এবার এভারেস্ট বিকৃতিঃ আসুন প্রতিবাদ করি

Published : 18 Oct 2012, 01:55 PM
Updated : 18 Oct 2012, 01:55 PM

বাঙ্গালী এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে পারবে বা ঊঠবে এটা এক সময় আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হত। কারন এভারেষ্ট চূড়ায় উঠতে গেলে যে পরিমান শারিরীক সামর্থ দরকার সেটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকলেও মুল ভাবনাটা ছিল আর্থিক সংগতি নিয়ে। বললেই তো আর এভারেষ্ট এ উঠে যাওয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন নানা রকম প্রস্তুতি – যার বিশাল একটা অংশ জুড়ে থাকে আর্থিক প্রস্তুতি। এভারেস্টে উঠতে গেলে নেপাল সরকারকে একটা বিশাল অংকের টাকা (ইউ এস ডলার) ফি হিসেবে দিতে হবে। তারপর নিজের এবং দলের জন্য নানা রকম সরঞ্জাম এবং উপকরন। শেষে রয়েছে শেরপা গাইডদের ভাতা বা সন্মানী। সব মিলিয়ে বিশাল একটা অর্থ জড়িয়ে আছে। আবার সরাসরি অর্থাৎ পুর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া কাউকে এভারেস্টে উঠতে দেয়া হয়না । বেশ কয়েকটি ধাপে এই পুর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। অভিজ্ঞতা অর্জন পর্যায়েও রয়েছে বেশ ভাল অঙ্কের খরচ। আর সময়ের কথা নাই বা বললাম। আজকে শুরু করলেও ২-৩ বছরের আগে আপনি আপনার পুর্নাংগ স্বপ্ন অর্থাৎ এভারেষ্ট চূড়ায় দাড়িয়ে একটি ছবি তুলতে পারবেন না।

শত প্রস্তুতি আর অর্থ ব্যায়ের পর আমাদের সোনার ছেলে মুসা ইব্রাহিম ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশী বাঙ্গালী হিসেবে এভারেষ্ট চুড়ায় পা রাখেন। ২-১ দিনের ভেতর খবরটা আমরা জানতে পেরেছিলাম। আমার সাথে সমগ্র দেশবাসী ও আবেগে – উচ্ছাসে আপ্লুত হয়েছিলেন। এর পরের বছর আরো তিন জন বাঙ্গালী এভারেষ্ট চুড়ায় উঠেন যার মধ্যে ২ জনই মেয়ে (এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজরীন)। এদের মধ্যে প্রথম দুই জন একত্রে এবং ওয়াসফিয়া একা এভারেষ্টে উঠেছিলেন। বাঙ্গালী আটপৌড়ে মেয়েরা এভারেষ্টে পা দিয়েছে এটা ছিল আরও রোমাঞ্চকর একটা সংবাদ (কোন মেয়েকে অসম্মান বা কাউকে ছোট করে বলছি না) । সারা দেশবাসী গর্বে বুক ফুলিয়েছিল – আমিও আমার বিদেশী বন্ধুদের সাথে এটা নিয়ে বেশ একটা ভাব নিয়েছিলাম কয়েক দিন।

আজ ২০১২ সালে পত্রিকায় হঠাৎ একটা খবর পড়ে চমকে উঠলাম। বাংলাদেশের প্রথম এভারেষ্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহিম ঢাকার পঞ্চম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা করেছেন – কারন সকাল বেলার পাখি নামে একটি সংকলন এম এ মুহিতকে প্রথম বাংগালী এভারেষ্ট জয়ী হিসেবে উল্লেখ করে বাজারে ছেড়েছে। সকাল বেলার পাখি সংকলনটির সাথে এদেশের প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ জনাব ইনাম আল হকের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। গত সোমবার মামলা দায়েরের পর আজ পর্যন্ত জনাব ইনাম আল হক বা এম এ মুহিত কেউ তাদের ভুল স্বীকার করে কোন বক্তব্য দেন নি। তাই মনে হচ্ছে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে। এম এ মুহিতের এভারেষ্ট বিজয়ের কথা যারা জানেন তারা এটাও হয়ত জানবেন যে জনাব ইনাম আল হক আর মুহিত একই সংগঠনের সদস্য যারা এভারেষ্ট বিজয়ের জন্য লক্ষ্য স্থির করেছিল। আমি এটাও জানি যে ইনাম আল হক ঐ সংগঠনের প্রধান। সুতরাং তার এহেন ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা কোন মতেই গ্রহনযোগ্য নয়। মুসা ইব্রাহিম আগে উঠেছেন এভারেস্টে – এই স্বীকৃতি তার অবশ্য প্রাপ্য। এতে করে দ্বিতীয় আরোহী মুহিত যেমন ছোট হয়ে যান না তেমনি সংগঠনের প্রধান হিসেবে ইনাম আল হকেরও কৃতিত্ব কোন অংশে কমে যায় না।

ইনাম আল হকের মত একজন মানুষের কাছ থেকে এটা আমরা কোন মতেই আশা করি না, বরং তার ইতিহাস বিকৃতির এহেন অপচেষ্টাকে আমি ঘৃণা করি। মুসা, মুহিত, নিশাত এবং ওয়াসফিয়া সবাই আমাদের অতি গর্বের ধন। এদেরকে নিয়ে কোন অদৃশ্য নোংরা খেলা হোক এটা আমরা চাই না। তাই সকল পাঠক কে অনুরোধ করবো – আসুন সবাই মিলে ইতিহাস বিকৃতির এহেন অপচেষ্টার বিরুদ্বে সোচ্চার হই।