হাতে তৈরী পাম অয়েল

Published : 13 April 2015, 06:50 AM
Updated : 13 April 2015, 06:50 AM

পাম অয়েল। গন্ধে, বর্ণে, স্বাদে অতূলনীয় কি না জানিনা। বাজারে সয়াবিন তেলের নামে যেসব তেল বিক্রি হয় তার মধ্যে কোনটি সত্যি সত্যি সয়াবিন তেল আর কোনটি পরিশোধিত পাম অয়েল, সেই প্রশ্ন আমার মনে রয়ে গেছে বরাবর। হোটেল রেস্তোরাঁয় যে তেল ব্যবহার করা হয় সেটা আমরা ভোক্তারা সয়াবিন বলে মনে করলেও আমি নিশ্চিত যে সেগুলি খুচরা বাজার থেকে কেনা পাম অয়েল ছাড়া আর কিছুই নয়। মালয়েশিয়া গিয়েছি বেশ অনেক বার। সেখানে সয়াবিনের ক্ষেত দেখিনি। শত শত মাইল জুড়ে পাম বাগান দেখেছি। সেই পাম বাগানের পাম গাছে থোকা থোকা কাঁচা পাকা পাম ফল দেখেছি। এটাও জেনেছি পাম ফল থেকেই পাম অয়েল তৈরী হয়।

২০০৭-২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হঠাৎ করে ব্যাপকভাবে পাম চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। দুর্মূখেরা বলেন, তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের পছন্দের বিশেষ একটা গোষ্ঠীকে দিয়ে বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে পাম গাছের চারা বিপণন করানো হয়। প্রতিটি চারার দাম ছিল ১০০ টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত আমার কিছু বন্ধুরা পাম গাছের চারা সংগ্রহ করেছিল সেখানে কর্মরত সেনাবাহিনীর কাছ থেকে, যারা বিশেষ সেই গোষ্ঠীর কাছ থেকে ঐ চারা সংগ্রহ করেছিল । যাইহোক লক্ষ লক্ষ চারা লাগানো হলেও সেই চারা থেকে গাছ বড় হবে কিনা অথবা সেই গাছ বড় হলে ফল দেবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। আবার ফল হলে কিভাবে ফল থেকে তেল আহরণ করা হবে সেব্যাপারেও কোন তথ্য বা জ্ঞান দেয়া হয়নি। যদি কোন পরিবারে মাত্র ৪ টা গাছ থাকে তাহলে সেই গাছ থেকে ৪ জনের একটা পরিবারের সারা বছরের খাবার তেলের সংস্থান হয়ে যাবে – এমনটা বলেই মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছিল ।

২০১৩ সালের শেষ দিকে বান্দরবান যাবার পথে রাস্তার পাশে একটা জায়গায় থেমেছিলাম। জায়গার নাম মনে নেই। সেখানে শত শত পাম গাছে অসংখ্য কাঁচা পাকা পাম ফল দেখেছি। অসংখ্য পাকা ফল মাটিতেও পড়ে ছিল। হয়তো ফল আহরণ করার কিংবা আহরিত ফল দিয়ে কিছু করার কেউ ছিল না।

দীর্ঘদিন ধরে আমি নিজ উদ্যোগেই জানতে চেয়েছি কিভাবে ঘরে বসে পাম ফল থেকে পাম অয়েল তৈরী করা যায়। হঠাৎ করেই সেই সুযোগ পেয়ে গেলাম। অতি সহজ একটা কৌশল।

প্রথমে সব পাম ফলকে একটা পাত্রে নিয়ে ঢেকে দিয়ে কিছুক্ষন জ্বাল দিতে হবে (ভাল ভাবে গরম করতে হবে) । এরপর গরম ফল গুলিকে একটা ক্রাশারে চাপাতে হবে এবং পানি দিতে হবে। ক্রাশারের নীচ দিয়ে পানি মিশ্রিত তেল বের হয়ে যাবে। কিছুক্ষন পর আরো পানি দিয়ে আবারো ক্রাশার ঘোরাতে হবে। আরো তেল বের হবে। তেল পানিতে ভাসে, তাই পাম অয়েল নীচের পাত্রের পানিতে ভেসে থাকবে। এখান থেকে তেল আলাদা করে নিলেই হয়ে গেল পাম অয়েল। এরপর এই তেলকে অল্প আঁচে কিছুক্ষন জ্বালিয়ে নিলেই ভাল মানের তেল পাওয়া যাবে। ক্রাশারে থেকে যাবে ছোবড়া আর বিচি। বিচিগুলি থেকে সাবান তৈরীর উপকরণ তৈরী হয়।

আফ্রিকার অনেক দেশেই এভাবে হাতে তৈরী পাম তেল তৈরী হয় যা এখানকার মানুষের প্রিয় ভোজ্য তেল। দামও সহনীয়। ৮ জন শ্রমিক সারাদিন পরিশ্রম করে প্রায় ১০০ লিটার তেল আহরণ করতে পারে। আমি যেই ক্রাশারটি দেখেছি সেটা হাতে চালাতে হয়, তাই এর গতি যেমন অত্যন্ত ধীর, তেমনি এটা চালানোও বেশ কষ্টসাধ্য। মেশিনে ঘোরানো ক্রাশার হলে দিনে হয়তো কয়েকশত লিটার তেল আহরণ করা যাবে।


সুতরাং যাদের বাড়ীতে পাম গাছ আছে, তারা আর বসে থাকবেন না। এক্ষুনি শুরু করুন। আর বিশেষজ্ঞের ( বিশেষ-অজ্ঞের ) পরামর্শ চাইলে আমি তো আছিই। একটা টেলিফোন দিলেই চলে আসবো।

অফ টপিকঃ ব্লগার সুকান্ত বেশ কিছুদিন আগে ব্লগে কালিজিরার তেল নিয়ে পোষ্ট দিয়েছে কিন্তু ঐ তেল তৈরীর পদ্ধতি কিংবা অন্যান্য টিপস (?) দেন নাই। আমি দিলাম পাম তেল। ঘটনাটি নিতান্তই কাকতালীয়।