ফ্লাই দুবাই উপাখ্যান

Published : 23 Sept 2015, 06:34 PM
Updated : 23 Sept 2015, 06:34 PM

ফ্লাই দুবাই। নিঃসন্দেহে সুন্দর নাম। এটি দুবাই ভিত্তিক একটি বাজেট এয়ার লাইন্স। অন্যান্য এয়ার লাইন্সে ঢাকা-দুবাই-ঢাকা টিকিট ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার হলেও ফ্লাই দুবাইতে আপনি অনেক সময় ৩৫০ ডলারে যেতে পারেন। দুবাই এবং এর কাছাকাছি মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে অতি জনপ্রিয় ফ্লাই দুবাই। দুবাইকে কেন্দ্রে রেখে আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার অনেক দেশে ফ্লাই দুবাই ফ্লাইট পরিচালনা করে। এরা সময় মেনে চলে।

আমি বিমানে উঠেছিলাম উগান্ডার এনটেবে বিমান বন্দর থেকে। ১৪ আগষ্ট ২০১৫, দুপুর একটায় ফ্লাইট। বেলা ১১ টার দিকে চেক ইন করেছি । আমার রুট এনটেবে –দুবাই-ঢাকা। লাগেজে ২০ কেজি এবং হাতে ৭ কেজি নির্ধারিত ওজন। ১০০ গ্রাম বেশী হলেও নেবে না। তবে আমাকে ২ কেজি'র মত ছাড় দিল। বিমান ছেড়ে দেয়ার ৪০ মিনিটের মধ্যেই দুপুরের খাবার দেয়া হল। কিন্তু খাবারের সাথে শুধু এক কাপ পানি। এরপর আরও পানি খেতে চাইলে ৫ দিরহাম দিতে হবে। ডলার নেবে না। উগান্ডার মূদ্রা শিলিংও চলবে না। কেউ যদি নিয়মিত দুবাই যাওয়া আসা না করে থাকে এবং তার কাছে দিরহাম না থেকে তাহলে হাজার মরে গেলেও পানি কিনতে পারবে না । বাজেট এয়ার লাইন্স বলে কথা।

বিমানের টয়লেটে ঢুকেই একটু অবাক হলাম। অনেক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পৃথিবীর অন্যতম ৪/৫ টি ভাষায় দেয়া আছে। হয়তো যেসব দেশে ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইট যায়, সেসব দেশের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা ভাষা দেখেই অবাক হয়েছিলাম বেশী । আরো অবাক হয়েছিলাম বিশেষ ধরনের বাংলা ভাষার ব্যবহার দেখে। কমোডের ঢাকনা উঠানোর জন্য বলা হয়েছে "উপরে উঠানো", যেভাবে কমোডে বসতে হবে সেটার চিত্র দিয়ে লেখা "সত্য"। কমোডে যেভাবে বসলে ভুল হবে তার চিত্র দিয়ে লেখা " মিথ্যা"। ফ্ল্যাশ করার সুইচে লেখা "পাখলান"। এই "পাখলান" শব্দের মানে আমি জানি না। আরো দেখুন লেখা আছে "ফ্ল্যাশ করার জন্য এখানে দাবান" । হয়তো গুগল ট্রান্সলেশন ব্যবহার করে আরবী কিংবা ইংরেজী থেকে ভাষান্তরের সময় এসব কান্ড ঘটে থাকতে পারে। টয়লেটে ধুমপান না করার বার্তা শুধু ইংরেজি আর আরবিতে দেয়া। এখানে বাংলা বা অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করা হয়নি।

ইন ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট আছে। ইংরেজী, বাংলা, হিন্দী এবং আরবী সিনেমা । ২০ দিরহাম দিতে হবে। আমার কাছে দিরহাম ছিল না তাই আমি কিছুটা বই পড়ে, আর কিছুটা ঘুমিয়ে সময় কাটিয়ে দিলাম। দুবাইতে যখন নামলাম তখন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটা। পরবর্তী কানেক্টিং দুবাই-ঢাকার ফ্লাইট ভোর ৩ টায়। বিখ্যাত চেইন রেস্তোরাঁ "সাবওয়ে" তে হাল্কা খাবার খেয়ে নিলাম। মাঝে একটু সময় নিয়ে ডিউটি ফ্রি শপে কেনাকাটা আর ঘুরাঘুরি। এক ঘন্টার জন্য ইন্টারনেট ফ্রি। তারপর চাইলে সাড়ে চার দিরহাম দিতে হবে। তবে ভিআইপি লাউঞ্জে সারাক্ষন ইন্টারনেট ফ্রি। অনেক সাধারণ যাত্রী এখানে বসে ইন্টারনেটের কাজ সেরে নিচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। আমি কয়েকটি মেইল আর এসএমএস করে তারপর চেয়ারে গা লাগিয়ে কিছুক্ষন ঝিমুনি দিয়ে নিলাম।

ভোর আড়াইটার দিকে পরবর্তী ডাক এল। ৯৫% যাত্রী মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী শ্রমিক। নারী –পুরুষ সব। বাকীরা আমার মত অন্য মহাদেশ থেকে আসা যাত্রী। গন্তব্য সবার এক। প্রিয় (?) শহর ঢাকা। দুবাই থেকে যারা উঠলেন তাদের প্রায় সবার হাতে ২/৩ টি করে দুবাই ডিউটি ফ্রি শপের শপিং ব্যাগ। চকোলেট, বিস্কুট, সিগারেট অথবা প্রসাধনী সামগ্রীতে ঠাসা। এসব বাড়তি সামগ্রীর সম্মিলিত ওজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পাইলটের কাছে থাকার কথা নয়। চেক-ইন এর সময় হ্যান্ড লাগেজ ৭ কেজির বেশী আনতে না দিলেও ডিউটি ফ্রি শপ থেকে প্রত্যেকে অতিরিক্ত ৫ – ১০ কেজি ওজনের মালামাল কিনে হাতে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। আর এত সব ব্যাগ এরা কোথায় রাখবে? মনে মনে আমি প্রমাদ গুনলাম।

কিছুটা ভিআইপি ট্রিটমেন্টের কারনে এনটেবে থেকে একেবারে প্রথম সারির সবচেয়ে ভালো সিটটি দিয়েছিল। এখানে সামনে পা ছড়িয়ে, আরাম করে বসা যায়। মালের ঠাসাঠাসিতে মাথার উপরের কেবিন লাগেজ রাখার জায়গা সব দখল হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে একটু জায়গা ম্যানেজ করে আমার হাতের ল্যাপটপ ব্যাগটা রাখতে পারলাম। বিমান ছেড়ে দিল। স্থানীয় সময় ভোর তিনটা, ঢাকায় তখন ভোর ৫ টা। সাড়ে পাঁচ ঘন্টার ফ্লাইট। বিমানের খাবার আমার খুব ভাল লাগে। এক ঘন্টা গেল, দুই পেরিয়ে তিন ঘন্টা গেল, খাবারের নাম গন্ধ নেই। বিমান যখন ভারতের আকাশ সীমা পেরিয়ে বাংলাদেশের আকাশে প্রবেশ করলো, তখন বাংলাদেশে সকাল ১০ টা বাজে। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা, কিন্তু খাবার দেয়া হল না। বুঝলাম ফ্লাই দুবাই কর্তৃপক্ষ আমাদের বাংলাদেশ অংশের রুটে কোন খাবার দেবে না। এবার পকেটে কিছু দিরহাম ছিল। তাই পাঁচ দিরহামে ৫০০ এমএল পানির বোতল কিনে নিলাম। নগদ টাকায় কিছু খাবার পাওয়া যাচ্ছিল যেটা আমি সামনে বসার কারনে আগে লক্ষ্য করিনি। যখন টের পেলাম, তখন বিমান নীচে নামতে শুরু করেছে। ঘড়ির কাঁটা ধরে সাড়ে ১০ টায় ঢাকায় নামলাম ।
ফিরতি যাত্রায় একই অবস্থা। ঢাকা – দুবাই রুটে খাবার দেয়া হলনা। তবে এবার আমি প্রস্তুত ছিলাম। বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছিলাম। সেটাই খেলাম, সাথে পাঁচ দিরহামের পানির বোতল। দুবাই – এনটেবে রুটে আবারও চমৎকার খাবার পরিবেশনা হল। তবে এবারের যাত্রায় ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (সিনেমা) কমপ্লিমেন্টারী মানে ফ্রি দেয়া হল।
কমপক্ষে ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে টিকেট না কাটলে ফ্লাই দুবাইয়ের টিকিট পাওয়া দুস্কর, অথচ এই রুটে বাংলাদেশ বিমান যাত্রী পায় না। প্রতিদিন ২টি ফ্লাইট যায় দুবাই-ঢাকা-দুবাই। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট কয়টি? আমি জানি না।