ধর্ম, দেশ, রাজনীতি ও চলমান ঘটনা প্রবাহ

ড. কাজী আব্দুল মান্নান
Published : 28 July 2016, 06:34 PM
Updated : 28 July 2016, 06:34 PM

আমি প্রথমে একজন মুসলিম, দ্বিতীয়ত বাংলাদেশী, তৃতীয়ত গবেষক, চতুর্থত আইনজীবী, তারপর আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনা। একজন মুসলিম হওয়ার কারণে, আমার মধ্যে সবসমই একটা আন্তজার্তিক মতবাদ কাজ করে। মূল কারণ হচ্ছে, ইসলাম একটি আন্তজার্তিক এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্ম ।  আর এই অনুভূতি, চিন্তাভাবনা, শিক্ষা, গবেষণা এবং অনুসরণ কোনোটিই অপরাধ নহে এবং হতে পারে না। প্রতিটি ধর্মের মূল ভিত্তিই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তার এক বা একাদিক লিখিত গ্রন্থ (ডক্টরিন), যেমন কোরআন, বাইবেল, গীতা ইত্যাদি। এই গ্রন্থ  সমূহ হচ্ছে স্বীকৃত ডক্টরিন। দুনিয়ার কোনো দেশ, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমন কোনো ক্ষমতা কাউকে দেয়নি যে, এখান থেকে কেউ  কোনো হাইপোথিসিস টেস্ট করে নিজের ফলাফল প্রকাশ করবে। কারণ  হচ্ছে ধর্ম যার যার নিজের বিশ্বাস এবং ধর্মীয় গ্রন্থগুলো অপরিবর্তনশীল। আবার যে কেহ ইচ্ছে  করলে তার উত্তরাধিকার ধর্ম থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, হয় ভিন্ন ধর্মে অথবা ধর্মের বাইরে।

আমি একজন বাংলাদেশি এবং মুসলিম, আর রাষ্ট্রটি তার সংবিধানে ঠিক এভাবেই লিখেছে  "রাষ্ট্রধর্ম ১ [ ২ক। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। সংবিধানের প্রাধান্য ৭৷ (১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷ (২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷

সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য ৭খ।সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।"

উপরে উল্লেখিত কোড করা সংবিধানের অংশটুকুই যথেষ্ট একজন মুসলিম নাগরিকের পক্ষে, তার বসবাস করার জন্য। তাই আমি নিজেকে গর্ব করে বলতে পারি যে, আমি একটি বৃহত্তর ইসলামী রাষ্টের প্রকৃত মুসলিম। যেখানে কোনো দিন কোনো নবী রাসূল জন্ম নেননি এবং হিজরত বা সফরেও আসেননি (আমার জানামতে) ।  অথচ আমাদের সবার ধর্মের উৎস ভূমি সৌদি আরব, যার আয়তন ৮,৩০,০০০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা মাত্ৰ ৩ কোটি । অর্থাৎ আয়তনের দিক দিয়ে ঐ দেশটি আমাদের চেয়ে ১৫ গুন্ বড়, আর জনসংখ্যায় আমরা ৫ গুনের বেশি বড়।  ঐ দেশটিতে আমাদের প্রিয় নবীর জীবদ্বশায়ই, তার আপনজন অনেকেই তার বিরোধিতা এবং শত্রুতা করেছে, যাদের মধ্যে কিছু  লোকের নাম স্পষ্টভাবে পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে । প্রিয় নবী কি তাদের হত্যা, খুন বা জিহাদ করেছেন?

মানুষ হত্যা ও জিহাদ এক জিনিস না। আমি অস্বীকার করছিনা  যে, নবী কারীম  (সঃ) জিহাদ করেননি। মানুষ হত্যা ও জিহাদ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে । শতকরা ৯০ ভাগের উপরে মুসলমান এই ইসলামী রাষ্ট্র, যেখানে ৫টি সৌদি আরবের চেয়ে বেশী ধর্ম প্রাণ ও ধর্ম ভীরু মুসলমানের বসবাস। একটি বিরাট অংশ অর্থাৎ ইউনাইটেড আরব আমিরাতের জনসংখ্যার চেয়ে বেশী জনগণ বিভিন্ন দেশে কাজ কর্ম করে তাদের পরিবারের আর্থিকভাবে পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের সাথে কোনো কিছুরই আতাত করেন না, আর এটা বাংলাদেশের সব দক্ষ রাজনীতিবিদগণই জানেন।

বর্তমান পরিস্থিতিটি আমার মনে হয়, একটি অশুভ শক্তির আবির্ভাব বৈ আর কিছু নয়। এই অশুভ শক্তি অনেক শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ দেশেও ভয়াবহ ও অমানবিক আঘাত হেনেছে ।  এই অবস্থায়  ব্যাক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে বেশি চিন্তা করলে আমরা ধর্ম ও দেশ ২টি কে ই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাব। তাই আমি মনে করি, এ বিষয় আমাদের আরো বেশি গভীর ভাবে  চিন্তাভাবনা, গবেষণা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে আগাতে হবে ।