বিচারপতি খায়রুল হকের ঘুষ গ্রহণ অভিযোগ ও বিএনপির রাজনৈতিক ও নৈতিক দেউলিয়াপনা

আকাশের তারাগুলি
Published : 12 Sept 2011, 10:16 AM
Updated : 12 Sept 2011, 10:16 AM

অভিযোগ গুরুতর। বিচারপতির ঘুষ গ্রহন।

বিএনপি চেয়ার পারসন বেগম খালেদা জিয়া উমরাহ হজ্জ শেষ করে দেশে ফিরেই বোমা ফাটালেন। এই বোমা উনি ফাটালেন বিচারালয়ের বিরুদ্ধে। সাবেক প্রধান বিচারপতি ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে রায় দিয়েছেন।

এবার দেখা যাক ঘুষ কিভাবে নেয়া হয়েছে-সাবেক প্রধান বিচারপতি স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১১ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এটাকে বেগম জিয়া ঘুষ গ্রহণ হিসেবে দেখে অভিযুক্ত করেছেন। তাহলে শুধু প্রধান বিচারপতি কেন, ৭ সদস্যের বেঞ্চ থেকে এই রায় দেয়া হয়েছে। এবং সংখ্যা গরিষ্ঠর মতামত অনুযায়ি এ রায় হয়েছে। এটাই নিয়ম। বাকি সদস্যের ব্যপারে উনার কোন অভিযোগ নেই কেন?

বেগম জিয়া হয়ত নিজের কলমের খোঁচায় দল চালানোর মত মনে করে আদালতের দিকে তার কালো অংগুলি তুলেছেন। উনি ভেবেছেন কার মতামত ছাড়াই দলের কাউকে রাখা বা না রাখা যখন তখন বিদেয় করতে পারেন, বিচারালয়ও বুঝি এভাবে চলে। যার যেমন চর্চা আরকি…………………..।

বিচারালয়ের প্রতি আক্রোশ বা অভিযোগ থাকলে স্বভাবতই এটা দেশের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠবেই এবং উঠেছেও। যেহেতু সরকারের দিকেও অংগুলি উঠেছে সরকার বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিবে এটা ভাবাই অমূলক। যেখানে সংবিধান সম্পর্কিত স্পর্শকাতর ইস্যু। এবং সরকার ও বিচারবিভাগ কে মুখোমুখি দাড়িয়ে গেছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে আকাঙ্ক্ষিত রিএক্ট করেছে। এবং এটাকে আদালত অবমাননা হিসেবে দেখছেন। অনেকে খালেদার এই উক্তির কারনে আদালতে নিয়ে যাবেন বলেছেন। এটর্নি জেনারেল খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাইতে পরামর্শ দিয়েছেন। এতেই টনক নড়ে, কারন বিভিন্ন ভাবে বিএনপি আদালত থেকে পরাজিত হয়ে এসেছেন(বিস্তারিত এখন নাই বললাম)। আইনমন্ত্রী শফিকুল ইসলামও একই ভাবে প্রতিক্রিয়া দেন।

পরবর্তী ঘটনা আঁচ করতে পেরে আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব পিছিয়ে এসে বললেন এটা রাজনৈতিক এটাকে আদালতে নেয়া ঠিক হবেনা। কেন? আদালতের ৭ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত বেঞ্চ যে স্পর্শ কাতর রায় প্রদান করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যারা এখনো একটিং বিচারপতি হিসেবে আছে। রাষ্ট্রের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিচারালয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে তার মীমাংসা হওয়া দরকার। এটা রাজনৈতিক বলে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আছে কি? অবশ্যই দ্রুততম সময়ে এই অভিযোগের সমাধান হওয়া উচিৎ। এবং এটা বিচারবিভাগকেই সমাধান করতে হবে।
এখন কাউকে হত্যা করে এটাকে রাজনৈতিক বলে কি পার পাওয়া যায়?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ঘোষণা দেন উনি প্রধানমন্ত্রী থেকে ঘুষ গ্রহনের প্রমান হাজির করবেন, গতকাল রবিবার। সত্যি বলতে কি আমি একটু দ্বিধান্বিত ছিলাম, এবং সাগ্রহে অপেক্ষা করছিলা প্রমান দেখার জন্য। রবিবার উনি সংবাদ সম্মেলন করলেন, কিন্তু প্রমান দুরের কথা কিছু ফাউল কথা বার্তা বলে ঘোলা পানিতে মাগুর মাছ শিকারে নেমেছেন। তার সংবাদ সম্মেলনে কি উঠে এল ।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী দেশের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে গরীব ও দুস্থ বলা যায় কি-না এবং সেই টাকা গ্রহণ নৈতিক কি-না তা তদন্তে সাবেক একজন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করার দাবিও জানিয়েছেন ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।

সুত্রঃ বিডিনিউজ২৪

এ প্রসঙ্গান্তরে আমরা স্মরণ করতে পারি বিএনপি যখন স্পেশালিষ্ট দের দিয়ে টিপাই মুখ বাঁধের ব্যপারে তথ্য উপাত্ত প্রদানের জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছিল। আ ন হ আখতার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বিবৃতি দেয়া শুরু করলে সাংবাদিকারা নানান প্রশ্ন করলে উনি বলেন ইন্টারনেটে ও বন্ধুদের কাছে থেকে উনি তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এরপর পড়ি মরি করে পালালেন।

বিচারপতিরা ত্রান তহবিল থেকে সাহায্য পাওয়ার অধিকার রাখেন কিনা সেটা আমার কাছেও একটা বড় প্রশ্ন। কিন্তু এটা আজই প্রথম ঘটে নাই। নানান কারনে বিচারপতিরা সেই পুরনো আমল থেকেই নিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া সরকারে থাকাকালিন সময়েও বিচার পতি প্রধান বিচারপতিরা অর্থ নিয়েছেন। আজ জনাব খায়রুল হক যদি চিকিত্সা বাবদ প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে যদি এটা ঘুষ গ্রহনের পর্যায়ে যায় তবে বেগম জিয়া বিচার পতিদের নানান সময়ে যে অর্থ দিয়েছেন তাহা ঘুষ আদান প্রদানের স্বীকারোক্তি হিসেবে কেন বিবেচিত হবে না। কেন বেগম জিয়া মনের অজান্তে এই সরল স্বীকারোক্তি প্রদান সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ঘুষ আদান প্রদানের অভিযোগ আনা হবেনা?!!

কূট বুদ্ধির মন্ত্রণাদাতা মওদুদ আহমেদ এর নীরবতা এক্ষেত্রে লক্ষণীয়।

আজ জনাব রফিকুল ইসলাম বিচার পতিদের অর্থ গ্রহনে নৈতিকতার প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু স্পিকার, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী রা কোন নৈতিকতার বলে টাকা নেনে ত্রাণ ভান্ডার থেকে। ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন স্পিকার তো ভুয়া বিল জমা দিয়ে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।