ভালো পুলিশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর একজন ভালো ছেলের অভিভাবক

জাগো বাহে জাগো
Published : 31 May 2012, 08:30 AM
Updated : 31 May 2012, 08:30 AM

হঠাৎ গতকাল অতীতের কিছু কথা মনে পড়ে গেলো। নিরাপদ দূরত্ব এবং ভালোত্বের বড়াই এর সে স্মৃতিটা কেন জানি আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আমি নিজেই চমকে উঠলাম সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনার এমন কাকতালীয় মিল দেখে।

ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর এক ছেলে পড়তো আমাদের সাথে। মেধাবী কিন্তু প্রচন্ড ডানপিঠে সহপাঠীটির জ্বালায় অস্থির ছিলাম আমরা সমস্ত ক্লাসের ছাত্ররা, এমনকি শিক্ষকরা পর্যন্ত। একে মারতো ওকে ধরতো এসব চলতো তার প্রতিদিন। তার সে অভিভাবককে কয়েকবার ডাকা হয়েছে। প্রতিবার তার ছেলেকে শাসন করার বদলে সে অন্যান্য ছেলেদের খুব মিষ্টি করে বলতো, বাবারা আমার ছেলের থেকে সবাই একটু দূরত্বে থেকে চলবে । ও প্রতিবাদী ছেলেতো, অন্যায় দেখতে পারে না। শিক্ষকদেরও বলতো স্যার, আপনারা আমার ছেলেটাকে একটু দেখে শুনে রাইখেন আর অন্যান্য পোলাপানদেরও একটু নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বইলেন। আর দেখেন আমার ছেলে কিন্তু রেজাল্ট ভালো করে, হয়তো একটু দুষ্টু এ আরকি।
স্কুলে লোকটি ভালো ডোনেশন দেয় ও স্কুল কমিটির সাথে জড়িত ছিলো বলেও শুনেছিলাম। সুতরাং শিক্ষকরাও তেমন কিছু বলে না ছেলেটাকে। একবার এক ছেলের নাকে ডাষ্টার দিয়ে আঘাত করে তাকে মারাত্মক আহত করে। ছেলেটির অভিভাবককে ডাকা হয় যখারীতি। এতো বড়ো একটা ঘটনার পরও ছেলেটির বাবা নির্বিকার। উল্টো শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলো, আগে বলেন ও(যাকে ডাস্টার মারা হয়েছে)আমার ছেলেকে কী করছিলো? শিক্ষক ঘটনা বললেও সে না মেনে বলে আমার ছেলেকে আমি শাসন করি সবসময়, সে দিনে দিনে অনেক ভালো হচ্ছে এটা আপনাদের বলতেই হবে। তার উন্নতি আপনাদের চোখে পড়ছে না। আপনারা একটা ছেলেকে মানুষ কিভাবে করতে হয় জানেন না। আপনারা শুধু ওর দোষই খুঁজে বেড়াচ্ছেন! এই ছিলো তার শাসন।

এই ছেলেকে এমন আস্কারা দেয়ার ফল তিনি পরে হারে হারে টের পেয়েছিলেন, সে কথা আর নাই বা বললাম এখন।
আমার এ স্মতিচারণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে সুবিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই। ভুলে যাওয়া একটা বিষয় আবার মনে আসায় আমার স্মৃতির ভান্ডারকে নতুন করে একটু ঘষে মেজে নিতে পারলাম। কেন আমার স্মৃতিতে উপরোক্ত ঘটনাটা আবার দোলা দিয়ে গেলো তা কিছুটা হলেও বলা প্রয়োজন।

ক'দিন আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সেমিনারে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ চলাকালে কিংবা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংবাদ ও ছবি সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী শামসুল হক টুকু।

যখন কারো কাছ থেকে আক্রান্ত বা বিপদাপন্ন হবার আশংকা থাকে তখনই নিরাপদ দূরত্বের প্রশ্নটা আসে।

কিন্তু পুলিশের থেকে নিরাপদ দূরত্ব কেন? পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু আর সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক । জনগণের এমন ব্ন্ধু বা সেবকদের কাছ থেকে জাতির বিবেক সাংবাদিকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলার মানে টা কী?

এই নিরাপদ দূরত্বটা কতটুকু?

যতটুকু নিরাপদ দূরত্বে থাকলে পুলিশের অপকর্মগুলো ধরা যায় না, যতটুকু নিরাপদ দুরত্বে থাকলে পুলিশের অত্যাচারকে সঠিক ভাবে প্রচার করা যায় না ততটুকু নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে সাংবাদিকদের?

সাংবাদিকদের এমন নিরাপত্তা বিধানের নছিহত পৃথিবীর আর কোথাও কোন মন্ত্রী করেছেন বলে জানা নেই। পুলিশের পেশাগত দায়িত্ব পুলিশ পালন করবে আর সাংবাদিকদের দায়িত্ব সাংবাদিকরা পালন করবে। এখানে উভয় পেশার সহাবস্থানটা জরুরী। তাদেরকে দূরে রাখার ইচ্ছাটা মন্ত্রী মহোদয়ের জাগ্রত হলো কেন?

ঠিক তার পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পুলিশ নিয়ে এক অসাধারণ বক্তব্য দিলেন। পুলিশের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সবাই সমালোচনামুখর হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন তাদের পক্ষে সাফাই গাইলেন। তিনি বলেছেন, 'পুলিশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। এই সার্টিফিকেটটা আপনাদের দিতেই হবে।'

তার এ বক্তব্য থেকে প্রমান হয় তিনি পুলিশের ভালোত্বে ভীষন মুগ্ধ। এবং আমাদেরকেও এজন্য তার সার্টিফিকেট দিতে হবে। কীভাবে সাংবাদিক বা সাধারণ মানুষ এ সার্টিফিকেট দেবে যেখানে পুলিশের অশোভন আচরণ অতীতের সকল রেকর্ডকে ম্লান করে দিচ্ছে। অথচ তার বক্তব্যের একদিন আগেই আদালত চত্ত্বরে পুলিশ কর্তৃক এক তরুনীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগে সারা দেশ তোলপাড়। তাহলে তার এমন দৃষ্টিভঙ্গির কারণ কী?

তিনি এখন পুলিশের তাড়া খান না বরং পুলিশ দিয়ে তিনি নিজেই অন্যদের তাড়িয়ে বেড়ান বলে পুলিশ এর সব কিছু ভালো মনে হয় তার কাছে?

পুলিশের সাথে সাংবাদিকদের রেশ নতুন কিছু নয়। যে দল ক্ষমতায় আসে সে দল পুলিশকে ব্যবহার করে অনৈতিক ভাবে। পুলিশ জনগনের সেবক না করে করা হয় ক্ষমতাসীনদের সেবক। কখনো কোহিনূর মিয়া বা কখনো শহীদুল ইসলামরা পালা করে আসে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে ভালো পুলিশের মাঝে দু একজন খারাপ পুলিশ থাকতে পারে। ধরে নিলাম পুলিশের মধ্যে অধিকাংশই ভালো। কিন্তু ভালো পুলিশদের ভালো থাকার ইচ্ছা বা ক্ষমতাটা কেড়ে নেয়া হয় ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা দ্বারাই। চাইলেও তারা বৃত্ত থেকে বের হতে পারে না। এখানে পালাক্রমে শহীদুল আর কোহিনূর মিয়াদেরই জয় জয়কার।

ক্ষমতাসীন দল বা ক্ষমতাহীন দল এবং তাদের সমর্থকদের সুদিন বা দুর্দিন পালা করে আসে। এক টার্মে খারাপ থাকলে অন্য টার্মে তো ভালো থাকতে পারেন তারা কিন্তু সাধারণ জনগণ যারা রাজনীতি থেকে, দলবাজী থেকে ফায়দা লুটতে অক্ষম, যারা শুধু ভোটই দিয়ে যায় পরিবর্তনের আশায়, তাদের ভাগ্যের কখনো পরিবর্তন হয় না। তাদের আশাহত হয়ে আহাজারি করা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নেই।