জাবি উপাচার্য প্রসঙ্গে কিছু কথা

দ্বিতীয় জীবন
Published : 9 May 2012, 12:34 PM
Updated : 9 May 2012, 12:34 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ৩৮ বছরে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক আর উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরের আমলের তিন বছরেই নিয়োগ পেয়েছেন নতুন ১৯৫ জন শিক্ষক । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আধিপত্য বিস্তার, আত্মীয়করণ এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। এবছরের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ 'উপাচার্য মদদপুষ্ট' বলে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নিহত হবার পর ওই ঘটনা এবং দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তুলে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষক সমাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে গত ৩৮ বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্র"য়ারি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ টি ইন্সটিটিউট এবং ৩৩ টি বিভাগে গত তিন বছরে নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে মোট ১৯৫ জন শিক্ষক। যা গত ৩৮ বছরের নিয়োগের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান কর্তৃক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে তত্বাবধায়ক সরকার এ নিয়োগকে মাত্রাতিরিক্ত গণ্য করে নিয়োগ দুই বছরের জন্য স্থগিত করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনিই ছিলেন প্রথম উপাচার্য।

উপাচার্য হিসেবে প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন কালে তিনি বিতর্কিত উপায়ে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্রলীগের 'একটি অঞ্চল ভিত্তিক' অংশকে প্রচ্ছন্ন মদদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বাঁধা, প্রাকৃতিক সম্পদের বাণিজ্যিকীকরন, ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে শতাধিক গাছ কাটা সহ নানান অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। তিন বছরে তিনি প্রায় ১৯৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। যাদের অধিকাংশেরই যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ ছাত্রলীগের 'উপাচার্য মদদপুষ্ট' বলে পরিচিত একটি অংশের হাতে খুন হলে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

শরীফ এনামুল কবীর

অধ্যাপক কবীর ১৯৭৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে ¯œাতক এবং ১৯৭৬ সালে ¯œাতোকোত্তর ডিগ্রী প্রাপ্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর গবেষণা (পিএইচডি) ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক, ১৯৮৭ সালে সহকারী অধ্যাপক এবং ১৯৯২ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদন্নতি লাভ করেন। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, ২০০৭ থেকে ২০০৯ রসায়ন বিভাগের সভাপতি, ১৯৯৮ থেকে ২০০১ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্থকমিটির সভাপতি, ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, ১৯৯২ থেকে ২০০৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে প্রয়োজন না থাবা স্বত্বেও নিয়োগ পেয়েছে ৫ জন শিক্ষক। এর মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক তানজিমুল হক মোল্লা ইমন একজন আশুলিয়া থানার একটি মামলার এজহার ভুক্ত আসামী। ইমনের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলা এবং ক্যাম্পাসে অস্থীতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে তৎকালী ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল পারভেজ বাদী হয়ে আশুলিয়া খানা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। পরে আদালত থেকে তিনি জামিন লাভ করেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী শিক্ষক ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাজেদ আশরাফ করিম বলেন, "যে ছেলেটি স্নাতক এবং ¯স্নাতকোত্তর দুটিতেই প্রথম শ্রেনী পেয়েছিলো তাকে না নিয়ে ইমনকে নিয়োগ দেয়া হয়।"

বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার মুল্যায়ন হয় না এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, "মেধাকে কখনো দমিয়ে রাখা যায় না, ইমনের কারনে যে ছেলেটি নিয়োগ পায়নি সে পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছে।"

উপাচার্যের বিভাগ রসায়ন বিভাগে গত দেড় বছরে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানপ্রাপ্তদের বাদ দিয়ে ¯œাতকে ১৭ তম স্থানধারী সুবর্ণা কর্মকারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান প্রক্টর তপন কুমার শাহার স্ত্রী। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ¯œাতক এবং ¯œাতকোত্তর পরীক্ষায় একাধিক প্রথম শেণীতে প্রথম প্রাপ্ত প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নিয়োগ দেয় হয় ফজলুল হালিম রানাকে। রানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী এবং তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একাধিক হামলা ও ভাংচুর মামলা রয়েছে। একই বিভাগে উপচার্যের নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের অধিবাসী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সজীব বালাকে অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে সজীবকে নিয়োগ দেয়ার জন্য এ পদের বিপরীতে পত্রিকায় কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় নি। তার নিয়োগের সময় তিনি ¯œাতোকোত্তর শ্রেণীর ফলাফলে অবতীর্ণ ছিলেন বলে জানা যায়। ইতিহাস বিভাগে রেকর্ডসংখ্যক নম্বর পাওয়া একাধিক প্রার্থীকে বাদ দিয়ে মীর ফেরদৌস হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফেরদৌস ¯œাতকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে সপ্তম এবং ¯œাতোকোত্তরে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১১তম স্থান পান। তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামীপন্থী শিক্ষক আবদুল্লাহ হেল কাফীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। প্রতœতত্ত্ব বিভাগে দুটি প্রভাষক পদের জন্য ৩৫ জন প্রার্থীর বিপরীতে ¯œাতকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ষষ্ঠ এবং ¯œাতোকোত্তরে পঞ্চম স্থান অধিকারী ছাত্রলীগ কর্মী সিকদার মো. জুলকার নাইনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে যোগ্যতর প্রার্থী থাকা স্বত্ত্বেও উপাচার্যের নিকটাত্মীয়া সেলিনা আক্তারকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি পরবর্তীতে সহকারী প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। গণিত বিভাগে একাধিক প্রথম স্থান অধিকারী প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী সাব্বির আলম ও আশরাফুল আলমকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল পারভেজের স্ত্রী মুরশেদা বেগমকে। রসায়ন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয় উপচার্যের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মী কামাল হোসেনকে। তিনি সহকারী প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্বও পালন করেন। সরকার ও রাজনীতি বিভাগে যোগ্য অনেকপ্রার্থীকে বাদ দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় সামসুন্নাহার খানম মেরিকে। তিনি উপচার্যের নিকটাত্মীয় বলে পরিচিত। এছাড়া এক্ই বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আসম ফিরোজ-উল-হাসান। তিনি সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করার সময়ে মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে হাতে নাতে ধরা পরেন।

একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে ইতিহাস, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞাণ বিভাগ, দর্শন, বাংলা, ইংরেজী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ, প্রানী বিদ্যা, ফার্মেসী, উদ্ভিদ বিজ্ঞাণ এবং প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞাণ বিভাগেও।

এ প্রসঙ্গে দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন বলেন, "আমরা বিশ্বাস করতে চাই না, তবে এখন আমাদের কাছে মনে হয় তিনি (অধ্যাপক কবীর) নিয়োগ বাণিজ্য করেন।"

সর্বশেষ গত ১০ মার্চ তারিখে গণিত বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকদের বিরোধীতার মুখে উপাচার্যের বাসভবনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এ দিন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাক্ষাৎকার না নিয়েই ফিরে যান সিলেকশন বোর্ডের অন্যতম সদস্য নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এম ডি আবদুস সাত্তার।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, "গণনিয়োগ প্রসঙ্গে শিক্ষকদের জোর দাবি ও আন্দোলন স্বত্বেও নিয়োগ বন্ধ না করে আরো শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এসব উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা ও অশুভ মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।" আধিপত্য ধরে রাখতে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এমন মন্তব্য করে অধ্যাপক নাসিম বলেন, "কম মেধাবীরা সহযেই উপাচার্যের আনুগত্য গ্রহন করে।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের নেতা এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন, "উপাচার্য অবৈধভাবে শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগ বাণিজ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে সম্পুর্ণভাবে ধ্বংস করেছেন।"

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন বলেন, "প্রয়োজন না থাকলেও শুধুমাত্র প্রভাব ধরে রাখতে এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।" কোন কোন শিক্ষকের পাঠদানের মতো কোন কোর্সও নেই বলে জানান তিনি।

ছাত্রলীগের একটি অংশকে 'প্রত্যক্ষমদদ'

শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি ছাত্রলীগের 'অঞ্চলভিত্তিক' একটি অংশকে সরাসরি মদদের অভিযোগ রয়েছে অধ্যাপক শরীফের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যারয় শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন বলেন, উপাচার্য সংগঠনের একটি অংশকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে আসছেন। এরা এক সময় ছাত্রদল করলেও এখন উপাচার্যের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রলীগের নামে কাজ চালাচ্ছে। সরকার সমর্থক সংগঠনের এই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশই সদস্যই বর্তমানে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত। শাফিন বলেন, ২০১১ সালের ২ ফেব্র"য়ারি উপাচার্যের 'নির্দেশে' প্রক্টর আরজু মিয়া শামীম-শরীফ গ্র"পকে বঙ্গবন্ধু হলে পুনর্বাসিত করতে যায়। ওই সময় শরীফের কোমর থেকে অস্ত্র পড়ে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরসহ তাদের ধাওয়া করে। "তবে ওই রাতেই পুলিশি পাহারায় উপাচার্যের সন্ত্রাসী গ্র"পকে হলে ওঠানো হয়। বিতাড়িত হয় শতাধিক শিক্ষার্থী" বলেন তিনি। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের এ অংশের হাতেই খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের।

উপাচার্য মদদপুষ্ট বলে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকের নামে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও তারা প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল তারিখে ছাত্রলীগের উপাচার্য সমর্থন পুষ্ট বলে পরিচিত ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি কলি মাহমুদ সহ ৭ জন সাংস্কৃতিক কর্মী।

প্রাকৃতিক সম্পদের বাণিজ্যিকীকরন

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সম্পদের বাণিজ্যিকীকরনের অভিযোগও রয়েছে অধ্যাপক কবীরের বিরুদ্ধে। ক্যাম্পসের গাছ কাটা, জলাধারে মাছ চাষ এবং নির্বিচারে বনাঞ্চল পরিস্কার করায় ক্যাম্পাসের জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে সরেজমিনে পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের রাস্তার সামনের রাস্তা, আল বেরুনী হলের পাশের জলাধার, জাহাঙ্গীরনগর ক্লাব সংলগ্ন রাস্তা, চৌরুঙ্গী, ভূ তত্ব বিজ্ঞান বিভাগ, ভাসানী হল সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মুল্যমানের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাকৃতিক আকর্ষন শীতকালের অতিথি পাখি। ক্যাম্পাসের জীব বৈচিত্র বিনষ্ট হওয়ায় এ বছর ক্যাম্পাসে কোন অতিথি পাখির আগমন ঘটে নি।

এ বিষয়ে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন বলেন, "লেকগুলোতে মাত্রাতিরিক্তি চুনের ব্যাবহারের কারনে এবং কম সময়ের ব্যাবধানে লেকগুলো পরিস্কার করায় পাখির স্বাভাবিক বাসস্থান নষ্ট হয়েছে। এর কারণে এ বছর ক্যাম্পাসে কোন পাখি আসে নি।" এছাড়া ঝোপঝাড় পরিস্কার করার কারনে ছোট ছোট অনেক প্রানী ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।