কৃষি-১৩: কৃষি তথ্য বিস্তারে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র

দুরন্ত বিপ্লব
Published : 11 Sept 2011, 10:01 AM
Updated : 11 Sept 2011, 10:01 AM

বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর একটি উন্নয়নশীল দেশ। কৃষিই হলো এ দেশের যাবতীয় উন্নয়ন সম্ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু। অপরদিকে যে কৃষক কৃষির গতি চাকা সচল রাখার জন্য নিরন্তর মাথার ঘাম পায়ে ঝরাচ্ছে, তাদের কাছে অনেক সময় থাকে না আধুনিক তথ্য সংবলিত বিভিন্ন প্রযুক্তি জ্ঞান। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাংলাদেশের যে কৃষিবিষয়ক আধুনিক কলাকৌশল উদ্ভাবিত হয়েছে তা তারা সহজে জানতে পারছে না। এসব তথ্য দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারলে কৃষক তা তার উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যবহার করতে পারবে। তবেই হবে কৃষি ও কৃষক তথা দেশের সার্বিক উন্নয়ন।

যে কোনো তথ্য তার ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া। কৃষি তথ্য-প্রযুক্তি বিস্তারে কৃষি তথ্য সার্ভিস দীর্ঘদিন ধরে জড়িত আছে। কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ যাবত শতাধিক স্পট, ফিলার, ফিল্ম তৈরি করেছে এবং দেশের দশটি কৃষি অঞ্চলে সিনেমা ভ্যানের মাধ্যমে প্রদর্শন করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ডকুমেন্টারির মাধ্যমে শস্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ, প্রাণিসম্পদ, বন সৃজন, মৃত্তিকাসম্পদ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কৃষিবিষয়ক প্রযুক্তি খুব সহজ, সরল ও আকর্ষণীয়ভাবে দর্শকশ্রোতা তথা কৃষকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।

তথ্য বিনোদনভিত্তিক এসব তথ্য চিত্র দেখে আগ্রহী দর্শকরা তাদের প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে জানতে পারছে এবং তা বিভিন্ন কৃষিজ উৎপাদনে ব্যবহার করছে। বিনোদনভিত্তিক এসব ডকুমেন্টারি, ডকুড্রামা, স্পট, গান, গম্ভীরাসহ অন্যান্য লোকজ কৌশল দারুণ জনপ্রিয়তার মাধ্যমে কৃষি তথ্য সার্ভিসের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস কর্তৃক বিভিন্ন বিভাগের প্রশিক্ষণ, কৃষক মাঠদিবস, কৃষি বা বৃক্ষ মেলা, বিভিন্ন সমাবেশসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডে প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশে যেহেতু সাধারণের বিনোদন সুযোগ কম তাই সাধারণ কৃষক খুব সহজেই এসব ডকুমেন্টারি দেখতে আগ্রহী হন। ডকুমেন্টারিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা বক্তব্য বা প্রযুক্তির কথা বলা থাকে যা নাটিকা, বিভিন্ন লোকজন গান ইত্যাদি দ্বারা হৃদয়গ্রাহী করা হয়। যাতে কৃষক খুব সহজেই তা বুঝতে পারে এবং এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে যোগাযোগ করতে পারে। এভাবে এসব ডকুমেন্টারি হতে পারে কৃষি তথ্য-প্রযুক্তি বিস্তারে শক্তিশালী মাধ্যমে।

আমাদের দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান যদি তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি তৈরি করে কৃষি তথ্য সার্ভিসকে সরবরাহ করে তবে তা সহজেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

তাছাড়া এব প্রযুক্তিবিষয়ক তথ্যাবলি যদি কৃষি তথ্য সার্ভিসকে দেয়া হয় তবে তারা এসব বিষয়ভিত্তিক ডকুমেন্টারি তৈরি করে স্থানীয়ভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে পারে। এসব ডকুড্রামাগুলো তৈরি হতে হবে একেবারে কৃষকের পরিবেশে-কৃষি পরিবেশে। যা হতে হবে আকর্ষণীয়, যেন কৃষক এ ধরনের প্রামাণ্য চিত্র দেখার সময় নিজেকে এ চিত্রের একজন কুশীলব হিসেবে ভাবতে পারেন। তবেই তা কৃষকের কাছে অধিকতর গ্রহণীয় হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য, কৃষি তথ্য সার্ভিসের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসের এসব ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও যানবাহন রয়েছে। তাই তারা এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। যার ফলে কৃষক খুব সহজেই তার নিজের প্রয়োজনমাফিক বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য জেনে কৃষি তথা দেশের উন্নয়নের চাকাকে সচল রাখতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

***
তথ্যসূত্র: কৃষিবিদ তপন কুমার পাল, আঞ্চলিক পরিচালক, আইএআইএস প্রকল্প, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাঙ্গামাটি অঞ্চল, রাঙ্গামাটি