সবার সহযোগিতায় নির্মিত হবে নতুন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর- আপনিও এগিয়ে আসুন।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী
Published : 5 April 2011, 06:46 PM
Updated : 5 April 2011, 06:46 PM

মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বৎসর অতিবাহিত হলো, কিন্তু এখনো পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা রয়ে গেছে। ইচ্ছে থাকা সত্বেও নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সর্ম্পকে যথাযত জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন না তার একটি বড় কারন মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ ইতিহাসকে ধারণ করতে পারে এমন কোন প্রতিষ্ঠান সুপরিসর জায়গা নিয়ে আজো দেশে গড়ে উঠেনি। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ৫, সেগুন বাগিচায় স্বল্প পরিসরের একটি ভাড়া বাড়ীতে ৮ জন ট্রাস্টির উদ্যোগে বর্তমান জাদুঘরটি গড়ে উঠে। বর্তমান জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মাত্র ১৪০০ স্মারক প্রদর্শিত হচ্ছে কিন্তু সংগ্রহ ভান্ডারে জমা আছে আরো ১৫,০০০ এরও বেশী স্মারক, যাহা শুধু স্থান সংকলনের অভাবে প্রদর্শন সম্ভব হচ্ছে না।

এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্থায়ী জাদুঘর নির্মানের জন্য ০.৮২ একর ভূমি বরাদ্ধ পায় জাদুঘর ট্রাস্ট। ২০০৯ সালে এক উন্মুক্ত স্থাপত্য নকশা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ড নতুন স্থায়ী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নকশা নির্বাচন করেন।

বাংলার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে যেমন আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি তেমনি জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত সহয়তায় নির্মিত হবে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা ইতিহাস নিয়ে একটি স্থাপনা "মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর"

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মানের জন্য প্রদত্ত যে কোন অংকের অনুদান বা অর্থ-সাহায্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্ব-সম্মানে গ্রহণ করবে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে এছাড়াও বড় ধরনের অনুদান বা অর্থ-সাহায্যের জন্য কিছু অপশন রয়েছে নির্ধারিত ফরম পূরন সাপেক্ষে, যেমন:-

➡ পৃষ্ঠপোষক সদস্য : ৫০ লাখ বা তার বেশির ক্ষেত্রে।
➡ স্থাপনা সদস্য : ১৫ লাখ টাকা।
➡ উদ্যোক্তা সদস্য : ৩ লাখ টাকা।
➡ আজীবন সদস্য : ১ লাখ টাকা।
➡ একটি প্রতীকী ইট ক্রয়: ১০ হাজার টাকা।
➡ সাধারণ সদস্য : ২ হাজার টাকা।

এছাড়া ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,১০০,৫০০, ১০০০ যে কোন অংকের টাকা নিম্নোক্ত হিসাবে জমা দেয়া যাবে।

➡ অনুদান বা অর্থ-সাহায্য জনতা ও ব্র্যাক ব্যাংকের নিম্নোক্ত হিসাবে জমা দেয়া যাবে:-

১. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ

এসটিডি হিসাব নং-৩৬০০০৪০৮
জনতা ব্যাংক লিমিটেড, তোফখানা রোড শাখা, ঢাকা।
(এছাড়া বাংলাদেশ ও বিদেশস্থ জনতা ব্যাংকের সকল শাখায় অর্থ জমা দেয়া যাবে)

২. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ

এসটিডি হিসাব নং-১৫০১১০১৬৫৮৬৩৭০০১
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান-১ শাখা, ঢাকা।
(এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের সকল শাখায় অর্থ জমা দেয়া যাবে)

আপনি সরাসরি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ৫ নং সেগুন বাগিচায় নগদ বা চেকের মাধ্যমে অর্থ-সাহায্য জমা দিতে পারেন অথবা বসুন্ধরা সিটির ৭ম তলায় "দেশীদশ" ফ্লোরের যে কোন দোকানে আপনার সাহায্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জমা দিতে পারবেন।

বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কিছু ছবি আপনাদের জন্য


৫ নং সেগুন বাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রবেশ পথ।

জাদুঘরের ১নং কক্ষে রাখা কিছু স্মারক

এই কক্ষে বৃট্রিশ শাসন আমল, পাকিস্তানের জন্ম, ভাষা আন্দোলন সহ বিভিন্ন সময়ের স্মারক রক্ষিত আছে।


ছবি:- পাকিস্তানের জন্ম।


ছবি:- ভাষা আন্দোলন।

জাদুঘরের ২নং কক্ষে রাখা কিছু স্মারক

এই কক্ষে মুসলিমলীগের ভরাডুবি, ৬৯ এর গণঅভূর্থান, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ ও ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময়ের স্মারক রক্ষিত আছে।


ছবি:- জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ ও ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন।

জাদুঘরের ৩নং কক্ষে রাখা কিছু স্মারক

এই কক্ষে ইয়াহিয়া- ভূট্টোর প্রতারনা মূলক আলোচনার ছবি, ২৫শে মার্চে কালোরাত্রির গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন বাংলাদেশ সরকার গঠন, শরনার্থী শিবিরের ছবিসহ বিভিন্ন স্মারক রক্ষিত আছে।


ছবি:-২৫শে মার্চে কালোরাত্রির গণহত্যা।


ছবি:-মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন বাংলাদেশ সরকার গঠন।


ছবি:-শরনার্থী শিবিরের ছবি।

জাদুঘরের ৪নং কক্ষে রাখা কিছু স্মারক

এই কক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের পরিচিতি,মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিষপত্র, পোষাক ইত্যাদি, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী এস.এম. শফি ও নায়েব উদ্দিনের বীরঙ্গনার ছবিসহ বিভিন্ন স্মারক রক্ষিত আছে।


ছবি:-মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিষপত্র, পোষাক ইত্যাদি।

জাদুঘরের ৫নং কক্ষে রাখা কিছু স্মারক

এই কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ও তাদের নিত্য ব্যবহৃয্য জিনিষ, " দি কনর্সাট ফর বাংলাদেশ" – খ্যাত বিখ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসনের কনর্সাটের উপর স্মারক, কলকাতা থেকে প্রচারিত এজাজ হোসেনের স্বাধীন বাংলা বেতারের ট্রান্সমিটার যন্ত্র, বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের ছবিসহ বিভিন্ন স্মারক রক্ষিত আছে।


ছবি:-মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র।


ছবি:- "দি কনর্সাট ফর বাংলাদেশ" খ্যাত বিখ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসনের কনর্সাটের উপর স্মারক।


ছবি:-স্বাধীন বাংলা বেতারের ট্রান্সমিটার যন্ত্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিত্য ব্যবহৃয্য জিনিষ।

জাদুঘরের ৬নং কক্ষে রাখা কিছু স্মারক

এই কক্ষে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতিসহ ছবি, বুদ্ধিজীবি হত্যার নৃশংসছবি, মিরপুর বধ্যভূমিতে গনকবরে পাওয়া অসংখ্য মানুষের মাথার খুলি, হার-গোড় ও পরিধয় গুলিবিদ্ধবস্ত্র, শত্রুপক্ষের ফেলে যাওয়া গোলা-বারুদ, শত মা-বোনের ইজ্জত লুটের ছবি, বাংলাদেশের পক্ষে অরোরার কাছে নিয়াজীর আর্ত-সর্মপনের ছবিসহ বিভিন্ন সময়ের স্মারক রক্ষিত আছে। এছাড়া বিভিন্ন কক্ষে অডিও ভিজুয়েলের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যুদ্ধের উপর বিভিন্ন ভিডিও এবং স্থির চিত্র দেখার ব্যবস্থা আছে।


ছবি:-৭জন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতিসহ ছবি।


ছবি:-বুদ্ধিজীবি হত্যার নৃশংসছবি।


ছবি:-শত মা-বোনের ইজ্জত লুটের খন্ডচিত্র।


ছবি:-মিরপুর বধ্যভূমিতে গণকবরে পাওয়া অসংখ্য মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড় ও পরিধেয় গুলিবিদ্ধ বস্ত্র।


ছবি:-বাংলাদেশের পক্ষে অরোরার কাছে নিয়াজীর আত্ম-সমর্পনের ছবি।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েব সাইট : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

————————————————————————-
ফিচার ছবি: আগারগাঁও এ নির্মিতব্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপত্য নকশা, স্থপতি তানজিম হাসান সেলিম।
ছবিটি শামীম ফেরদৌস এর ফ্লিকার স্ট্রিম থেকে সংগৃহিত।