রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ…

দর্পন চোখ
Published : 16 Nov 2012, 05:33 PM
Updated : 16 Nov 2012, 05:33 PM

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বাংলাদেশ মায়ানমার আর জাতিসংঘ যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে তা কোন পথে গেলে সঠিক হবে তার পরামর্শক কিন্তু কেউ নাই। এদিকে কক্সবাজারে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গারা সমুদ্র উপকূলের ঝাউবাগান ও বনাঞ্চলে বস্তি তৈরি করে বসতি শুরু করছে। আর নিজ পরিচয় গোপন রেখে নারী, শিশুদের রেখে ওখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং সুযোগ বুঝে অনেকে সমুদ্রপথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সমপ্রতি টেকনাফ সাগরে দুটি ট্রলার ডুবির ঘটনায় শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে যার অধিকাংশ যাত্রী রোহিঙ্গা।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর ঝাউবাগানের ভেতরে বস্তি তৈরি করে বসতি করছে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা। তাছাড়া, শাপলাপুর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন প্রায় ২৫ কিলোমিটার লম্বা ঝাউবাগানের ভেতরে ভেতরে, অর্থাৎ জাহাজপুরা, শিলখালী, কচ্ছপিয়া, বড়ডেইল, নোয়াখালী, রাজারছড়া, মিঠাপানিরছড়া, লম্বরী, তুলাতলী, মহেশখালীয়াপাড়াসহ আরও অন্তত ৩০টি স্থানে বসতি করছে প্রায় ৯০০ পরিবারে আরও ১০ হাজার রোহিঙ্গা যারা রাতের বেলায় শাহপরীর দ্বীপ, নয়াপাড়া, সাবরাং, নাইট্যংপাড়া দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়ারপাড়ার দু'টি শিবিরে অবস্থান করছেন প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী। অন্য দিকে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বসতি করছেন আরও পাঁচ-ছয় লাখ রোহিঙ্গা যারা ১৯৯০ সালে প্রবেশের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যায় এবং বর্তমানে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানে ব্যস্ত। আরও পাঁচ থেকে ১০ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে যাদেরকে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করেনা।

রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ পুরুষ সমুদ্রে মাছ ধরে অথবা মাদক চোরাকারবারীর চালনাকারী বা শ্রমিকের কাজ করে আর নারী, শিশুরা পাহাড়-জঙ্গলের গাছ কাটা থেকে শুরু করে চিংড়িপোনা ধরা, মাদক চালানসহ নানা অপরাধমূলক কর্মে জড়িত। নারীর মাধ্যমে মাদক চালান সহজ হওয়ায় এ কাজে নারীরা বেশী জড়িত।

এখন থেকে যদি অনুপ্রবেশকারী ভাসমান রোহিঙ্গাদের সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা না যায় তাহলে এসব রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এবং চুরি-ডাকাতি, মাদক চোরাকারবারীর চালনাকারী, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ অনতিবিলম্বে এই অনুপ্রবেশকারী ভাসমান রোহিঙ্গাদের সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে আমাদের পর্যটন নগরী কক্সবাজার রক্ষা করা হোক।