মাছরাঙ্গার প্রতিবেদন এবং আমার সার্ভে

Published : 8 June 2016, 07:30 PM
Updated : 8 June 2016, 07:30 PM

সার্টিফিকেট সর্বস্ব বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার কারণে তথাকথিত ভাল ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার মানসে গেল ২৯ মে ২০১৬ তারিখে মাছরাঙা টেলিভিশনে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখানো হয়। আনোয়ার হোসেনের ঐ প্রতিবেদনে দশ বারো জন শিক্ষার্থীকে জাতীয় সংগীতের রচয়িতা, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, রাষ্ট্রপতির নাম, রাজধানীর নাম, নিউটনের পরিচয় ইত্যাদি বিষয়ে খুব সাধারণ মাপের কয়েকটি প্রশ্ন করা হলে অনেক শিক্ষার্থীই যথার্থ উত্তর করতে পারেনি।

মাছরাঙ্গার বহুল আলোচিত প্রতিবেদনটি যখন দেখানো হয় তখন আমি দেশের বাইরে। আফ্রিকার পাট চুকিয়ে দেশে ফিরব অথবা অন্য কোথাও যাব সেরকম প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার দুই ছেলে মেয়ে এবার এসএসসি'তে জিপিএ ৫ পেয়েছে। মাছরাঙ্গার প্রতিবেদন দেখে নিজের চোখ আর কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাহলে আমার বাচ্চাদের কি অবস্থা?

এটা নিয়ে দেশে একটা ছোটখাট ঝড় বয়ে যাবে সেটা মোটামুটি অনুমান করতে পারছিলাম। জ ই মামুনের ফেসবুক ষ্ট্যাটাসের মাধ্যমে সেটা যখন ক্যাটাগরি ৫ হারিকেনে রুপান্তরিত তখন ভেতর থেকে প্রকৃত অবস্থাটা জানার জন্য ভীষন তাগিদ অনুভব করছিলাম। এরমাঝে আফ্রিকার জীবন শেষ করে দেশে ফিরে পরদিনই একটা সেমিনারে যোগ দিতে মালয়েশিয়াতে গিয়েছিলাম। কুয়ালালামপুরে হোটেলে বসে ২০ টা প্রশ্নের একটা প্রশ্নপত্র তৈরী করি। চারদিন পর মালয়েশিয়া থেকে ফিরে একটা বিশেষ সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। বুঝতে চাইছিলাম আসলে আমার সন্তানেরা কি শিখেছে বা তাদের মান কেমন?

এসএসসি'র ফলাফল বের হবার পরপরই বাসায় গৃহ শিক্ষক এসে গেছেন যিনি এইচএসসি'র অঙ্ক পড়াবেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি অনলাইনে কলেজে ভর্তির আবেদন করা হয়েছে। কোন কলেজে ভর্তি হবে কিংবা আদৌ ঢাকার কোন কলেজে চান্স পাবে কিনা জানিনা। তবে মোট তিনটি বিষয়ে চার জনের ব্যাচ করে প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়া শুরু হয়ে গেছে। আমার বাসায় অঙ্ক, আরেক বাসায় পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন। এই চারজনের সবাই জাতীয় কারিকুলামের ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে।

আমার প্রাথমিক টার্গেট এই চারজন ছাত্র-ছাত্রী । এদের মধ্যে আমার দুই সন্তান বাদে অপর দুইজনকে আমি একেবারে ছোটবেলা থেকে চিনি। তারপরও যুগ বলে কথা। ভেতরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম। পাছে না আবার খুবই অপমানিত বোধ করে। তাই, অঙ্কের স্যার আসার আগে কিছুটা খাতির জমিয়ে অনেকটা গল্পের ছলে তাদেরকে মটিভেট করে আমার বাসায়ই এই পরীক্ষাটা নিলাম। বিষয়টাকে হালকা রাখার জন্য এবং কিছুটা মজা করার জন্য প্রশ্নোত্তর শুরুর আগেই সর্বোচ্চ উত্তরধারীর জন্য ৫০০ টাকা এবং বাকী সবার জন্য ১০০ টাকার সান্তনা পুরস্কার ঘোষনা করতে হল যাতে । জিপিএ ৫ প্রাপ্ত তিন জন ময়মনসিংহ থেকে পাশ করা যাদের মধ্যে দুইজন আমার সন্তান, বাকী একজন তাদের বন্ধু, যে ময়মনসিংহ থেকে এবার ঢাকায় এসে পড়াশোনা করবে। জিপিএ ৪.৫৮ প্রাপ্ত সর্বশেষ ছাত্র ঢাকার। আমার প্রশ্নগুলো কেমন হয়েছে জানিনা, তবে এগুলো খুবই বেসিক লেভেলের প্রশ্ন।

সার্বিক ফলাফলে আমি একেবারেই আশাহত নই আবার খুব একটা খুশী ও হতে পারিনি। আমি মনে করি এই চারজন শিক্ষার্থীর সবাই কমপক্ষে ১৫ টি প্রশ্নের উত্তর জানা উচিত ছিল। পাঠককে অনুরোধ করছি, আপনাদের আশে পাশে যদি এসএসসি উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে থাকে তাহলে তাদেরকেও একই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে সার্বিক মানটি যাচাই করে নিন। আমি জানিনা মাছরাঙ্গার প্রতিবেদনে যেসব ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়েছে তাদের অবস্থা এতটা খারাপ কেন? আসলেই কি খারাপ নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ দেখানো হয়েছে? তবে প্রকৃত ঘটনা যা ই হোক, ব্লগার ফারদিন ফেরদৌস এর লেখা থেকে একটি বাক্য তুলে না দিয়ে পারছিনা "সাংবাদিকতার 'এথিক' এর দোহাই তুলে শিক্ষার্থীর অপমানকে অগ্রাধিকার দিয়ে টোটাল শিক্ষাব্যবস্থার নোংরা ঢাকবেন না প্লিজ" ।