হ্যাকিং এবং চিটিং

Published : 14 Sept 2012, 03:45 PM
Updated : 14 Sept 2012, 03:45 PM

আজ আপনাদেরকে দুটি ছোট গল্প শোনাব।

ছেলে কিছুদিন হল বায়না ধরেছিল – তার একটা পিএসপি গেম চাই। দেশে কেনার চেষ্টা করলাম। একে তো দাম বেশী, তার উপর নতুন পাওয়া যাচ্ছিল না। সবই সেকেন্ড হ্যান্ড। শেষমেশ ছেলে তার প্রবাসী চাচার কাছে আবদার জানালো এবং ২ সপ্তাহের ভেতর তার বহু কাঙ্খিত পিএসপি হাতে পেয়ে গেল। এরপর শুরু হল আরেক বায়না। পিএসপি তে গেম লোড করে দাও। নিয়ে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে। সেখানে প্রতিটি গেম লোড করতে নেবে ৫০ টাকা!!! রাজী না হয়ে উপায় ছিল না। কিন্তু এরপর দোকানদার যা বলল তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পিএসপি তে গেম লোড করতে হলে একটা মেমোরী কার্ড লাগবে এবং এই পিএসপি'র আভ্যন্তরীণ সফট্ওয়্যার নাকি হ্যাক করতে হবে। তা না হলে গেম খেলা যাবে না। এবারেও ছেলের শখের কাছে পিতার সামর্থ পরাজিত। দোকানী জানালো মেমোরী কার্ড এর দাম ২ হাজার টাকা, সফটওয়্যার হ্যাক করতে ৮০০ টাকা লাগবে। আরেক দোকানে গেলাম। এখানে একই মেমোরী কার্ড ১২০০ টাকা, হ্যাকিং ৫০০ টাকা। ৩-৪ দোকান ঘুরে অবশেষে ১৫০০ টাকায় রফা। হাসি মুখে বাসায় ফিরে এলাম। মাত্র ১৬ দিনের মধ্যে মেমোরি কার্ড অকেজো হয়ে গেল। গেলাম সেই দোকানে। দোকানী যা বলল তার মর্মার্থ হল , এই ধরনের কমদামী মেমোরী কার্ডে কোন ওয়ারেন্টি নেই। তারমানে আবারও ১৫০০ টাকা !!!।

সেই মাসে আর পারলাম না। পরের মাসে আরেক মার্কেট থেকে কিনে নিলাম সেই একই মেমোরি কার্ড মাত্র ৮০০ টাকায়। তারপর আবার ও হ্যাকিং এর সেই ঝক্কি। বসে গেলাম ইন্টারনেটে। মাত্র ১ ঘন্টা ঘাটাঘাটি করতেই পেয়ে গেলাম " হাউ টু হ্যাক পিএসপি"। বেশী কিছু না। একটি বিশেষ সফটওয়্যার (৫৮ মেগা বাইট মাত্র), মেমোরি কার্ডের বিশেষ একটা ফোল্ডারে কপি করলেই হবে। নির্দেশ অনুসরণ করে সপরিবারে তারপর গেলাম আবার গেম লোড করতে। ৫০ টাকায় গেম লোড করে ছেলেকে বললাম টেষ্ট করে দেখতে যে খেলা যাচ্ছে কিনা। ১-২ মিনিটের মধ্যেই ছেলের হাতে "ভি" চিহ্ন এবং মুখে হাসি। এই হল হ্যাকিং আর চিটিং এর প্রথম গল্প।

পরের গল্পটার পাত্র – পাত্রী প্রায় এক হলেও স্থান-কাল আলাদা। স্ত্রী'র বায়না অমুক রেস্টুরেন্টে ভাল "হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী" পাওয়া যায়। দুপুরে প্রায় না খেয়েই থাকলেন। অবশেষে বসুন্ধরা সিটিতে ছেলের গেম লোড করার পর সেই রেস্টুরেন্টে গেলাম সপরিবারে। ধানমন্ডির সেই বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে ভারতীয়, চাইনিজ, থাই সব খাবারই পাওয়া যায়। পুর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক "হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী'র আদেশ দেয়া হল। ১০ মিনিটের মাথায় এসে গেল কাঙ্খিত বিরিয়ানী। কিন্তু মুখে দিয়েই বুঝলাম – ডালমে কুছ কালা হায়। কেমন যেন ভেজা ভেজা, ভাত ভাত গন্ধ। চুপিসারে চলে গেলাম ওদের মেক শিফট কিচেনে। গিয়েই চক্ষু চড়ক গাছ। কোথায় কি "হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী"? সাদা ভাত রান্না করা আছে ঝুড়িতে। এই ভাত এর সাথে কিছু মাংস- মসলা মিলিয়ে একবার হয়ে যাচ্ছে "হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী", আরেকবার "হাড়ি দম বিরিয়ানী", কখনও এগ ফ্রাইড রাইস কখন ও ভুনা খিচুরী। হায়রে চিটিং…………

৮০০ টাকার মেমোরী কার্ড কখন ও ২০০০, কখন ও ১২০০, আবার অন্য বাজারে একই জিনিস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হ্যাকিং এর নামে সামান্য একটা সফট্ওয়্যার লোড করতে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি যেটা কিনা গেম বিক্রি'র সাথে ফ্রি সার্ভিস হিসাবেই দেয়া যেত। গেমটাও পাইরেটেড।
আর সবশেষে, বিরিয়ানির নামে ভাতের সাথে মাংস-মসলা মিশিয়ে বিক্রি – – – – প্রতারণার কত রূপ।