিজ্ঞাপন বিরতিতে কথা হবে। এ্যাবসার্ড! ঐটুকু সময়ের জন্য রয়েছে অন্য চ্যানেলে কোন রিয়েলিটি শো। একান্তই যদি তা না পাওয়া যায় তবে হতভাগার ভাগ্যে একটু খানি জুটবে। কোন চ্যনেলে নি্উজ দেখা বা টকশোতে।

আগে কথা হতো খাবার টেবিলে, এখন পাল্টে গেছে। কিছুদিন যাবত দেখা যায় সবাই খাবার প্লেট হাতে নিয়ে টিভি সেটের সামনে আর আমি একা একা টেবিলে বসে জ্বলছি আর খাচ্ছি।

একটাই উপায় রয়েছে পরিবারের সকলে কাছে থেকে সময় নেয়ার বা সকলকে সময় দেবার। সেটা হলো লোডশেডিং। এই সময়েই পাল্টে যায় পুরো চিত্র। চির চেনা মধুর সময়। আহা সবসময় যদি লোডশেডিং থাকতো! একটু খোঁজখবর দেয়া নেয়া, কি করত হবে, কি করা যাবেনা। সব কিছুই মনোযোগ দিয়ে চলে। সরকারের এই লোডশেডিং আমার পরিবারের বন্ধনকে অটুট রাখতে সাহায্য করে। প্রতিরাতে দুইবার লোড শেডিং পাই। এই দুই ঘন্টা আমার দৈনন্দিন পারিবারিক জীবনে সোনালী সময়। আরেকটু যদি লোড শেডিং হলে ভালোই হতো…………….

অনেকেই হয়তো ব্যাপারটা ভুগছেন, তাদের জন্য লোডশেডিংয়ের সময়টা পারিবারিক জীবন উপভোগের, নয় কি:D

নাও হতে পারে, সবাই আমার মত ভুক্তভোগী নাও হতে পারে।

***
ছবি সাপ্লাইয়ারঃ গুগল মামু