কৃষি-২৬: ফলের নাম শানতোল

দুরন্ত বিপ্লব
Published : 1 Oct 2011, 12:46 PM
Updated : 1 Oct 2011, 12:46 PM

শানতোল এশিয়ার একটি পরিচিত ফল। বাংলাদেশে এ ফলের চাষ শুরু হয়েছে। শানতোলের গাছে ফল ধরতে দেখা গেছে হর্টিকালচার সেন্টার, কল্যাণপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারে। দেশের অন্যান্য স্থানেও চাষ সম্ভব। শানতোল ফলের আলাদা একটা সুগন্ধ আছে, যা প্রথমেই যে কোনো ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারে। তাই এ ফলটির বাজার ভালো পাওয়া যেতে পারে এবং বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। শানতোলের শাঁস সিরাপ হিসেবে সংরণ করা যায়, জ্যাম তৈরি করা যায়। এ হিসেবে শানতোল ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে উঠতে পারে।

উদ্ভিদতত্ত্ব
শানতোল উদ্ভিদতাত্ত্বিকভাবে মেলিয়েসী পরিবারভুক্ত। শানতোল ভারত, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, মরিশাস, কম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপিন ইত্যাদি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। সীমিত আকারে শানতোল এখন বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে এবং ভালো ফল ধরতে দেখা গেছে। সম্ভবত থাইল্যান্ড থেকে শানতোল আমাদের দেশে এসেছে বছর দশেক আগে। শানতোলের জন্ম মরিশাসে। শানতোলের গাছ বৃ প্রকৃতির, প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কাণ্ড বেশ সোজা সরল। কলমের গাছ একটু খাটো হয়। বীজের গাছ দ্রুত বাড়ে। শুষ্ক মৌসুমে পাতা লাল হয়ে ঝরে পড়ে। ফুল ছোট, ফুলের ব্যাস মাত্র ১২ মিলিমিটার। ফুল হালকা সুগন্ধযুক্ত, পাঁপড়ি ৫টি ও পুংকেশর ১০টি।

উপযুক্ত জলবায়ু
উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুসম্পন্ন অঞ্চল শানতোল চাষের জন্য উপযুক্ত। এ ফলের গাছ ঠাণ্ডা খুব একটা সইতে পারে না। সমতল ও পাহাড়ি, দুই জায়গাতেই হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১২০০ মিটার উঁচু পর্যন্ত জায়গাতেও শানতোল জন্মে থাকে। গরম, বৃষ্টিপাত ও যেসব দেশে শুষ্ক শীতকালের পর আগাম বসন্ত আসে সেসব দেশে শানতোল ভালো হয়। যেসব এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮০০ মিলিমিটারের কম, সেসব এলাকায় তুলনামূলকভাবে শানতোল ভালো হয়।

মাটি
মাটি যত উর্বর হবে শানতোলের গাছও তত ভালো হবে। দো-আঁশ মাটি উত্তম। যেসব মাটির অম্লমান ৭ এর নিচে বা কাছাকাছি সেসব মাটিতে শানতোল ভালো হয়। পিএইচ বা অম্লমান ৭ এর উপরে গেলে গাছ সাংঘাতিকভাবে লৌহের ঘাটতিতে ভোগে। যে মাটিতে পানি দাঁড়ায় না সেরূপ মাটি শানতোল গাছ লাগানোর জন্য বেছে নিতে হবে।

জাত
এ দেশে শানতোলের কোনো জাত নেই। কি জাতের শানতোল বর্তমানে চাষ হচ্ছে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য নেই। তাই বলে বিশ্বে সব দেশের শানতোল কিন্তু একরকম নয়। গাছের আকার আকৃতি, ফলের আকার আকৃতি, রঙ, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদির মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যায়। আছে বেশ কিছু জংলী জাতও ।
চারা কলম তৈরি
বীজ থেকে শানতোলের চারা হয়। তবে কলমের চারা ভালো ফল দেয়। বায়ব দাবা কলম বা গুটি কলম করা সবচে সহজ। এ ছাড়া কেয়েফট জোড় কলম, ভিনিয়ার জোড় কলম, টি বাডিং ইত্যাদি পদ্ধতিতে শানতোলের কলম করা যায়।

চাষাবাদ
মে-জুন মাস শানতোলের চারা কলম লাগানোর সময়। সবদিকে ১ মিটার মাপে গর্ত তৈরি করে সে গর্তের মাটির সাথে সম পরিমাণ বা ২০ কেজি গোবর সার মিশিয়ে গর্ত ভরতে হবে। সে গর্তের মাঝখানে চারা কলম লাগিয়ে তা বাঁচানোর জন্য যত্ন নিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে বা খরার সময় সেচ দিলে ভালো হয়। প্রতি বছর গাছের গোড়ার মাটি হালকা করে কুপিয়ে গাছপ্রতি ১০-২০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০-১৫০ গ্রাম এমপি সার বর্ষার আগে বা পরে দিলে ভালো হয়। শুধুু গোবর সার দিলেও চলে।

ফল তোলা
পেকে এলে ফলের রঙ হালকা হয়ে আসে। পাকা ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে। তাই পরিপূর্ণভাবে পাকার আগেই পুষ্ট ফল সংগ্রহ বা গাছ থেকে পাড়া উচিত। ফল পাড়ার পর ঘরে বা দোকানে ৭ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।

***
তথ্যসূত্র: মৃত্যুঞ্জয় রায়, মাস্টার ট্রেইনার, ডিএই -ডানিডা এসপিপিএস প্রকল্প, খামারবাড়ি, ঢাকা