কাসাভাঃ আফ্রিকার প্রধান খাদ্য

Published : 8 Oct 2015, 07:27 PM
Updated : 8 Oct 2015, 07:27 PM

কাসাভা। এক ধরনের শক্ত কান্ড ওয়ালা গাছ। কোন কোন দেশে এটাকে "টাপিওকা" বলেও ডাকা হয়। এই গাছের (এটা গাছ নাকি গুল্ম সেটাও নিশ্চিত নই) শেকড় থেকে এক আশ্চর্য পাউডার তৈরী হয় যেটা পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ কার্বোহাইড্রেট সরবরাহের উৎস। প্রথমে রয়েছে চাল, তারপর ভুট্টা এবং এরপরই কাসাভার স্থান। সাংবাৎসরিক ফসল হিসেবে দক্ষিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপক ভাবে কাসাভার চাষ হয়ে থাকে। কান্ডের মধ্যকার স্পোর থেকে মূল গাছ জন্মায়। স্পোর লাগানোর পর ফসল আহরণের জন্য সাধারনতঃ এক বৎসর সময় লাগে।

কাসাভার সাথে আমার প্রথম পরিচয় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে। আজকাল খাগড়াছড়ি, রাংগামাটির অনেক অঞ্চলে পাহাড়ে বানিজ্যকভাবে কাসাভার চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গ্লুকোজ উৎপাদনের জন্যই কাসাভা চাষ হয় বলে আমি জানতাম। দেশের বাইরে কাসাভার সাথে পরিচিত হই ২০০৬/৭ সালে কেনিয়াতে। তারপর মিশর, সুদান, নাইজেরিয়া এবং উগান্ডা সহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই কাসাভার ফল এবং পাউডার (আমি এটাকে কাসাভা ময়দা বলবো) দেখেছি। কাসাভা ময়দা দিয়ে কিভাবে খাবার তৈরী করে সেটা দূর থেকে দেখেছি তবে সামনা সামনি পুরো প্রক্রিয়াটি দেখার সুযোগ হয় উগাণ্ডাতে।

তার আগে বলে রাখি কাসাভা বেশ কয়েক প্রজাতির হয়ে থাকে যার কয়েকটি মারাত্বক বিষাক্ত। এমনকি ভাল জাতের কাসাভাও নাকি ঠিক মত প্রস্তুত না করা হলে বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। আমি যেভাবে স্থানীয় উগান্ডানদেরকে কাসাভা ময়দা প্রস্তুত করতে দেখেছি, তাতে বিষাক্ত হবার কোন লক্ষনই দেখিনি।

যাইহোক, আবহাওয়া এবং ঋতু ভেদে কাসাভা বছরে এক অথবা দুইবার চাষ করা হয়ে থাকে। যে সময়েই চাষ করা হোক না কেন, ফসল ঘরে তুলতে সময় লাগবে এক বৎসর। এটা অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু গাছ যা প্রচন্ড খরায়ও টিকে থাকতে পারে। তাই অতি দীর্ঘ খরা না হলে কোন রকম সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। দেখুন কাসাভা ক্ষেতের ছবি।


এক বছর পর গাছের শেকড় উপরে ফেলতে হয়। এই শেকড় দেখতে অনেকটা আমাদের মিষ্টি আলুর মত। প্রথমেই শেকড়গুলোকে ২-৩ দিন রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর ছুরি দিয়ে একটি একটি করে খোসা বা উপরের আবরণ তুলে ফেলতে হয় এবং আবারও শুকাতে দিয়ে হয়। ৭-৮ দিন শুকানোর পর হামান দিস্তায় ভেংগে নিতে হয় এবং আবারো শুকাতে হয়।


এভাবে শুকিয়ে কড়কড়ে হলে বিশেষ ধরণের মেশিনের মাধ্যমে ভাংগিয়ে গুড়ো করলেই পাওয়া যায় কাসাভা ময়দা। মেশিনটা বিশেষ ধরণের বললাম একারণেই যে এর ভেতর কোন পাথর নেই বরং তার পরিবর্তে একটা ধাতব দন্ড সজোরে ঘুরে শুকনো খন্ড খন্ড টুকরোগুলিকে পাউডারে রুপান্তরিত করে। এখানকার স্থানীয় বাজারে শুকনো খন্ড খন্ড অবস্থায় এবং ময়দা উভয় প্রকারের কাসাভা ই পাওয়া যায়।


কাসাভা খেয়ে দেখেছি। প্রথমতঃ শুকানোর প্রক্রিয়াতে সঠিক যত্ন না থাকাতে প্রচুর ধুলা বালি মেশানো থাকে। দ্বিতীয়তঃ স্বাদ একেবারেই আহামরি কিছু নয়। আমাদের দেশের আটা শুধু মাত্র পানিতে সিদ্ধ করে কাই করে নিলে যেরুপ স্বাদ হবে, অনেকটা সেরকমই স্বাদ। উল্লেখ্য যে কাসাভার ময়দা দিয়ে সেকা রুটি বানানো বানানো যায় না। এটা পানিতে সিদ্ধ কাই করে তরি-তরকারীর ঝোল দিয়ে অথবা চিনি মিশিয়ে তেলে ভাঁজা পিঠার মত করেই খেতে দেখেছি সর্বত্র।

কাসাভা দিয়ে চোলাই মদ তৈরী হয় দেদার। ছাল ছাড়ানোর পর একটু পিষে তারপর পানিতে চুবিয়ে রাখলে (সাথে ইস্ট যোগ করতে হবে অবশ্যই) ৭-১০ দিনের ভেতরই ফার্মেন্টেড হয়ে যায়। এরপর সরাসরি অথবা পাতন প্রণালী করে চোলাই মদ তৈরী হয়। গন্ধ অত্যন্ত বাজে। স্বাদ ও খুব ভাল হবে না বলেই ধারণা।

আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে কাসাভাই একমাত্র প্রধান খাদ্য (ষ্টেপল ফুড)। হাটে-বাজারে, গ্রামে –গঞ্জে যেখানেই গিয়েছি সেখানেই দেখেছি কাসাভা, কাসাভার ময়দা এবং তৈরী খাবার। আমার কাছে ভাল না লাগলেও কাসাভা ময়দা দিয়ে বানানো বিভিন্ন ধরণের খাবার স্থানীয়রা খুব মজা করেই খায় । বাংলাদেশে আমরা যদি কাসাভার ময়দা বানাতে জানতাম তাহলে হয়তো এটা আরো পরিচিতি পেতো এবং নিশ্চয় আমাদের কাসাভা ময়দাতে আফ্রিকার মত বালি মেশানো থাকতো না। আশা করি আমাদের দেশেও এটা এক সময় খাবার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।