আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৪১টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধিত আছে। যার মধ্যে ৬টি বাম, ২২টি মধ্য এবং ১৩টি ইসলামি চিন্তা চেতনা নিয়ে গঠিত। এই ১৩টি ইসলামি দলের মধ্যে হেফাজত ইসলাম নামে কোন রাজনৈতিক দল নেই। তা হলে আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে এই হেফাজত কে বা কারা? বড় বড় রাজনৈতিক দলের যেমন প্রিয় পাত্র তেমনি বাম বুদ্ধিজীবী মহলের চোখের শুল। আমার জানামতে সাধারণ মানুষের কাছে অতি পরিচিত একজন মানুষ যিনি তেতুল হুজুর হিসাবে বিখ্যাত, তার সৃষ্ট একটি নতুন আন্দোলনের নাম। প্রথমবার আন্দোলনের হেতু অহেতুক, দ্বিতীয় দাবী সাধারণ শিক্ষার পাঠপুস্তকের পরিবর্তন, তৃতীয়ত ভাস্কর্য/মূর্তি অপসারণ এবং তার সাথে ১৩ দফা।
কে এই তেঁতুল হুজুর? কোথা থেকে এসেছে? কী তার উদ্দেশ্য? তা নিয়ে তেমন কোন কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই। কারণ একজন মুসলমান হিসাবে আমি পবিত্র কোরআন ছাড়া আর কিছু বিশ্বাস করিনা এবং কি ঐ সকল হাদিসও না যা পবিত্র কোরআনের সাথে মিল নাই। বর্তমানে যে কোন পণ্যের চেয়ে হাদিস ও ফতোয়াতে বেশি প্রকাশ্য ভেজাল। তাইতো নিবন্ধিত ১৩টি (এক তৃতীয়াংশ) দল ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করলেও একমাত্র জামাত ছাড়া কেহ কোনোদিন কোন আসনে জামানত ফেরত নিতে পারবেনা, অথচ ৯০% উপরে মুসলমান। আমি বিশ্বাস করি না এ দেশে কোন সত্যিকার ইসলামী নেতা আছে? যারা প্রকাশ্য ইসলামী রাজনীতি করছে, তারা বিভক্ত ১৩টি নিবন্ধিত প্রক্রিয়ায়; আর যারা গোপনে করছে তারা সন্ত্রাস করে কি করতে চাইছে, তা শুধু তারাই জানে। এদের মনে হয় আমাদের জাতীয় কবি অনেক আগেই দেখেছিলেন, তাইতো গেয়েছিলেন "আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান ….."।
আমরা সবাই মনে হয় একটি কথা জানি, যে মানুষের সবচয়ে বড় শত্রূ ইবলিশ। সেই ইবলিশ কি আল্লাহর একত্ববাদে অস্বীকার করে? অবশ্যই না। আল্লাহ অসীম ক্ষমতার মালিক তা অবিশ্বাস করে? মোটেই না। হজরত মোহাম্মদ (সঃ) শেষ নবী তাও কি অস্বীকার করে? কখনও না। পবিত্র কোরআন জিব্রাইলের মাধ্যমে হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর নিকট মানব জাতির জন্য এসেছে, তাও কি অবিশ্বাস করে? কোনোদিন না। সেই ইবলিশ কি ত্রিশ পাড়া কোরআন পড়তে ও মুখস্ত পারে? অবশ্যই পারে। না পারলে আমাদের শিরায় শিরায় গিয়ে শুদ্ধ আয়াতকে ভুল কিভাবে করাবে? অতএব আমাদের ভেজাল ফতোয়া থেকে সাবধান হতে হবে, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, অসীম ক্ষমতার মালিক, হজরত মোহাম্মদ (সঃ) শেষ নবী, কোরআন আসমানী কিতাব এবং তা মুখস্থ করার নাম কখনো ঈমান হতে পারে না। এই সব কিছুর অগাধ বিশ্বাস ও গুন ইবলিশের আছে। এবং কি ইবলিশ এও বিশ্বাস করে শেষ বিচারের দিন তাকে আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে।
পবিত্র কোরানের একটি আয়াত কি বলেছে দেখুন "যাহারা সুদ খায় তাহারা সেই ব্যক্তিরই ন্যায় দাঁড়াইবে যাহাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। ইহা এই জন্য যে,তাহারা বলে 'ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই'। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করছেন। যাহার নিকট তাহার প্রতিপালকের উপদেশ আসিয়াছে এবং সে বিরত হইয়াছে তাহা তাহারই; এবং তাহার ব্যাপার আল্লাহর ইখ্তিয়ারে। আর যাহারা পুনরায় আরম্ভ করিবে তাহারই দোজখবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।" (সূরা: বাকারাহ, আয়াত :২৭৫; অনুবাদ উৎস :http://www.quran.gov.bd/)
অরিজিনাল ইবলিশ না সুদের ব্যবসা করে, না সুদ খায় (সে তো জিন জাতি)। মানুষ ঈমানের উপরের সব উপাদানে বিশ্বাস করে প্রকাশ্যে সুদ খেলে, তাকে কি ঈমানদার সুদখোরী মুসলমান বলা হবে? এখানে কোন যুক্তি, হাদিস, ফতোয়া, মতবাদ ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য নহে। এই অপরাধের (সুদ) শাস্তি একমাত্র স্থায়ী জাহান্নাম। কে বলেছেন? আল্লাহ। কোথায় বলেছেন? পবিত্র কোরআনে। এই অপরাধ করে, আমাদের উপরোক্ত তথাকথিত ঈমান কি, বেহেস্থের ধারে কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে? মোটেই না, হতে পারে না। কই কোন ইসলামি দল তো সুদের বিরুদ্ধে না। তেঁতুল হুজুর তো সুদের হিসাব বন্ধ করতে বলেন না? যারা সুদে টাকা রেখে হজে যেতে যান, যেতে পারেন আমার কোন অসুবিধা নেই। নিজেকেই প্রশ্ন করুন কোন কাজটি আগে করবেন, জীবন থেকে সুদ বর্জন, নাকি গোটা পরিবারকে সুদের চক্রে রেখে যাবেন।
আমি কোন দিন শুনিনি যে রেজিস্ট্রিকৃত ১৩টি দল পবিত্র কোরআনের মূলনীতিতে বিশ্বাসী, অর্থাৎ যা করলে জান্নাত, আর যা করলে জাহান্নাম। তারা এখানেই ১৩টি দলে বিভক্ত, বাকি দুনিয়ার কথা নাই বললাম। খোদ সৌদি আরবে ৮৫ ভাগ সুন্নি (অনেক গ্রুপ) প্রায় ১৫ ভাগ শিয়া। আমাদের দেশের ইসলামি ব্যাংকের কনসেপ্ট কখনো সুদমুক্ত না। ব্যাংক নিজেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থায়ী আমানত রেখে ব্যবসা করছে, তা কি সুদমুক্ত? এল সি মার্জিনে এবং তার ক্রেডিট সময়ের কথা না ই বললাম।নামধারী ইসলামী দলগুলোর কারো মূলনীতি হচ্ছে মারফতি এবং মাজার ব্যবসা, তবে আরকেটি গ্রূপের প্রধান ব্যবসা হচ্ছে নামাজ। শুধু মাত্র নামাজকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে জীবন ও জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই নামাজেও হয়েছে কত রকমের ফতোয়া। তাই বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের মতও রয়েছে নানা মতবাদের মসজিদ। নামাজের ওয়াক্ত, রাকাত ও পড়ার নিয়মেও রয়েছে মতান্তর। কেউ বলছে ১,২৪,০০০ কেউ ২,২৪,০০০ পয়গম্ভর, কেউ বা উপায় না পেয়ে দুটি নাম্বারকেই মেনে নিয়েছে। এই বেপারটি ২ বা ৪ জন নিয়ে নয়, পুরা ১,০০,০০০ পয়গম্ভর গণনায় মতবিরোধ। কেউ পড়ছে পাঁচবার নামাজ (সুন্নি), কেউ তিনবার (শিয়া)।
তাই আমার কাছে মনে হয়, ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোই সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তি করছে এবং তা ইসলামের সাথেই। তারা পবিত্র কোরআন ও সহি সুন্নাকে বাদ দিয়ে, নানা জাল হাদিস, ভ্রান্ত ফতোওয়া ও উদ্ভট মতবাদের জন্ম দিয়েছে। সাধারণ জনগণের কাছাকছি থাকলেও, তারা কতটুকু দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছেন। ওয়াজ, নসিহত, তাফসীর, মিলাদ মাহফিল কত নামেই বুঝিয়েছে এ দেশের মানুষের কাছে, কই কিছুইতো হলো না। এদিক দিয়ে ড. মোঃ ইউনুস সাহেবতো সুদকে সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে গিয়ে, দেশে শান্তির বন্যা নিয়ে এসেছে। আজ এই ৯০ ভাগের বেশি মুসলমানদের দেশে মাইক্রো ক্রেডিট গ্রাহক সংখ্যা কত, আর ইসলামী দলের ভোটার কত? আর পবিত্র কোরআনের সূরা: বাকারাহ, আয়াত:২৭৫ সম্পর্কে সাধারণ মানুষেরই বা জ্ঞান কতটুকু আছে? আমি বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের কাছে এই জ্ঞান স্পষ্ট থাকলে আজ আর এত বিভ্রান্তির মধ্যে থাকতে হতো না।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ
১. | বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল(এম.এল) | লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি | বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি (মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং ৬৩০/২০০৯ এর উপর ০১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে)
|
২. | বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি | জাতীয় পার্টি – জেপি | জাকের পার্টি |
৩. | জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ | কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ | বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন |
৪. | জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন |
৫. | বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বি.এন.পি | বাংলাদেশ মুসলিম লীগ |
৬. | বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি | গণতন্ত্রী পার্টি | জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ |
৭. | বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি | ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ | |
৮. | বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি | ইসলামী ঐক্যজোট | |
৯. | বিকল্পধারা বাংলাদেশ | বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস | |
১০. | জাতীয় পার্টি | ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ | |
১১. | বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি | বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট | |
১২. | ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) | খেলাফত মজলিস | |
১৩. | গণফোরাম | বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল | |
১৪. | গণফ্রন্ট | ||
১৫. | প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) | ||
১৬. | বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ | ||
১৭. | বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি | ||
১৮. | ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন | ||
১৯. | বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি | ||
২০. | জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটি-জাগপা | ||
২১. | বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট(মুক্তিজোট) | ||
২২. | বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ |
উৎস: http://www.ecs.gov.bd/Bangla/RegisteredPoliticalPartyBng.php