বাংলাদেশের জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস এই কথাটি মনে রেখে আমাদের সামনে এগুতে হবে

ডাঃ হাসান মাহমুদ মামুন
Published : 20 Feb 2012, 11:59 AM
Updated : 20 Feb 2012, 11:59 AM

আমাদের দেশের সাধারন মানুষ দের কথা ভুলে যায় যখন ই রাজনৈতিক দল গুলো ক্ষমতায় আরোহন করে, হাজার ও লক্ষ প্রতিশ্রুতির কথা ও কেন জানি মনে থাকে না যখন রাস্তা ঘাটে আন্দোলনের নামে দলীয় কর্মী ও সাধারন মানুষের কাতারে থাকে তাদের কে প্রদান কৃত বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। এটা আমাদের চিরচারিত স্বভাব হয়ে গেছে, যা হোল – প্রতিশ্রুতির অবমুল্যায়ন। কি কারণে জানি আমরা মানে আমাদের নেতা নেত্রীরা ক্ষমতার দাপটে সব কিছু ভুলে যাই। একটিবারের জন্য ও চিন্তা করি না ক্ষমতার এই দাপট কিন্তু ক্ষনিক সময়ের, একটি নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের সকল শ্রেণীর নেতা কর্মী দের আবার ফিরে যেতে হয় জনতার কাতারে, ধর্না দিতে হয় যাদের কে অবহেলা ও তাচ্ছিল্ল্যের চোখে আমরা একটা সময় দেখি তাদের ই দারপ্রান্তে, তখন আমরা ভুলে যাই আমাদের ক্ষমতার দাপট । অসহায় এর মত ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে জনগনের কাতারে, দোর গোরায় মাথা থুকটে হয় "ভোট" নামক সোনার হরিণ প্রাপ্তির আশায়।

১৯৯০ সনের পর হইতে আমাদের দেশে গনতন্ত্রের চর্চা শুরু হয়, আর এই গণতান্ত্রিক চর্চা নামক হিসাবে গত ২০/২২ বছর আমরা দুটি দল কে ক্ষমতায় আসতে ও যেতে দেখেছি, যদি এই দুইটি দলের মুল্যায়ন করা হয় তাহলে গানিতিক হিসাব হবে শূন্য। মানে জনগনের প্রাপ্তি শূন্য, যদিও আমাদের দুই দলের নেতা নেত্রীরা কিন্তু প্রাপ্তির উদ্ধে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি):

মেজর জিয়াউর রহমান যাকে বা যার নাম বাঙ্গালী প্রথম ভালো করে জানতে পারে ১৯৭১ সনের ২৭শে মার্চ। চট্টগ্রাম এর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বেতারে স্বাধিনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। যে কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) র রাজনৈতিক কুটিল পন্থায় ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জনগনের সহানুভুতি আদায়ের জন্য বলা হোল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক । অথচ, জিয়াউর রহমান তার ঘোষণা পত্রে পাঠ করেছিলেন এভাবে … I major Zia declared the Independent of Bangladesh on behalf of our Father of nations Bongobondhu sheikh muzibur rahman. আমাদের বর্তমান প্রজরম যে কারণে দেখেছে ও শুনেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যখন ই ক্ষমতায় আরোহণ করেছে তখন এইভাবে I major Zia declared the Independent of Bangladesh। আবার যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আরোহণ করে তখন আমাদের অতীত, বর্তমান প্রজরম দেখে আসছে টি ভি পর্দায় ১৯৭১ সনের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনকের সেই ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা, যা দেখে অকপটে বলে দেয়া যায় বাংলাদেশ এর স্বাধীনতার মূল ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের আলচনার বিষয় বস্তুর খাতিরেই উপরোক্ত বিষয়টি টেনে আনতে হয়েছে, মূল বিষয়ে ফেরা যাক।

কথা হচ্ছিল আমাদের নেতা কর্মী দের চারিত্রিক স্ফুলন এর, আসলে উপরোক্ত স্বাধীনতার ঘোষক নামক যে টানা টানি দেখে কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যায়, অনেকটাই আমাদের নেতা নেত্রিদের প্রকৃত রুপ, সত্য বলার কারণে অনেক সময় আমাদের সমাজের লেখক ও বুদ্ধিজীবী শ্রেনিকে কোন সময় বাহবা পেতে দেখা গেছে আবার কোন সময় সত্য বলে পাপ করেছে বলে গ্লানি টানতে হয়েছে, অথচ এই ঘোষণা ব্যপার টি টানা হেঁচড়া না করে কিন্তু ইতিহাসে জিয়াউর রহমান ও মহান হতে পারতেন, কারণ একজন সেনা কর্মকর্তা হয়ে তৎসময় তার সাহসী ভুমিকা আমাদের স্বাধিনতা সংগ্রামের জন্য সহায়ক ছিল, আর জিয়াউর রহমান জিবদ্দশায় কখনও এই ঘৃণিত পথে যান নি, তার মৃত্যুর পর আমাদের দেশের কিছু কায়িক শ্রেণীর নেতা কর্মী যারা জানে শুধু সুবিধা আদায় করতে, যারা একসময় জাতির জনকের আশে পাশে থাকতেন, যাদের কারণে সত্য কে মিথ্যা বানাবার পক্রিয়ায় এবং তাদের ই পরচনায় উপরোক্ত ব্যপার টি আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। আর জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী যিনি কম বুঝে বেশী বুঝার দাম্ভিকতা দেখান তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উস্কানিতে আমাদের ইতিহাস কে নিয়ে ছিনি মিনি খেলার সুযোগ আর নিজ সন্তান দের জনতার মাঝে দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে পরিচিত হবার কাজ টি করে দিয়েছেন। যার সুখ দুখ কিন্তু সেই সকল কায়িক শ্রেণী কে পোহাতে হয়নি পোহাতে হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া কেই।

যাহোক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক, আমাদের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের বর্তমান সময়ের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ৯০ পরবর্তী সময়ে সর্বাধিক কাল বা সময় ক্ষমতায় থেকেছে, জনগনের প্রতিশ্রুতি তো দূরে থাক ? কি ভাবে নিজেদের স্বাবলম্বি করতে হয়, কিভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে জনগনের সম্পদ কে নিজেদের সম্পদ বানাতে হয় তার উদাহরণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রমাণ করে গেছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সারা বাংলাদেশ এর জনগন দেখেছে কিভাবে বিগত জোট সরকারের সময় এর মন্ত্রী ও এমপি রা জেলহাজতে প্রেরিত হয়েছে, শুধু তাই নয় সারা বাংলাদেশ এর সকল স্তরের জনগন স্বাক্ষি হয়ে দেখেছে আমাদের দুই দলের দুই প্রধান নেত্রী কে কারাবরন করতে ।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ:
স্বাধীনতার পট পরিবর্তন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ইতিহাসের রচিতা হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রথিস্তাতা হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাম অম্লান হয়ে থাকবে যতদিন এই বাংলাদেশ টিকে থাকবে, এই কথা নিদ্ধিদায় স্বীকার করে নিতে হবে সকল শ্রেণী পেশার জনগণকে । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সন হইতে ২০০১ সন পর্যন্ত বর্তমান কর্ণধার শেখ হাসিনা ও তার সরকার কে জনগন প্রত্যক্ষ করেছে, সেই সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কার্যকলাপ প্রশংসিত হলেও ভোট যুদ্ধে পরাভুত হতে হয়েছে, যাহোক,

২০০৭ সনের নির্বাচনে ততসময় কালীন জোট সরকার কে ধরা বাধার বাহিরে গিয়ে এবং সকল হিসাব কিতাব আর সমীকরণ কে পরাভুত করে সরকার গঠন করে রেকর্ড পরিমান ২৩০ টি আসনে জয়ী হয়ে। অবশ্য নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা ও জনগণকে উৎসাহিত করেছিল তাদের কে ভোট দেবার। যা হোক, শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসির রায়, যুদ্ধাপরাধী দের বিচার এর ব্যবস্থা, লোড শেডিং কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিশ্ব বাজার অর্থনীতির মন্দাভাবের বিপরিতে কিছুটা স্বাভাবিক রাখা, এই সকল ক্ষেত্রে অনেকটা সফল হলেও শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, দ্রব্য মুল্যর অস্থিতিশীলতা, দলীয় এম পি ও মন্ত্রী দের অযোগ্যতার কারণে জনগনের সমর্থন থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছে, বিশেষ করে সহযোগী অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লীগ ও যুব লীগ সহ চাটুকার আর তোষামোদি দের কারণে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে দূরে সরে গেছে বলে সকলে মনে করছেন। যদিও এই অবস্থা হইতে পরিত্রান পেতে যথেষ্ট সময় এখন ও তাদের হাতে আছে। আর তা সরকার ও দলীয় নীতি নিধারক দের সততা আর পরবর্তী পদক্ষেপ এর উপর বিদ্যমান। যাহোক আমার লেখনির মূল বিষয় বস্তু ছিল "জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস" আমরা মূল ধারায় ফিরে আসি…

আমাদের দুই দল কে যদি মানতে হয় "জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস" এই নীতি তাহলে তাদের কে সেই হিসাবে চলার আহবান আমরা জানাচ্ছি, নতুবা আমাদের সাধারন জনগণ এর নতুন করে ভাব বার সময় ও এল বলে …।

এছাড়া বর্তমান দেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে আমাদের সোনার বাংলাদেশ আবার সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে বলে আমরা মনে করি, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যে ভাবে দুই দল সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে তাতে ক্ষতি যে শুধু সাধারন জনগনের ই হবে তা কিন্তু নয় আমাদের দুই দল কে ও নিঃশেষিত হতে হবে যে এটা ও আমরা অনুধাবন করছি। আশা করি সকল ত্রুটি, বিচ্যুতির উদ্ধে আমাদের দুই দল নিজেদের কে গুছিয়ে নিয়ে সামনের পথে এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের কাম না, এটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা।