কৃষি-৪৩: ফল খেলে বল হয় এ কথাটি মিথ্যে নয়

দুরন্ত বিপ্লব
Published : 7 Dec 2011, 02:27 PM
Updated : 7 Dec 2011, 02:27 PM

বার মাসে বার ফল, না খেলে যায় রসাতল। এ প্রবাদ বাক্যটি এমনি এমনি করে আসেনি। আগের সময় ফলের প্রাচুর্য ছিল বলেই আপামর জনসাধারণ তৃপ্তি নিয়ে ফল খেতে পেরেছেন আর পুষ্টিতে শক্তিতে নাদুসনুদুস ছিলেন। সময়ের বিবর্তনে এ অভ্যাস তথা অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোনো মতেই, অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং অবনতি হয়েছে। ফল খাওয়ার পরিমাণ গতি উভয় কমেছে। আমরা কেন যেন ফল ব্যতীত অন্যসব খেতে বেশি আগ্রহী হয়েছি। ফাস্টফুড, ড্রিঙ্ক, কৃত্রিম জুস খেয়ে খেয়ে আমাদের প্রকৃতিতে অভ্যাসেও কৃত্রিমতা ভর করেছে দারম্নণভাবে। বলতে দ্বিধা নেই দেশী ফলের চেয়ে বিদেশী ফলের প্রতি আমাদের মায়া আগ্রহ সব কিছুই একটু বাড়াবাড়ি ধরনের। এটাকে কোনো মতেই আধুনিক বা সমৃদ্ধ বলা যায় না।

আমাদের বিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দেশে গড়ে ৭০টি ফল জন্মে। তবে কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয়ের মতে এবং তাঁর তালিকা অনুযায়ী দেশে ১৩০টি ফল সুনির্দিষ্ট হয়েছে। তাঁর ধারণা ভালোভাবে আনত্মরিকভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে লেগে থাকলে এ সংখ্যা ১৫০-২০০ হয়ে যাবে। এ দেশের প্রতিটি ফল রঙে, গন্ধে, আকারে, আকৃতিতে, স্বাদে পুষ্টিতে অতুলনীয়। একটু সচেতনতা যৌক্তিক আনত্মরিকতা প্রদর্শন করে প্রচেষ্টা চালালে এ দেশে ফলভিত্তিক পুষ্টির সমৃদ্ধি এনে প্রচুর পরিমাণে ফল বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। শুধু তাই নয় বাংলার ফলকে বিশ্ববাজারে পৌঁছিয়ে ফল সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার সাথে তুলে ধরা যাবে।

একটা সাধারণ হিসাবের কথা বলি। প্রতিদিন এ দেশের প্রতিজন লোকের ফল দরকার ১০০-১১০ গ্রাম। আর আমরা গড়ে খাচ্ছি মাত্র ৩৫-৪০ গ্রাম। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকের চেয়েও কম খাচ্ছি। এই যে কম খাওয়া তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। মূল কারণ আমাদের খাসলত। দৈনিক ১০০-১১০ গ্রাম ফলগ্রহণ তা সাধারণই বরং ১০০-১৫০ গ্রাম করে ফল খাবার মতো ফলের সম্ভার তথা এর ফলের পর্যাপ্ততা আমাদের আছে। শুধু আমাদের মানসিক দৈন্যতা, অভ্যাস আর পরিকল্পনার অভাবে আমাদের ফলভিত্তিক পুষ্টি দৈন্যতা এতো প্রকট। আমাদের বিজ্ঞানীরা হিসাব করে বলছে মোট ফলের ৫৪% ফল বৈশাখ-শ্রাবণ মাস পর্যনত্ম হয়ে থাকে। অর্থাৎ বছরের এ ৪ মাস (গ্রীষ্ম-বর্ষাকালে) ৫৪% ফল পাওয়া যায়। বাকি ৮ মাস মাত্র ৪৬% ফল পাওয়া যায়। এর মানে বছরব্যাপী আমাদের ফল উৎপাদন বা বিতরণ বণ্টন যৌক্তিক বা সমভাবে হয় না।

আসলে আমাদের মূল দৈন্যতা মানসিকতা। কেননা ফল বলতে আমরা নয়টি ফল তথা আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, কলা, আনারস, পেঁপে, নারকেল আর কুলকে বুঝে থাকি। এসব ফলের প্রাপ্তি পর্যাপ্ততার সাথে ফলের ব্যবহার, চাকচিক্য নির্ভর করে। অথচ এর বাইরেও অনেক ফল আছে যা গুণে মানে পুষ্টিতে স্বাদে দামে বিদেশী যে কোনো ফলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কিছু অপ্রধান ফল যেমন- আতা, শরিফা, সফেদা, কামরাঙা, লটকন, আমড়া, বাতাবি লেবু, কদবেল, বেল, জলপাই, তাল, তেঁতুল, খেজুর, জাম, জামরম্নল, আমলকী, বাঙ্গি এসব ফল গুণেমানে কম মূলবান বা কম সুস্বাদু নয়। হাত বাড়ালেই পাওয়ার ব্যবস্থা হয়। দুঃখের সাথেই বলতে হয় আমাদের বহুমাত্রিক দৈন্যতার জন্য এমন কিছু ঐতিহ্যবাহী মানসম্মত ফল আছে যাদের অনেককেই চিনি না দেখিও না। এগুলোর মধ্যে আছে- লুকলুকি, ডেউয়া, ডেফল, করমচা, জংলী বাদাম, তুঁত, তিনকরা, সাতকরা, জামির, আদাজামির, চালতা, ডুমুর, যজ্ঞডুমুর, বৈচি, টকআতা, অরবরই, আঁশফল, তারকা ফল, গাব, কাউ, রম্নটিফল, বকুল, বেত, ফলসা, চুকুর, বিলিম্বি, ডালিম, ুদিজামসহ আরো কতসব দামি ফল।

সাধারণভাবে আমরা ফল খেতে আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, কলা আর আপেল, আঙ্গুর, কমলাকে বুঝাই। শুধু পাঠকের মসিত্মষ্ককে একটু নাড়া দিতে কিছু নাম লিখলাম। বলা যাবে কি এগুলো কিসের নাম? এ যেমন টাকিটুকি, পানকি চুনকি, নেয়োল, রক্তগোলা, মাখনা, মুড়মুড়ি, ননি, চিরঞ্জী, ভোলাটুকি, হামজাম, আকুরা, বাওয়ালী, কমকই, তিমতোয়া, লটকা, বহরি, কালোজা, চিনার, মারফা, পিছন্দি, ধামিন আসার, বারকেটা, জাবাটিকাবা, শানতোল, শিয়ারকুল, পিয়ালু সিহার। এসবই এ দেশের জাতফল, শতাব্দীর পর শতাব্দী দেশের ফল হিসেবে বনবাদাড়ে জন্মেছে। মানুষ প্রয়োজনের তাকিদে এসব ফলকে খুঁজে বের করেছে খেয়ে শুধু জীবনধারণই না, খাদ্য, ফল, পুষ্টি, পথ্যের অভাব মিটিয়েছে। গবেষণায় এবং জরিপে জানা যায়, এ দেশের ফলবীথি বা ফল সম্ভারে প্রায় ৫৫% ফল কোনো আবাদ যত্নআত্তি ছাড়া বেড়ে উঠে ফলবান হয় মানুষ পশুপাখির ফলের তিয়াস মেটায়। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায় বাংলাদেশ কত অসুস্থ। এর অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের অযৌক্তিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা। ইদানীং অনেকের মাঝে একটি ধারণা কাজ করে তাহলো অসুস্থ হলে কিছু ওষুধ পত্তর ইনজেকশন দিয়ে আরোগ্য লাভ করা যাবে। ঘটনা ঘটেছেও সেভাবে। কিন্তু আমরা ভাবিওনা শুধু ভিটামিনের অভাবে আমরা কতটা কঠিনভাবে ভুগছি। এ যেমন ভিটামিন এ'র অভাবে ৮৮%, সি'র অভাবে ৮৭% বি'র অভাবে ৯৬%, ক্যালসিয়ামের অভাবে ৯৩% লোক প্রতিনিয়ত ভোগছে। এ সমস্যা সমাধানে একমাত্র উপযুক্ত দাওয়াই হলো প্রতিদিনের সতেজ রকমারি ফল। এ দেশের এমন কোনো ফল নেই যার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য পুষ্টিগুণ না আছে। আমাদের শরীরে ভিটামিন জমা করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। নিত্যদিনের প্রয়োজনে ফল খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। টক জাতীয় ফল হলে আমরা খেতে অনীহা প্রদর্শন করি। অথচ এসব টকজাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আছে। শুধু কি তাই? পুষ্টির সব কটিই যথেষ্ট পরিমাণ আছে। ডেউয়া নামক অপ্রচলিত অবহেলিত ফলটিতে কাঁঠালের তুলনায় অনেক বেশি আমিষ আছে সাথে প্রচুর ভিটামিন। ডেউয়া, কদবেল, আমলকীতে যে পরিমাণ ভিটামিন সি আছে তা আপেল, কমলা, কাঁঠাল, আম কোনো ফলেই নেই। আমলকী, হরিতকী, বহেরা মিলে ত্রিফলার বহুমুখী শতমুখী গুণের কথা কে না জানে। শুধু পানিতে জন্মায় এমন ফলের মধ্যে পানিফল, মাখনা, পদ্মফল উলেস্নখযোগ্য। সামান্য একটু যত্নে এবং ব্যবস্থাপনায় পানি থেকে প্রাপ্ত লাভজনক এসব ফলের আবাদ/ফলন তুলে আনতে পারি।

আমাদের দেশীয় ফলের সাথে বছরে বছরে যোগ হচ্ছে বিদেশ থেকে আসা হরেক রকমের ফল। এসব বিদেশী ফল স্থায়ী আসন পেতে বসেছে। এতে এ দেশেরই লাভ হচ্ছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের ফল ভাণ্ডার। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখযোগ্য এসব অতিথি ফলগুলোর মধ্যে আছে স্ট্রবেরি, প্যাসনফল, জাবাটিকাবা, শানতোল, রাম্বুটান, ডুরিয়ান, আপেল, জামরম্নল, ব্রেডফ্রুট, রঙিন শরিফা, বড় আমলকী, মিষ্টি তেঁতুল। একটু বেশি দরদ আর আনত্মরিকতা দিয়ে এদের লালনপালন করলে এ দেশেরই বহুমুখী লাভ হবে।
প্রাসঙ্গিকভাবেই বলা যায় চৌফল আমটি বছরে চারবার ধরে। তাছাড়া বারমাসি, দোফলাসহ বহু প্রতিশ্রম্নত ফলের বাহার আছে আমাদের ফল ভাণ্ডারে। আছে আপেলকুল বাউকুলের মতো মনোহরি ফল। এদের শুধু পরিকল্পিত উপায়ে আবাদ করলে অল্প সময়ের ব্যবধানে ফলের ভুবনকে আশাতীত সমৃদ্ধ করতে পারব আমরা ।

আরেকটি কথা, এ দেশে হাজার হাজার কিলোমিটার রাসত্মা আছে। যদি পরিকল্পিত উপায়ে এ সব রাসত্মার দু'পাশে খেজুর এবং তাল গাছ লাগানো যায় তাহলে ভাবতে পারি কত কম সময়ের মধ্যে এ দু'টি ফল গাছের মাধ্যমে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে মানসম্মত আইটেম রফতানি করে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মুদ্‌্রা অর্জন করতে পারবো।

থাইল্যান্ড মানবিহীন আঁশফলের ওপর গবেষণা করে এ ফলটিকে এমন বাহারি এবং মনোহরী করেছে ফল বাণিজ্য শিল্পে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমরাও পারি। আমাদেরও হাতগুণা প্রথিতযশা বিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞ ফলের ওপর বাসত্মবসম্মত গবেষণা করে আশাতীত সফলতা অর্জন করেছে। যার ফল ইতোমধ্যে এ দেশের জনগণ ভোগ করছে।

আমাদের বিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের প্রতি অনুরোধ, এ দেশে অনেক মানসম্মত আকর্ষণীয় বাহারি সুস্বাদু ফল আছে যেগুলোকে গবেষণার মাধ্যমে আনত্মর্জাতিক বাজারে বিকানোর মতো করে তৈরি করতে হবে। সেদিন একজন ফল বিজ্ঞানী বললেন লিচু একটি সুস্বাদু বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল। সারা বিশ্বে সমাদৃত। বিশ্বের লিচু নভেম্বর-ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে পর্যাপ্ততা নিশ্চিত হয়। অথচ বাংলাদেশের লিচু এপ্রিল-মে'তে বাজারে আসে। সামান্য পরিকল্পিত উপায়ে ব্যাপারটিকে ব্যবস্থাপনা করতে পারলে বিশ্ববাজার একমাত্র বাংলার লিচু দিয়ে মাত করা যাবে। কেননা বাংলাদেশের লিচু বিশ্বের যেকোনো দেশের লিচুর চেয়ে উৎকৃষ্টমানের। আনারস এবং কলার মাধ্যমে সারাদেশের অব্যবহৃত ছায়াটে উঁচু জায়গায় পরিকল্পিতভাবে চাষ করলে মানসম্মত উৎপাদন পাওয়া যাবে। আমাদের সবরি, চিনিচাপা, কবরিকলা অমৃতসাগর বিশ্বের যেকোনো কলার সাথে অতুলনীয়। ফল ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের সাথে ফলের মান উন্নয়ন, স্বাদ বাড়ানো এবং বেশি দিন সংরড়্গণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ফলের জাত আবিষ্কার করতে পারলে শুধুমাত্র ফল দিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। আষাঢ় মাসে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ফল মেলা এবং ফলবৃড়্গ রোপণ পড়্গ। প্রতিবছর আপামর জনগণকে সচেতন করার লড়্গ্যে এ মেলা দারম্নণ প্রভাব বিসত্মার করে। আমরা আশা করি এ প্রচেষ্টায় বা উদ্যোগে আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে এ কর্মসূচিকে সফলতার দ্বারপ্রানেত্ম নিয়ে যাব।

এবার ওষুধি তথা ভেষজ এর কিছু কথা বলা যাক। প্রতি বছর ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন শুকনা ভেষজ উপকরণ বিক্রি হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫৫ মিলিয়ন টাকা। এ দেশের চাহিদা মেটাবার জন্য বিদেশ থেকে প্রতি বছর ৫০০০ মেট্রিক টন ভেষজ আমদানি করা যায় যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টাকা। এ দেশের ৩৫০টি স্পট থেকে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার জন সংগ্রহ করে থাকেন। এ দেশে ইউনানী কারখানা ২০০টি, আয়ুর্বেদীয় কারখানা ২০০টি, ভেষজ হোমিও ৭০টি। এসব সংস্থায় মোট কর্মরত লোকের সংখ্যা কমবেশি ২-৪ হাজার। এ দেশের মোট ৫ হাজার শিড়্গিত ও প্রশিড়্গণ প্রাপ্ত এবং প্রায় ৮০ হাজার অশিড়্গিত মানুষ ভেষজ চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের ভেষজ কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থার সামান্য কিছু তথ্য চিত্র উলেস্নখ করা হলো- এ দেশের বহু ভেষজগুণ সম্পন্ন গাছগাছালি আছে এর মধ্যে ২ শতাধিক গাছ মোটামুটিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উলেস্নখযোগ্য কিছু ওষুধি গাছের মধ্যে আছে উলটকম্বল, উলটচন্ডাল, অর্জুন, আমলকী, হরিতকি, বহেরা, আকন্দ, বাসক, কালোমেঘ, ছাতিম, ঘৃতকুমারী, শতমূলি, রক্তকম্বল, স্বর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধা, সজিনা, লজ্জাবতী, মেহেদী, থানকুনী, খয়ের, মহুয়া, পুর্নর্নভা, মহাভৃংগরাজ, তুলশী, চন্দন, নিম, নিসিন্দা, পিপুল, নাগেশ্বর, পিতরাজ, শিয়ালকাটা, কপুর, তেলকুচা, বরম্নন, কেশরাজ, মৌরি, পুদিনাসহ অসংখ্য গাছ গাছালি। এসব গাছ গাছালি যুগযুগ ধরে আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখার অব্যর্থ দাওয়াই হিসেবে কাজ করে এসেছে। এগুলোর ওপর শতভাগ নির্ভর ছিলাম বলে আমাদের পূর্বপুরম্নষরা এ সময়কার চেয়ে আরো বেশি সুস্থ ছিলেন সবল ছিলেন।

আধুনিক বিশ্ব কিন্তু ভেষজ ওষুধের বিপড়্গে নয়। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া আধুনিক চিকিৎসার জন্য অনেকটুকু বেশি স্বসিত্ম বোধ করে ভেষজ চিকিৎসা অনুসরণ করে। দড়্গিণ এশিয়ায় কয়েকটি দেশ আইন করে প্রতিটি পরিবারের জন্য বাধ্যতামূলক মেডিসিনাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেছে। ওরা শুধু মেডিসিনাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেই ড়্গানত্ম হয়নি। বরং নিজেদের ছোটোখাট রোগব্যাধিতে পারিবারিক ভেষজ বাগান থেকে ওষুধ পথ্য খেয়ে তথা ব্যবহার করে পরিবেশসম্মত জীবনযাপন করে।

এখন কথা হলো ফল বলি আর ওষুধ বলি যে কোনো বাগান প্রতিষ্ঠা না করলে ফল/ফলন আসবে না। ফল না আসলে আমরা চাহিদা অনুযায়ী রসনা তৃপ্তি করে খেতে পারব না। সেজন্য আমাদের একানত্মভাবে প্রয়োজন বাসত্মবভিত্তিক সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং যথাযথ বাসত্মবায়ন ও তার সাথে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা। বাগান ছোট হবে কি বড় হবে তা ধর্তব্যের বিষয় নয়। বরং বিবেচ্য বিষয় হলো উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে নান্দনিকভাবে বাগানের নকশা তৈরি করা। এরপর আধুনিক পদ্ধতিতে গর্ত খুঁড়ে জৈব অজৈব সারের সমন্বয়ে গর্ত তৈরি করে রেখে দেয়া। ইতোমধ্যে কাঙিত জাতের ফল ওষুধির চারা কলম সংগ্রহ করে আধুনিক পদ্ধতিতে রোপণ করা। রোপণউত্তর বেড়া/খুঁটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, গোড়ায় মাটি দেয়া, সারের উপরিপ্রয়োগ করা অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে রাখা। বালাই ব্যবস্থাপনা, সেচ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি লাগসই পদ্ধতিতে ফল পাড়া।

আমাদের সবার সম্মিলিত আর আনত্মরিক প্রচেষ্টায় ফল চারা রোপণ যদি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত না হয় তাহলে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি আগামী ক'বছরের মধ্যে ফল ওষুধিতে দেশকে স্বয়ম্ভরতার পথে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। গুণেমানে স্বাদেগন্ধে আমাদের ঐতিহ্যবাহী ফল বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে সেরা। প্রয়োজন শুধু কার্যকরী উদ্যোগ বাসত্মবায়ন, ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরড়্গণ এবং বাজারজাতকরণ। এ সময় প্রাকৃতিকভাবে দেশে গাছগাছালি লাগাবার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আমরা সবাই যদি সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই তা হলে আমরা সফল হবোই। আমাদের বহুমুখী লাভ আসবেই। শেষ করার আগে বলতে চাই- 'ফল খাই বল পাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই।'

তথ্যসূত্র: কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম, তথ্য অফিসার (কৃষি), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫,