আফ্রিকার আম

Published : 2 Feb 2015, 05:27 AM
Updated : 2 Feb 2015, 05:27 AM

আম। অতি সুস্বাদু এবং রসালো একটি ফল। বাংগালীর প্রিয় ফলের মধ্যে একটি। আমি ভাবতাম এই আম শুধু বাংলাদেশী আর ভারতীয়দের অহংকার। ইউরোপ আমেরিকার বাংলাদেশ বা ভারতীয় বিভিন্ন গ্রোসারী শপে যে আম পাওইয়া যায় সেগুলো সবই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আমদানী করা – এই ছিল আমার ধারনা।
জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে দীর্ঘদিনের লালন করা আমার সেই ধারণা ভেংগে যায়। সম্ভবতঃ ৯ অথবা ১০ ই জানুয়ারিতে গিয়েছিলাম উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দুরের শহর নেব্বিতে। সেখানেই প্রথম আমি আফ্রিকার আম দেখতে পাই। এর আগে কাম্পালাতে সুমিষ্ট আনারস, আখ, তরমুজ দেখেছি, খেয়েছি, কিন্তু আম দেখিনি। নেব্বি থেকে পশ্চিমে ডি আর কঙ্গোর সীমান্তে প্রথম সারি সারি আম গাছ দেখলাম। রাস্তার পাশে ফুটপাত থেকে কিছু আম কিনলাম। ফেরার পথে নেব্বি থেকে আনুমানিক ২০ কিলোমিটার পূর্বে পাকোয়াচ (PAKWACH) শহরের কাছে রাস্তার পার্শে সারি সারি ছোট ছোট ফলের দোকান। সেসব দোকানে ঝুরি ভর্তি আম। আরো ছিল আফ্রিকান আতাফল, কলা আর কিছু নাম না জানা স্থানীয় ফল।

ইশারা ভাষায় কথা হল। এক ঝুড়ি আমের দাম ২০০০ শিলিং যা আমাদের টাকায় প্রায় ৫৪ টাকা। ওজন করলে দেড় কেজি বা দুই কেজি পরিমান হবে। আমি আর আমার কলিগ মিলে ৫-৬ ঝুড়ি নিলাম। বিক্রেতা মহিলা বেজায় অবাক। কারন স্থানীয়রা একসাথে এত আম সাধারনতঃ কিনে না। অনেকে আম খায়ও না । প্রায় ৮-১০ বছর আগে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে হাল আমলের ইবোলার মত একটা প্রানঘাতী রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। লাসা ফিভার নামে সমধিক পরিচিত সেই রোগের একমাত্র পরিনতি মৃত্যু। এতই মারাত্বক আর ভীতিকর ছিল সেই লাসা ফিভার যে মৃত্যুর পর মৃতদেহ স্টীলের বাক্সে ইলেক্ট্রিক ওয়েল্ডিং করে সীল্ড অবস্থায় মাটির ১০-১৫ হাত নীচে পুতে ফেলা হত। ইঁদুরের মাধ্যমে লাসা ফিভার ছড়ায় বা ছড়াতো । তাই মাটিতে পড়ে থাকা কোন ফল আজও আফ্রিকানরা খায় না। ওরা যেই আম বিক্রি করে সেটাও গাছ থেকে পেড়ে আনা আম। আমাদের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মত লোভে পড়ে মাটিতে ঝরে পড়া আম, বা ফরমালিনের ব্যবহার আপাত সহজ সরল আফ্রিকানরা এখনও শিখে উঠেনি।

পাকোয়াচ শহরের শেষে নীল নদী পেরিয়ে কাম্পালার দিকে পথের শুরুতেই মার্চিসন রিজার্ভ ফরেষ্ট শুরু। বনের ভেতর দিয়েই রাস্তা। রাস্তার দুই ধারে বন্য হাতি, অসংখ্য হরিণ, বন্য শুকর আর কয়েকটা জিরাফ দেখলাম। বাংলাদেশে ফেরত আসার আগে একবার সাফারীতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে, সময় হবে কিনা জানিনা। তাই আফ্রিকার বনের গল্প না হয় আরেক দিনের জন্য তোলা থাক।

বাসায় পৌছেই আর তর সইছিলনা। হাত মুখ ধুয়ে সরাসরি ডিনারে না বসে হাতে ছুরি নিয়ে আম কাটতে বসে গেলাম । আম কাটতে কাটতেই সুমিষ্ট ঘ্রান নাকে আসছিল, জিভ দিয়ে হালকা পানি ও যে আসেনি সেটা হলফ করে বলতে পারবো না।

আম গুলো ছোট ছোট, কিন্তু একদম চিনির মত মিষ্টি। উগান্ডার পশ্চিমাঞ্চলে, তার পাশের দেশ ডি আর কঙ্গোতে এবং তারও পশ্চিম এবং উত্ত্র পশ্চিমের দেশ লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওনেও নাকি অনেক আম গাছ আছে বলে শুনেছি। এসব বারোমাসি আম। একই গাছে একই সাথে মুকুল, কাচা আম এবং পাকা আম দেখেছি। আমি যেই আমগুলো কিনেছিলাম, সেগুলি শেষের দিকের আম তাই ছোট। আরও মাস খানেক আগে হলে আরও বড় আম পাওয়া যেত।

আম খাচ্ছি আর ভাবছি আমাদের দেশে আমের কত নাম কত বাহার। ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, হিম সাগর আরও কত কি। এখানে আমের সেরকম কোন নাম আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হয় নি। ইশারা ভাষায় এই প্রশ্ন করা খুবই কঠিন।