এটি একটি পিচার প্ল্যান্ট বা কলস গাছের ছবি। এতদিন বই বা পত্রপত্রিকায় পিচার প্ল্যান্টের প্রাণীখেকো গল্প পড়েছি এবং ছবিও দেখেছিলাম। কিন্তু এবার বৃক্ষমেলা-২০১২ তে গিয়ে স্বচক্ষে প্রাণীখেকো কলসগাছ দেখলাম। 'পিচার প্ল্যান্ট' (Pitcher plants) বা কলস গাছের আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এছাড়া এই উদ্ভিদটি বৃষ্টিবহুল দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা এবং অষ্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পাওয়া যায়। নেপেনথেস (Nepenthes) গোত্রভুক্ত এই শিকারি গাছটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এর পাতার ডগায় লম্বা দন্ডযুক্ত ফানেল বা চোঙা আকৃতির একটি করে মুখ থাকে। কিছু কিছু পিচার প্ল্যান্টের ফানেলটি গাছের গোড়া থেকে সরু হয়ে উপরের দিকে মুখটি বড় আকৃতির হয়। মুখটি প্রাণীদের আকৃষ্ট করার মতো বর্ণিল হয় আর ভেতরে থাকে বিশেষ ধরনের সুগন্ধীযুক্ত তরল। এই সুগন্ধীযুক্ত তরলের টানেই পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণী এ ধরনের গাছের কাছে আসে। ওই ফানেল বা চোঙার ফোকরে কোনো প্রাণী মুখ বা শরীর ঢোকানো মাত্র ফানেলের ওপরের মুখ বন্ধ করে দেয় গাছটি। ব্যস, প্রাণীটি আটকে যায় গাছটির ফাঁদ পাতা জালে। বের হওয়ার আর উপায় থাকে না। এই সব শিকারি গাছের ফাঁদে শিকারকে লোভী করে তুলতে বিশেষ একটা আয়োজন থাকে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কর্মতৎপর এশিয়ান পিচার প্ল্যান্ট বা কলস গাছ। এসব গাছে থাকে কলসের আদলে দৃষ্টিনন্দন একটি ফাঁদ। ভেতরে থাকে মধু। এশিয়ান পিচার প্ল্যান্টের কলসে উজ্জ্বল রঙের ঢেউ খেলানো কানা বা কিনারা থাকে। এ ছাড়া থাকে আধাখোলা ঢাকনা। মধুলোভী পোকামাকড় ওই কলসের কানায় এসে মধু খেতে গিয়ে ফাঁদে আটকা পড়ে। ভেতরে কলসের গা থাকে রোমশ ও পিচ্ছিল। এতে ভেতরে কোনো পোকা পড়ে গেলে আর উঠতে পারে না। ফাঁদে আটকা পড়া অতি খুদে পোকা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হজম করে ফেলে কলসগাছ। তবে মাছি বা এর চেয়ে বড় কোনো পোকা হজম করতে গাছটির কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। কিছু কিছু কলস গাছের কলস এত বড় হয় যে বৃষ্টি পড়লে এতে অনায়াসে দুই গ্যালন (সাড়ে সাত লিটার) পানি ধরে। এই পানি পান করতে গিয়ে অনেক সময় খুদে পাখি, ব্যাঙ বা গিরগিটির মতো প্রাণী গাছটির শিকারে পরিণত হয়। মাংসাশী গাছ বেশির ভাগই স্যাঁতসেঁতে এলাকায় জন্মে। সাগরপৃষ্ঠ থেকে পাহাড়ি এলাকা পর্যন্ত ওদের বিস্তৃতি। অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে উত্তর আমেরিকায় ফাঁদ পাতা গাছের প্রাচুর্য বেশি। উদ্ভিদ বিশারদরা বলেন, এ ধরনের গাছ এই পদ্ধতিতে ইঁদুর, টিকটিকি, প্রজাপতি, গেছো ব্যাঙ প্রভৃতি শিকার করে থাকে।
তথ্যসূত্র:- উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট। ছবির স্থান: বৃক্ষমেলা-২০১২, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা। তারিখ: ২২/০৬/২০১২ইং, সময়: বিকাল ০৫:০৭ মিনিট